তিন পদে প্রার্থী ১২ কাউন্সিলর

চসিক প্যানেল মেয়র নির্বাচন কাল নেপথ্যে লড়াই নাছির-নওফেলের

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ১৭ মার্চ, ২০২১ at ৬:০৮ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) প্যানেল মেয়র নির্বাচনে ১২ জন কাউন্সিলর প্রার্থী হচ্ছেন। এর মধ্যে আছেন ৭ জন সাধারণ এবং ৫ জন সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। আগামীকাল বৃহস্পতিবার টাইগারপাস নগর ভবনে প্যানেল মেয়র নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। দৃশ্যত কাউন্সিলরদের মর্যাদার লড়াই হলেও নেপথ্যে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীন এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের মধ্যে এ লড়াই হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। প্রার্থীরা নগর আওয়ামী লীগের এ দুই নিয়ন্ত্রকের কাছে ধরনা দিচ্ছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া ভোটারদের মাঝে বিভিন্ন উপহারসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন-২০০৯ এর ২০ ধারা অনুযায়ী, সিটি কর্পোরেশন গঠন হওয়ার পর প্রথম সভার এক মাসের মধ্যে কাউন্সিলরগণ অগ্রাধিকারক্রমে নিজেদের মধ্য থেকে তিন সদস্যের মেয়রের প্যানেল নির্বাচন করবেন। এর মধ্যে একজন অবশ্যই সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হতে হবে।
চসিকের বর্তমান পর্ষদের (ষষ্ঠ) প্রথম সাধারণ সভা হয়েছিল ২৩ ফেব্রুয়ারি। ওই হিসেবে এক মাস হওয়ার আগে আগামীকাল অনুষ্ঠিত হবে প্যানেল মেয়র নির্বাচন। বিষয়টি নিশ্চিত করে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী আজাদীকে বলেন, তারা (কাউন্সিলর) যদি সমঝোতা করে তার আলোকে হবে। অন্যথায় ভোটাভুটি হবে। আমার আলাদা কোনো চাওয়া নাই।
লড়বেন ১২ জন : ২০১৫ সালের ২০ আগস্ট পঞ্চম পর্ষদের প্যানেল নির্বাচন হয়েছিল। ওই সময় ২০ নম্বর দেওয়ান বাজার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী ৩৯ ভোট, সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর জোবাইরা নার্গিস খান ৩১ ভোট এবং ১০ নম্বর উত্তর কাট্টলীর কাউন্সিলর নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু ৩০ ভোট পেয়ে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয়েছিলেন। এবারও প্রার্থী হচ্ছেন তারা।
এছাড়া প্রার্থী হবেন ৩২ নং আন্দরকিল্লা ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী, ১৫ নং বাগমনিরাম ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, ২৫ নম্বর রামপুর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুস সবুর লিটন, ১৮ নং পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. হারুন উর রশীদ ও ৩৯ নং দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমন।
সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের মধ্যে আছেন ২২, ৩০ ৩১ ওয়ার্ডের নীলু নাগ; সংরক্ষিত ২৭, ৩৭ ও ৩৮ ওয়ার্ডের আফরোজা জহুর (আফরোজা কালাম); ৩৩, ৩৪ ও ৩৫ নং ওয়ার্ডের লুৎফুন্নেছা দোভাষ বেবী এবং ১, ২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের ফেরদৌস বেগম মুন্নী।
লড়াইটা নাছির-নওফেলের : চসিকের ৪১ জন সাধারণ ও ১৪ জন সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। এদের কেউ আ.জ.ম নাছির উদ্দীন, কেউ মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী বলে পরিচিত। সংশ্লিষ্টদের মতে, নির্বাচিত কাউন্সিলরদের ৪৩ জন নওফেল ও ১১ জন নাছিরের অনুসারী। অবশ্য নির্বাচনে দল থেকে যাদের সমর্থন দেওয়া হয় তাদের বেশিরভাগই নওফেলের অনুসারী ছিলেন। নাছিরের অনুসারীদের বেশিরভাগ বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিজয়ী হন। ফলে সিটি নির্বাচনের ধারাবাহিকতায় প্যানেল মেয়র নির্বাচনেও দুই নেতার প্রভাব থাকবে।
প্রার্থী হচ্ছেন না নাছিরের এমন কয়েকজন কাউন্সিলর আজাদীকে জানিয়েছেন, নওফেল অনুসারী হিসেবে পরিচিত কয়েকজন প্রার্থী তাদের কাছে ভোট চাননি। বিপরীতে প্রার্থী না হওয়া নওফেল অনুসারী কয়েকজন কাউন্সিলর জানান, নাছির অনুসারী প্রার্থীরা তাদের কাছে ভোট চাননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন কাউন্সিলর বলেন, ভেতরে ভেতরে প্রার্থীরা নিজ নিজ নেতার নির্দেশে নিজেদের মধ্যে প্যানেল করেছেন। তবে প্রার্থীরা সেটা অস্বীকার করেছেন।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, নওফেল অনুসারীদের মধ্যে জহর লাল হাজারী, আবদুস সবুর লিটন, হারুন উর রশিদ, জিয়াউল হক সুমন ও নীলু নাগ এগিয়ে আছেন। নাছির অনুসারীদের মধ্যে চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, গিয়াস উদ্দিন এগিয়ে আছেন। শক্ত অবস্থান আছে আফরোজা কালামেরও। দুই পক্ষের কাউন্সিলদের সঙ্গে সুসম্পর্ক আছে তার।
আ.জ.ম নাছিরের অনুসারী কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব আজাদীকে বলেন, নাছির ভাই নগরের সাধারণ সম্পাদক। তিনি সবাইকে নিয়ে কাজ করবেন। কাজেই আলাদা করে প্যানেল মেয়র নিয়ে কারো পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন না। তবে প্রার্থীরা তার সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।
প্রার্থীরা যা বললেন : চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী আজাদীকে বলেন, গত দুইবার নির্বাচিত হয়ে কাউন্সিলরদের প্রতিনিধিত্ব করেছি। চেষ্টা করেছি তাদের জন্য কাজ করার এবং সুখে-দুঃখে থাকার। এবারও যদি মনে করে আমি যোগ্য এবং তাদের পাশে থাকব তাহলে নির্বাচিত করবেন।
জহর লাল হাজারী আজাদীকে বলেন, চারবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছি। সবসময় নাগরিক স্বার্থ দেখেছি এবং কাউন্সিলরদের পাশে ছিলাম। কাউন্সিলর পদ ব্যবহার করে এক টাকাও অবৈধ ইনকাম করিনি। এবার আওয়ামী লীগ মনোনীত সব প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। নগরের দপ্তর সম্পাদক হিসেবে তাদের জন্য কাজ করেছি। এক্ষেত্রে পূর্বের ও বর্তমান সব কাউন্সিলরের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। ওই হিসেবে আমি এগিয়ে আছি।
গিয়াস উদ্দিন বলেন, নাগরিকদের সেবা করে ২০ বছর কাটিয়ে দিলাম। আমার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে মেয়রের কাঁধে কাঁধ রেখে কাজ করতে চাই। কাউন্সিলরদের সহযোগী হিসেবে তাদের যে বক্তব্য সেটা মেয়রের কাছে পৌঁছে দিতে চাই।
জিয়াউল হক সুমন আজাদীকে বলেন, টানা দুইবার জনগণ মূল্যায়ন করেছে। সেই সুবাদে নতুন যারা কাউন্সিলর ছিলেন এবং নতুন যারা আসছেন সবার সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক। প্যানেল মেয়র হলে বাড়তি কোনো সুবিধা পাওয়া যাবে, এমন না। এটা সম্মানের বিষয়। তাই প্রার্থী হচ্ছি। তিনি জানান, আগ্রাবাদ-বন্দর অঞ্চল থেকে কোনো সময় প্যানেল মেয়র হননি।
সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর নীলু নাগ বলেন, দুইবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছি। ছাত্র রাজনীতি, মহিলা লীগ করে কাউন্সিলর হয়েছি। প্যানেল মেয়র হলে পুরুষ-মহিলা সব ভাইবোনকে নিয়ে তাদের স্বার্থে কাজ করব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধখাস জমিতে বীর নিবাস করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
পরবর্তী নিবন্ধগিনেজ বুকে স্থান পেল ‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু’