খাতুনগঞ্জে জলাবদ্ধতার মূলে খাল ভরাট ও অবৈধ স্থাপনা

গবেষণা রিপোর্ট নিয়ে সেমিনারে অভিমত

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১৬ মার্চ, ২০২১ at ১০:৪৮ পূর্বাহ্ণ

দেশের ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ এবং আশপাশের এলাকায় বিগত কয়েক বছর যাবত সৃষ্ট জলাবদ্ধতার কারণ, অর্থনৈতিক প্রভাব ও এর প্রতিকার বিষয়ক গবেষণা রিপোর্ট নিয়ে এক সেমিনার গতকাল নগরীর আগ্রাবাদ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে অভিমত ব্যক্ত করে বলা হয়েছে জলাবদ্ধতার মূল কারণ হচ্ছে খাল ভরাট ও অবৈধ স্থাপনা। এ ব্যাপারে সব সেবা সংস্থা সমন্বিতভাবে কাজ করলে খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাইকে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি দেওয়া সম্ভব।
গতকাল দুপুরে ‘স্টাডি অন ইকনোমিক ইমপ্যাক্ট অব ওয়াটারলগিং অন লোকাল ট্রেড : দ্য কেইস অব খাতুনগঞ্জ, চট্টগ্রাম’ শীর্ষক এ সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। দি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি এবং পরিকল্পনা কমিশনের (কার্যক্রম বিভাগ) ন্যাশনাল রেসিলিয়েন্স প্রোগ্রামের (এনআরপি) যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত গবেষণাটিতে সহায়তা করে ইউএনডিপি। প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, কয়েক বছর আগেও পলিথিন নিষিদ্ধ করায় এর ব্যবহার হতো না। এই পলিথিনের ব্যবহার আবার বেড়ে গেছে। চট্টগ্রাম শহরের এই পলিথিন গিয়ে পড়ছে কর্ণফুলীতে। যার কারণে কর্ণফুলীর ড্রেজিং কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে। এই ব্যাপারে চট্টগ্রাম চেম্বারের নেতৃবৃন্দ পলিথিন ব্যবসা নিয়ে ব্যবসায়ীদের সাথে এর ব্যবহার বন্ধের ব্যাপারে আলোচনা করতে পরে। খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাইয়ের দুর্দশার জন্য আমরাই দায়ী। আমরা খালে ময়লা ফেলে, খাল ভরাট করে স্থাপনা তৈরি করেছি। যার কারণে খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাইয়ের এই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এখনো সময় আছে এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার।
তিনি আরো বলেন, খালে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে আমাদের আরো কঠোর হতে হবে। তাহলে ওই এলাকার জলাবদ্ধতা কমানো সম্ভব। ওই এলাকায় গাড়ি চলাচলের রাস্তা বড় করার পরিকল্পনা করতে হবে এবং গাড়ির জন্য ট্রাক টার্মিনাল ও চালকদের বিশ্রামাগারের ব্যবস্থা করতে হবে। এতে ওই এলাকার যানজট কমানো সম্ভব হবে।
বিশেষ অতিথি পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগের প্রধান খন্দকার আহসান হোসেন বলেন, স্ট্যাডি রিপোর্ট ছাড়া এখন কোন প্রকল্প পাস হয় না। তাই খাতুনগঞ্জের উপর যে গবেষণা করা হয়েছে তা ওই এলাকার সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানে সহায়ক হবে। স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে করণীয় সম্পর্কে আমাদের পরিকল্পনা করে কাজ করতে হবে। তাহলে খাতুনগঞ্জকে বাঁচানো সম্ভব হবে।
চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, শত শত বছর ধরে নৌ-পথে বাণিজ্য পরিচালনায় খাতুনগঞ্জ-কোরবানীগঞ্জ-চাক্তাই এলাকার গৌরবময় ইতিহাস রয়েছে। ৯১ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের পর থেকে ক্রমান্বয়ে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি ও অতি বৃষ্টির ফলে এই এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। তার সাথে খাল, নালা-নর্দমা ভরাটের ফলে বিভিন্ন গুদাম ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জলমগ্ন হয়ে ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় উদ্ভাবনে পরিকল্পনা কমিশনের এনআরপি প্রকল্প ও ইউএনডিপির উদ্যোগে পরিচালিত এই সমীক্ষার চূড়ান্ত রিপোর্ট অনুযায়ী মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্প গ্রহণ করে একনেকে পাস করার মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন করতে হবে।
এনআরপির প্রকল্প পরিচালক ড. নুরুন নাহার বলেন, ছোট্ট পরিসরে পরিচালিত এই সমীক্ষার চূড়ান্ত রিপোর্টে স্টেকহোল্ডাদের মতামত গুরুত্ব সহকারে অন্তর্ভুক্ত করে তা প্রকাশ করা হবে। ইউএনডিপির প্রোগ্রাম এনালিস্ট আরিফ আবদুল্লাহ খান এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানে প্রকল্প বাস্তবায়নের উপর সলিড ও লিকুইড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেন।
চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চসিকের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী আহমেদ মাঈনুদ্দিন ইমন, খাতুনগঞ্জ ট্রেড এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিজ এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ ছগীর আহমদ, চেম্বারের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ, আমির মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ ইদ্রিস মিয়া, চাকতাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এস এম মহিউদ্দিন (মুহিম)। অনুষ্ঠানে স্টাডি রিপোর্ট উপস্থাপন করেন এনআরপির কনসালটেন্ট ড. রিয়াজ আক্তার মল্লিক, ড. নজরুল ইসলাম, ড. আবু তৈয়ব মো. শাহজাহান ও সুমাইয়া মামুন।
সেমিনারে অন্যান্য বক্তারা সিডিএ, সিটি কর্পোরেশন, চট্টগ্রাম বন্দর, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার সমন্বিত সুদুরপ্রসারী কর্মসূচি গ্রহণ এবং নির্মাণাধীন স্লুইচ গেইটসমূহ অতি দ্রুত সম্পন্ন করা, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে সমন্বিতভাবে প্রকল্প প্রস্তাব প্রেরণ, খালের দুই পাড়ে ওয়াকওয়ে ও স্থায়ীভাবে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ, খালে নর্দমায় বর্জ্য ফেলা প্রতিহত করা এবং পলি অপসারণের উদ্যোগ গ্রহণের আহবান জানান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধখালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ আরো ৬ মাস
পরবর্তী নিবন্ধসিজল চেয়ারম্যানের মানবিক উদ্যোগ