হঠাৎ করেই করোনার সংক্রমণ আবার বাড়তে শুরু করেছে আমাদের দেশে। হাসপাতালগুলোতে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। আইসিইউ শয্যার সংকট দেখা দিচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন সংশ্লিষ্টরা। সরকারের মধ্যেও এ উদ্বেগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গতকাল ১৫ মার্চ দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কয়েকমাস কমলেও করোনা সংক্রমণের হার এখন ফের উর্ধ্বমুখী। চট্টগ্রামে বর্তমানে দৈনিক সংক্রমণের হার ৭/৮ শতাংশ দেখালেও বিদেশগামীদের পরীক্ষাকৃত নমুনার হিসেব আলাদা করলে দৈনিক সংক্রমণের এ হার প্রকৃতপক্ষে ১৫ শতাংশের বেশি। অথচ মাসখানেক আগেও সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের কম ছিল। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা ও চিকিৎসকরা বলছেন, টিকাদান শুরুর পর করোনা নিয়ে মানুষের উদাসীনতা আরো বেড়েছে। যেন এক ধরনের অবহেলা কাজ করছে মানুষের মাঝে। যার কারণে স্বাস্থ্যবিধি মানা তো দূরের কথা, অধিকাংশের মুখে মাস্কটিও দেখা যাচ্ছে না। অনেকে মাস্ক পরলেও তা হয় থুতনিতে, নয়তো গলায় ঝুলতে দেখা যায়। তাছাড়া বিয়ে-গায়ে হলুদ, উৎসব, মেজবানসহ সব ধরনের সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান হচ্ছে হরহামেশাই। এসব অনুষ্ঠানে শারীরিক দূরত্ব বা স্বাস্থ্যবিধি মানছে না কেউ। এতে করে সংক্রমণ আবারো বাড়ছে হুহু করে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, করোনার নতুন ধরনের বিস্তার ঘটছে। সেটি হতে পারে বাইরে থেকে এসেছে অথবা বিদ্যমান ভাইরাসই নিজেকে বদলে আরো শক্তিশালী হয়েছে। তাঁরা সবাইকে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, আমাদের শারীরিক দূরত্ব অবশ্যই বজায় রাখতে হবে। টিকার কারণে গাছাড়া দিলে হবে না। আর মাস্ক অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে। জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে।
তাঁরা জানান, করোনা টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার দুই সপ্তাহ পর তা কার্যকর হয়। প্রথম ডোজ নিয়েই শরীরে কোভিড প্রতিরোধক্ষমতা তৈরি হওয়ার কোন সম্ভাবনাই নেই। কাজেই টিকা নিয়েই নিশ্চিত হওয়া বা স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করা ভয়ংকর বলে উল্লেখ করেন তাঁরা।
করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে সরকারের ভেতরে বেশ উদ্বেগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে বলে পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে। আগামী ৩০ মার্চ থেকে স্কুল-কলেজ খোলা নিয়ে দুশ্চিন্তার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই। গত শনিবার আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ড এবং স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের যৌথ সভার আলোচনায় তার এ উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ পেয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই যৌথ সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভায় অংশ নেওয়া দলের সভাপতিমণ্ডলী ও উপদেষ্টা পরিষদের চারজন সদস্য জানিয়েছেন, নতুন করে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির ধারায় গত এক সপ্তাহে দেশে নতুন রোগী শনাক্তের সংখ্যা বেড়েছে ৬৭ দশমিক ২৭ শতাংশ। মৃত্যু বেড়েছে ৪৯ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। উদ্বেগজনক ও উৎকণ্ঠাপূর্ণ এই পরিস্থিতি নিয়ে সভায় বিশদ আলোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁরা জানান, সভায় সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, করোনা আবার বাড়ছে। তাই সতর্ক থাকতে হবে। আগের মতো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় এলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে। সেটা না হলে নতুন করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সামপ্রতিক করোনা পরিস্থিতিতে স্কুল-কলেজ খোলা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানিয়েছেন, করোনা পরিস্থিতির দিকে সার্বক্ষণিক দৃষ্টি রাখা হচ্ছে। করোনা বাড়লেও এখন পর্যন্ত শিক্ষাঙ্গন খোলার দিনক্ষণ ঠিক রয়েছে। তবে দ্রুতই পরামর্শক কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
মোট কথা হচ্ছে, করোনার সংক্রমণ হার বৃদ্ধিতে সর্বমহলে উদ্বেগ বাড়ছে। যেভাবে মানুষের ভেতরে নিঃশঙ্ক মনোভাব বিরাজ করছে, অবাধে চলাচল করছে, জনসমাগম হচ্ছে, ভিড় বাড়ছে, তাতে করোনার মাত্রা বাড়া বা প্রকোপ বৃদ্ধির ঘটনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তাই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ বা নির্দেশনা আমাদের বাস্তবায়ন করতে হবে। সংক্রমণ ঠেকাতে হলে সবক’টি সামাজিক অনুষ্ঠান বা উৎসবের নিয়ন্ত্রণ জরুরি হয়ে পড়ছে। স্বাস্থ্য বিধি মানা ও মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।