চিংড়ি পোনা আহরণে নষ্ট হচ্ছে অন্য প্রজাতির মাছ

সীতাকুণ্ড সমুদ্র উপকূল

সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি | সোমবার , ১৫ মার্চ, ২০২১ at ৬:০০ পূর্বাহ্ণ

বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় এলাকায় সীতাকুণ্ডের সলিমপুর থেকে মীরসরাইয়ের মুহুরী প্রজেক্ট পর্যন্ত অবাধে চিংড়ি পোনা আহরণ করা হচ্ছে। বছরের পর বছর এখানকার সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় বাগদা ও গলদা পোনা আহরণের নামে মৎস্য সম্পদ ধ্বংস করা হলেও প্রশাসন কোনো নজর দিচ্ছে না। যার ফলে সাগর ও নদ-নদী মাছশূন্য হয়ে পড়ছে।
সীতাকুণ্ড উপজেলার সৈয়দপুর, বাঁশবাড়িয়া, কুমিরা, মুরাদপুর, সোনাইছড়িসহ উপকূলীয় এলাকায় প্রতিদিনই নেট জাল, কারেন্ট জাল, বিহিন্দি জাল, বাক্স জাল ও টাঙা জাল বসিয়ে পোনা আহরণকারীরা চিংড়ি পোনা সংগ্রহ করছে। এসময় তাদের জালে অন্যান্য প্রজাতির মাছ ও সামুদ্রিক প্রাণীও ধরা পড়ছে। তারা চিংড়ি পোনাগুলো সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। কিন্তু অন্যান্য প্রজাতির প্রাণী ও মাছগুলো মাটিতে ফেলে দেয়। এসব পোনা পাঠানো হয় খুলনায়।
স্থানীয় জেলেরা জানান, ‘স্থানীয়ভাবে পরিচিত লাল চিংড়ি, ট্যাংরা (গুইল্লা মাছ), লইট্যা মাছ, রিটা মাছ, পোপা মাছ, চিরিং মাছ, রিস্‌শা মাছ, হোন্ধরা মাছ, বাইলা মাছ, ইছা মাছ এখন আর তেমন পাওয়া যায় না।’ মৎস্য আইন অনুযায়ী জাল ও নেট দিয়ে পোনা আহরণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হলেও তা কেউ মানছে না। এমনকি আইন অমান্যকারীদের জেল জরিমানার ব্যবস্থা থাকলেও এখানে তার প্রয়োগ নেই বললেই চলে। বাঁশবাড়িয়া উপকূলীয় এলাকায় হীরালাল জলদাশ নামে এক পোনা সংগ্রহকারী জানান, ‘১০০ চিংড়ি পোনার দাম ৭০-৮০ টাকা। একেকজন আহরণকারী প্রতিদিন ২০০চিংড়ি পোনা আহরণ করে থাকেন।’
সীতাকুণ্ড-মীরসরাই চিংড়ি পোনা সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক রফিক আহমেদ জানান, ‘পোনা সংগ্রহকারীরা বাগদা চিংড়ি পোনা ধরতে গিয়ে অন্য পোনা নষ্ট করে না। তারা বাগদা পোনা রেখে দিয়ে অন্য পোনাগুলো সাগরে ছেড়ে দেয়। সমিতির সিদ্ধান্ত মোতাবেক তাদের ওপর এই ধরনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’ তিনি জানান, এখানকার উপকূলীয এলাকায় অন্তত পাঁচ হাজার নারী-পুরুষ পোনা আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। বছরের এসময়টিতে সাগরে প্রচুর পরিমাণে গলদা ও বাগদা চিংড়ির পোনা পাওয়া যায়। এ পোনাগুলোর বাজারমূল্য বেশি হওয়ায় সকলের আগ্রহও বেশি থাকে।
পোনা সংগ্রহকারীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রাবারের টিউবের বয়া, ডেকচি, সাদা থালা, প্লাস্টিকের সাদা চামচ নিয়ে কর্ণফুলী নদীর তীরে শত শত লোকজন চিংড়ি পোনা আহরণ করে প্রতিদিন। ভাটার সময় চিংড়ি পোনা আহরণের উপযুক্ত ক্ষণ বলে জানান আহরণকারীরা। তারা জানান, প্রতিদিন দু-তিনশত পোনা ধরেন প্রতিজন। এসব পোনা আহরণ করে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে প্রতি চিংড়ি দুই টাকা দামে বিক্রি করেন।
উপজেলা মৎস্য অফিসের সংশ্লিষ্টরা জানান, সীতাকুণ্ডের সমুদ্রতীরবর্তী এলাকায় প্রতিবছর প্রায় তিন হাজার একর জমিতে বাগদা চিংড়ির চাষ হয়ে থাকে। আর এসব ঘের এলাকায় অধিকাংশ পোনা স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করা হয়। ফলে পোনা আহরণ কোনোভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না।
মৎস্য বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি চিংড়ির পোনা ধরতে গিয়ে অন্য প্রজাতির মাছের ৩০ থেকে ১০০ পোনা (ক্ষেত্র ভেদে) ধ্বংস করে ফেলা হয়। সে হিসেবে প্রতিদিন ধরা হচ্ছে লাখ লাখ পোনা। আর এ কারণে প্রতিদিন অন্য মাছের প্রজনন নষ্ট হচ্ছে। যা দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতি ছাড়াও সাগরে মৎস্য ভাণ্ডার শূন্য হওয়ার পথে।
উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা শামীম আহমেদ বলেন, ‘একটি চিংড়ি পোনা ধরতে গিয়ে এর পেছনে প্রায় ১০০ প্রজাতির মাছের পোনা নষ্ট হচ্ছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা মশারির নেট দিয়ে নদী ও সমুদ্র থেকে চিংড়ি পোনা ধরছে। এভাবে চিংড়ি পোনা আহরণ করতে গিয়ে তারা অন্যান্য প্রজাতির পোনা নিধন করছেন। যার ফলে সাগরের মাছ প্রতিনিয়ত ধ্বংস হচ্ছে।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধআত্মীয় পরিচয়ে স্বর্ণ ব্যবসায়ীর সঙ্গে প্রতারণা
পরবর্তী নিবন্ধবাঁশখালী ডিগ্রি কলেজে ছাত্রদলের মিছিলে হামলা