মিয়ানমারে সেনাঅভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে ‘বিপ্লবের’ ডাক দিয়েছেন এনএলডির আত্মগোপনকারী নেতা মান উয়িন খাইং থান। এদিন দেশটির প্রধান বাণিজ্য নগরী ইয়াঙ্গুনে পুলিশের গুলিতে ১৪ বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। ইয়াঙ্গুনের হ্লাইং থারিয়ার এলাকায় পুলিশ বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে সরাসরি গুলি ছোড়ে। বিক্ষোভকারীরা এদিন লাঠি ও ছুরি নিয়ে এসেছিলেন। হ্লাইং থারিয়ার এলাকায় চীনের অনেকগুলো কারখানা রয়েছে। বিক্ষোভকারীরা সেগুলোতে হামলা চালাতে পারেন আশঙ্কায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী সেখানে সামরিক আইন জারি করেছে। বিক্ষোভকারীদের বিশ্বাস, চীন মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে সমর্থন দিচ্ছে। যদিও বেইজিং সরকার এই গুঞ্জন অস্বীকার করেছে। খবর বিডিনিউজের।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, গতকাল রোববার হ্লাইং থারিয়ার এলাকায় বিক্ষোভের ভিডিওতে নিরাপত্তা বাহিনীর মুখোমুখি হওয়ার সময় বিক্ষোভকারীদের অনেককে ঘরে বানানো ঢাল ধরে থাকতে ও হেলমেট পরিহিত অবস্থায় দেখা গেছে। সেখানে কালো ধোঁয়ার আস্তরণও দেখা গেছে। ওই এলাকার দুটি কারখানায় আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
গত ১ ফেব্রুয়ারি সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের পর থেকে মিয়ানমারে চলমান আন্দোলনে রোববার পর্যন্ত ৯০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিকাল প্রিজনার্স। একই সময়ে দুই হাজার একশর বেশি মানুষকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।
অং সান সু চির ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি পাটির্র (এনএলডি) নির্বাচিত পার্লামেন্ট সদস্যদের মধ্যে যারা গ্রেপ্তার এড়িয়ে আত্মগোপন করতে সক্ষম হয়েছেন তারা একটি নতুন গোষ্ঠী প্রতিষ্ঠা করেছেন। এর নাম কমিটি ফর রিপ্রেজেন্টিং পাইডাংসু লুত্তাও বা সিআরপিএইচ। মান উয়িন খাইং থান এর অস্থায়ী প্রধান নিযুক্ত হয়েছেন। সিআরপিএইচ মিয়ানমারের বৈধ সরকার হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। শনিবার গোপন অবস্থান থেকে ফেইসবুকের মাধ্যমে দেওয়া ভাষণে খাইং থান বলেন, ‘এটি জাতির সবচেয়ে অন্ধকার মূহুর্ত কিন্তু নিকটেই ভোর।’
সিআরপিএইচ মিয়ানমারে একটি ফেডারেল গণতন্ত্র তৈরির লক্ষ্য নিয়ে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছে। এর নেতারা দেশটির বৃহত্তম নৃগোষ্ঠীগুলোর সশস্ত্র সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করছে এবং ইতোমধ্যে কিছু গোষ্ঠী সিআরপিএইচের প্রতি সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বলে রয়টার্স জানিয়েছে। এই বিদ্রোহী সশস্ত্র সংগঠনগুলো মিয়ানমারের বিস্তৃত বহু অঞ্চলে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে রেখেছে।
খাইং থান বলেছেন, ‘নিজেদের রক্ষার আইনি অধিকার যেন জনতার থাকে সেই লক্ষ্যে সিআরপিএইচ প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ণের উদ্যোগ নিয়েছে।’ ‘অন্তবর্তী জনপ্রশাসন দল’ মিয়ানমারের সরকারি প্রশাসন পরিচালনা করবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলীয় মোনিওয়া পৌরসভা নিজস্ব স্থানীয় সরকার ও পুলিশ বাহিনী গঠনের ঘোষণা দিয়েছে।