২০০৫ সালে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (বিকেএসপি) চট্টগ্রাম কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছিল সাগরিকায়। দেশের ভেতরে ও বাইরে বিকেএসপির মূল কেন্দ্রের যথেষ্ট সুনাম। এমন প্রতিষ্ঠান নেই অনেক উন্নত দেশেও। চট্টগ্রামেও বিকেএসপির তেমন একটি শাখা প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল সরকার। তবে সাগরিকার মনোরম পরিবেশে সাড়ে তিন একর জায়গার ওপর বিকেএসপির চট্টগ্রাম কেন্দ্র গড়ে তোলা হলেও আজও তা সাড়া ফেলতে পারেনি। পৌঁছাতে পারেনি কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে।
করোনাকালে চট্টগ্রামের এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দেখা গেছে সুনসান নীরবতা। বিশাল দুটি ভবনে ছিল না কোনো কোলাহল। অথচ এক বছর আগেও ছেলেমেয়েদের কোলাহলে মুখর থাকত প্রতিষ্ঠানটি। তবে করোনা সংকট কেটে গেলে আবারো সরব হবে কেন্দ্রটি; তেমনটি প্রত্যাশা কেন্দ্রের উপপরিচালকের।
বিকেএসপি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাফল্য না পাওয়ার কারণ হিসেবে বলা যায়, এতে নেই কোনো ফুটবল মাঠ। এখন যে মাঠটি রয়েছে তাতে ফুটবল খেলা বা প্রশিক্ষণ দেয়া সম্ভব নয়। এ কারণে কেন্দ্রটির দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণের তালিকায় নেই ফুটবল। অথচ ছেলেমেয়েদের আকর্ষণ ফুটবলের দিকেই বেশি। ঢাকা বিকেএসপি থেকে ইতোমধ্যে অনেক ফুটবলার বেরিয়েছেন, যারা নানা সময় জাতীয় দলে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তবে ক্রিকেট এখন সে জায়গাটি দখল করে নিচ্ছে মত সংশ্লিষ্টদের।
বিকেএসপি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণের তালিকায় রয়েছে ক্রিকেট, বাস্কেটবল, বক্সিং এবং কাবাডি। আর এ বছর তালিকায় যুক্ত হবে স্কোয়াশ। স্বল্পমেয়াদী বেশ কিছু ইভেন্টের ওপরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় কেন্দ্রে। যা মূলত এক কিংবা দুই মাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। বর্তমানে সাতজন কোচ এবং সাতজন শিক্ষক দিয়ে চলছে কেন্দ্রের কার্যক্রম। যেহেতু বিকেএসপিতে শিক্ষা এবং খেলাধুলা কার্যক্রম একসাথে চলে সেহেতু কোচের পাশাপাশি প্রয়োজন হয় শিক্ষকেরও। তবে করোনায় শিক্ষক কিংবা কোচ সবাই কাজ করতে পারছেন না।
বিকেএসপি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের উপপরিচালক আবু তারেক বলেন, জায়গার অভাবের কারণে কেন্দ্রে অনেক বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব হয় না। যেমন বড় কোনো ফুটবল মাঠ নেই। এখন কেবল জিমনেসিয়াম, বক্সিং রিং, বাস্কেটবল কোর্ট আর একটা ছোট মাঠ রয়েছে। যেখানে ক্রিকেটসহ আউটডোর ইভেন্টগুলোর অনুশীলন করানো হয়। অথচ কঙবাজার বিকেএসপির আয়তন প্রায় ৩০ একর। যদিও চট্টগ্রাম কেন্দ্রের জন্য বিকেএসপির পক্ষ থেকে পাশের ১২ একর জমি অধিগ্রহণের আবেদন করা হয়েছে। সেটি পাওয়া গেলে কেন্দ্রের সুযোগ-সুবিধা আরো কিছুটা বাড়ানো যাবে।
মূলত জানুয়ারি মাসে সপ্তম শ্রেণিতে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করানো হয় বিকেএসপিতে। প্রতিষ্ঠানটির প্রতি শিশু-কিশোরদের আকর্ষণ বরাবরই বেশি। তাই করোনাকালেও ভর্তি পরীক্ষায় হাজার-হাজার ছেলেমেয়েকে অংশ নিতে দেখা গেছে। অথচ প্রতি বছর একশোর কম ছেলেমেয়ে ভর্তি হতে পারে এখানে। কারণ বিকেএসপির হোস্টেলের ধারণ ক্ষমতা মাত্র ৯৯ জনের।
বিকেএসপি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের ওপর বৃহত্তর চট্টগ্রামের ছেলেমেয়েদের আকর্ষণ রয়েছে। কিন্তু সাধ থাকলেও যেন সাধ্য নেই তাদের। অপরদিকে ইচ্ছা থাকলেও প্রত্যাশিত সংখ্যক ছেলেমেয়েকে সুযোগ দেওয়া সম্ভব হয় না বলে জানান উপ পরিচালক। তবে কেন্দ্রটির পরিধি বাড়ানো গেলে ঢাকার পরে একটি আদর্শ ক্রীড়া শিক্ষা কেন্দ্র হতে পারে এটি। নানা সীমাবদ্ধতার মাঝেও এই কয় বছরে সহস্রাধিক ছেলেমেয়েকে স্বল্পমেয়াদী প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণার্থীর সংখ্যাও কম নয়। তবে এরপরেও যা হচ্ছে তা প্রত্যাশিত মানের নয় বলে মনে করেন অনেকে। এই মুহূর্তে কেন্দ্রটির পরিধি এবং সুযোগ-সুবিধা দুটোই বাড়ানো জরুরি।