বান্দরবানের থানচিতে বজ্রপাত রোধে উপকারি তালগাছ রোপণ এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবকাঠামো সংস্কার প্রকল্পের অর্থ লোপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টি.আর) কর্মসূচির আওতায় নেয়া থানচি, রেমাক্রি, তীন্দু, বলিপাড়া চারটি ইউনিয়নের অধিকাংশ প্রকল্পের অর্থই নামে-বেনামে প্রকল্প দেখিয়ে লোপাট করা হয়েছে অভিযোগ স্থানীয়দের।
পিআইও অফিস ও স্থানীয়রা জানান, গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টি.আর) কর্মসূচির আওতায় ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ২য় পর্যায়ে বিভাগীয় কমিশনারের অনুকূলে নন সোলার প্রকল্প খাতে থানচি উপজেলার সদর ইউনিয়নের মেনরোয়া পাড়া হতে ক্রংক্ষ্যং পাড়া যাবার রাস্তায় দু’পাশে তালগাছ রোপণের জন্য ৫০ হাজার টাকায় একটি প্রকল্প নেয়া হয়। প্রকল্পের ভিত্তিতে বজ্রপাত রোধে উপকারি পরিবেশবান্ধব ১১০টি তালগাছের চারা সংগ্রহ করা হয় থানচিতে লাগানোর জন্য। তারমধ্যে বিশটির মত তালগাছের চারা লাগানোর আগেই মরে যায় বলে খবর পাওয়া গেছে। তবে কাগজে কলমে প্রকল্পে তালগাছ রোপণের কথা থাকলেও ঘটনাস্থলে গিয়ে তালগাছের কোনো অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অপরদিকে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টি.আর) কর্মসূচির আওতায় ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ১ম পর্যায়ে বিভাগীয় কমিশনারের অনুকূলে নন সোলার প্রকল্প খাতে নকতোহাপাড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবকাঠামো সংস্কারের জন্য দেড় লাখ টাকার একটি প্রকল্প নেয়া হয়। কিন্তু দু’বছরেও প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়নি। সরজমিন দেখা গেছে, পুরনো জরাজীর্ণ ভাঙা স্কুল ঘরটির লাগোয়া ১২টি কাঠের খুঁটি মাটির মধ্যে কুপে প্রকল্পের পুরো অর্থ লোপাট করা হয়েছে। এদিকে অস্তিত্বহীন দুটি প্রকল্পই থানচি প্রকল্প কর্মকর্তা (পিআইও)’র নেতৃত্বে স্থানীয় কয়েকজন বাস্তবায়ন করেছেন বলে জানা গেছে।
মেনরোয়া পাড়ার স্থানীয় বাসিন্দা সাগ্যচিং, হ্লাচিংনু অভিযোগ করে বলেন, ‘কিসের তালগাছ প্রকল্প। এখানে কোনো তালগাছ রোপণ করা হয়নি। গাছ লাগালে আপনারা দেখতে পেতেন না, রাস্তা দিয়ে আসার পথে। কত প্রকল্প আছে, সব হর্তাকর্তাদের পকেটে ঢুকে যায়।’
নকতোহাপাড়ার স্থানীয় বাসিন্দা রাম বাহাদুর বলেন, গতবছর শুধুমাত্র ১০/১২টি কাঠের খুঁটি লাগানো হয়েছে। তারপর আর স্কুল সংস্কারে কাউকে আসতে দেখিনি। স্কুলটির দরজা, জানালা সবগুলো ভেঙে মাটিতে লুটিয়ে পড়ার অবস্থা হয়েছে।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি রায় বাহাদুর বলেন, ‘কারিতাসের পাড়া স্কুলের প্রজেক্টের মেয়াদ শেষ হওয়ায় শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার সুবিধার্থে স্কুলটি সংস্কারের আবেদন করা হলে প্রকল্প নেয়া হয়। পুরনো স্কুল ঘরের পাশে নতুনভাবে স্কুলঘর নির্মাণের কাজও শুরু করা হয়েছিল। কিন্তু কাঠের খুঁটি কয়েকটি লাগানোর পর করোনা ভাইরাসের অজুহাতে আর কোনো কাজ করা হয়নি। স্কুলের ২ জন শিক্ষক এবং ৩৫/৪০ জন ছাত্রছাত্রী রয়েছে। আদৌ স্কুল ঘরটি টিকিয়ে রাখতে পারবো কিনা বুঝতে পারছি না।’
থানচি প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিভাগীয় কমিশনারের অগ্রাধিকার প্রকল্পে বজ্রপাত রোধে থানচিতে তালগাছ রোপণের উদ্যোগ নেয়া হয়। প্রকল্পে চিহ্নিত স্থানে ইটের রাস্তার দু’পাশে বাঁশের খাঁচা তৈরি করে ৯০টি তালগাছ লাগানো হয়েছিল। কিন্তু গাছ লাগানোর সময় স্থানীয় পাহাড়িরা জায়গাটি নিজের দাবি করে বাধা দেন। পরবর্তীতে দুর্বৃত্তরা তালগাছ উপড়ে ফেলে দিয়েছে বলে খবর পেয়েছি। নকতোহা স্কুলের কাজও করা হয়েছে। কাজ অসম্পন্ন থাকলে সেটিও সম্পন্ন করে দেয়া হবে।’
এ বিষয়ে থানচি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আতাউল গণী ওসমানী বলেন, ‘প্রকল্পগুলোর ব্যাপারে আমি সঠিক জানি না। খোঁজখবর নিয়ে কাজ অবশিষ্ট থাকলে বাস্তবায়নে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’