নারীই গড়বে সমতার বিশ্ব

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ৮ মার্চ, ২০২১ at ৫:৪৬ পূর্বাহ্ণ

করোনাকালে নারী দিবস। তাই এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘করোনাকালে নারী নেতৃত্ব, গড়বে নতুন সমতার বিশ্ব’। আন্তর্জাতিক নারী দিবস আজ। এ প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে বিশ্বের অন্যান্য স্থানের মতো বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হবে দিবসটি।
প্রতি বছর জাতিসংঘ একেকটি প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করে ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করে। এ দিবস ঘিরে রয়েছে ঐতিহাসিক তাৎপর্য। এর পেছনে আছে নারী শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের দীর্ঘ ইতিহাস।
১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে মজুরি বৈষম্য, কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরের রাস্তায় নেমেছিলেন একটি সুতা কারখানার নারী শ্রমিকরা। সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত নারী সমাবেশে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
১৯১০ সালে ডেনমার্কে অনুষ্ঠিত নারীদের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ৮ মার্চকে নারী দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। নারীদের ওপর সমস্ত নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে মুখর হওয়া, বৈষম্য দূর করা এবং সমতা আনয়নই এ দিবস পালনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। আমাদের দেশে ১৯৭১ সাল থেকে ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হচ্ছে। ১৯৭৫ সালে জাতিসংঘ ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালনের দাবি জানানোর ফলে বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে দিবসটি। আমাদের আর্থসামাজিক নানা ধাপে নারীরা অতীতের চেয়ে অনেক এগিয়েছে। নানা ক্ষেত্রে অবদান রাখছে। পুরুষের পাশাপাশি নারীরা অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিজেদের সংম্পৃক্ত রেখে নেতৃত্বের শিখরে পৌঁছতে সক্ষম হয়েছে।
তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, বিভিন্ন জাতীয়, আন্তর্জাতিক আইনি ও নীতিগত ভিত্তি থাকা সত্ত্বেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এখনো নারীর জন্য সমান সুযোগ তৈরি হয়নি। নারীর নিরাপত্তা ও সমতা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সামগ্রিক অবস্থা আশাপ্রদ নয়। ধর্ষণ, ফতোয়ার মতো মধ্যযুগীয় বর্বরতা আজও আমাদের সমাজে বিদ্যমান। অর্থনৈতিকভাবে আমাদের দেশের নারীরা পরনির্ভরশীল। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর একাংশ নারী এখনো গার্মেন্টসহ বিভিন্ন কারখানায় স্বল্প বেতনের শ্রমিক হিসেবে কর্মরত। নিরক্ষর বা স্বল্পশিক্ষিত নারীদের এ অংশটি বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনকারী গার্মেন্টস খাতের প্রধান শ্রমশক্তি।
নারীর অধিকার আদায়ে নারীকে অবশ্যই স্বাবলম্বী হতে হবে। তেমনি পুরুষকেও নারীর প্রতি সহমর্মিতার হাত বাড়াতে হবে। বর্তমান সরকার নারী উন্নয়নে কাজ করছে। সরকারের উদ্যোগ সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে নারীর ক্ষমতায়ন বাড়বে। জেন্ডার সমতা অর্জনের লক্ষ্যে নারীর সামর্থ্য বৃদ্ধি পাবে। সম্প্রসারিত হবে নারীর মত প্রকাশের ক্ষমতা। তখন নারীই গড়বে সমতার নতুন বিশ্ব।
কোভিড-১৯ মোকাবেলায় নারীরা সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে স্বাস্থ্যসেবায়, আইন-শৃক্সখলা রক্ষায় যেমন কাজ করেছে, তেমনি আগলে রেখেছে সংসারকে। আবার মানবতার সেবায় ও নেতৃত্বে দেখিয়েছে অসাধারণ কৃতিত্ব। তবে করোনাকালে নারীরা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনেরও শিকার হয়েছে।
জীবন-জীবিকার সংগ্রামে নারীদের সংগ্রাম চলছেই। জাতীয় রাজনীতি ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ বাড়লেও নীতি নির্ধারণ প্রক্রিয়ায় নারীর গুরুত্ব বাড়ছে না। দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারীকে বাদ দিয়ে কোনো উন্নয়ন সম্ভব নয়। নারীকে মানুষ হিসেবে মর্যাদা দিতে উন্নত পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করতে সবাইকে কাজ করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনগর বিএনপির চার নেতাকর্মী কারাগারে
পরবর্তী নিবন্ধআখতারুজ্জামান বাবুসহ ৯ ব্যক্তি ও এক প্রতিষ্ঠান পাচ্ছে স্বাধীনতা পুরস্কার