প্রায় ১২ হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন, ৮ শতাধিক শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সুরক্ষা দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের (আইআইইউসি) বোর্ড অব ট্রাস্টিজ। গতকাল শনিবার বিকেল পাঁচটায় আইআইইউসি বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান আ ন ম শামশুল ইসলাম এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে দেয়া লিখিত বক্তব্যে এ দাবি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আইআইইউসি’র প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের নিয়ে গঠিত বিদ্যমান ট্রাস্টি বোর্ডই আইনসিদ্ধ বৈধ পর্ষদ। প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী দীর্ঘদিন ধরে আইআইইউসিতে শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত রয়েছেন। একই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকায় ট্রাস্টি বোর্ডের (পরিচালনা পর্ষদ) দায়িত্বে আসার কোনো সুযোগ নেই বলে লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক আহসান উল্লাহ, প্রিন্সিপাল আমিরুজ্জামান, মো. শাহজাহানসহ সব ট্রাস্টি সদস্য অংশ নেন। সঞ্চালনায় ছিলেন আইআইইউসি’র অতিরিক্ত পরিচালক শফিউল আলম।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠা লাভের পর থেকে দীর্ঘ ২৬ বছরে বর্তমান ট্রাস্টি বোর্ডের দক্ষ পরিচালনায় দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে আইআইইউসি। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে প্রায় ১২ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করে। এর মধ্যে প্রায় ২শ বিদেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রিপ্রাপ্ত গ্র্যাজুয়েটগণ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন নামিদামি প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। আইআইইউসিতে বর্তমানে পূর্ণকালীন ৩৫০ জন শিক্ষকসহ প্রায় ৫ শতাধিক শিক্ষক রয়েছেন। এর মধ্যে ১০১ জন শিক্ষক হলেন পিএইচডি ডিগ্রিধারী। বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটদের সংখ্যা প্রায় চল্লিশ হাজার। বিগত ২৫ বছরে এ বিশ্ববিদ্যালয়কে সেশনজটের শিকার হতে হয়নি। অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে কখনোই বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকেনি।
সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়, গত ৪ মার্চ বেশ কয়েকটি দৈনিকে ‘আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম (আইআইইউসি) এর নতুন ট্রাস্টি বোর্ড অনুমোদনে কৃতজ্ঞতা’ শীর্ষক বিবৃতি প্রকাশিত হয়েছে। বিবৃতিতে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি দেশবরেণ্য আলেম ও বায়তুশ শরফের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা শাহ মুহাম্মদ আব্দুল জব্বারের (র.) ছেলে বায়তুশ শরফের বর্তমান পীর মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল হাই নদভীর নাম ব্যবহার করা হয়েছে।
আইআইইউসি বোর্ড অব ট্রাস্টিজের পক্ষ হতে ৫ মার্চ বিভিন্ন পত্রিকার মাধ্যমে মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল হাই নদভীর নাম ব্যবহার করে প্রচারিত ঐ বিভ্রান্তিকর ও বেআইনি বিবৃতির নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। পরবর্তীতে ৬ মার্চ সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনের সংসদ সদস্য প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক নতুন বোর্ড অব ট্রাস্টিজ অনুমোদনের যে তথ্য উল্লেখ করে বিবৃতি দিয়েছেন তা সত্য নয়।
আইনানুযায়ী গঠিত একটি ট্রাস্ট কর্তৃক আইআইইউসি পরিচালিত হয়ে আসছে। আইআইইউসি’র প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের নিয়ে গঠিত বর্তমানে ট্রাস্টি বোর্ডই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনসিদ্ধ বৈধ পর্ষদ।
প্রফেসর আবু রেজা নদভীর বিবৃতির একটি অংশ ‘এত দিন স্বাধীনতাবিরোধীদের নিয়ে আইআইইউসি পরিচালিত হয়েছে’ উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রফেসর আবু রেজা নদভী অদ্যাবধি শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত আছেন। তিনি আইআইইউসি’র সিন্ডিকেট সদস্য ও বিদেশ বিভাগের পরিচালকের দায়িত্বেও ছিলেন। জামায়াতে ইসলামীর সাবেক এক আমিরকে আবু রেজা এমপি প্রতিষ্ঠিত আল্লামা ফজলুল্লাহ ফাউন্ডেশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি করেছিলেন।
আবু রেজা নদভী জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আজম প্রদত্ত প্রত্যয়নপত্র নিয়ে বিভিন্ন বিদেশি সংস্থা ও ব্যক্তির কাছ থেকে আল্লামা ফজলুল্লাহ ফাউন্ডেশনের জন্য অর্থ কালেকশন করেছেন। স্বাধীনতার ‘পক্ষ-বিপক্ষ’ ইস্যু এনে ঘোলাপানিতে মাছ শিকার করতে চাইছেন বলে নদভীর বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ তোলা হয়।
এতে আরো বলা হয়, বিগত দিনে বিভিন্ন সংস্থার ক্লিয়ারেন্স নিয়ে, আইন ও বিধি বিধান অনুসরণ করে আইআইইউসি ও বোর্ড অব ট্রাস্টিজ অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এছাড়া রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মস এবং যথাযথ আদালতের মাধ্যমে বোর্ড অব ট্রাস্টিজ গঠন বা বিলুপ্ত করার বিষয়গুলো নিস্পত্তি হয়। রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মস হচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান।
কোনো ব্যক্তির আবেদনের প্রেক্ষিতে কোনো রকমের প্রমাণিত অভিযোগ ছাড়া, আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় চাইলেই কি একটি প্রতিষ্ঠিত ও স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালযের বোর্ড অব ট্রাস্টিজ ভেঙে দিতে পারে? এমন প্রশ্ন রেখে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিগত দু-তিনদিন যাবৎ টেলিফোনে এবং বাসায় ডেকে নিয়ে আবু রেজা নদভী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের সিনিয়র কর্মকর্তাদের হুমকি ধমকি দিয়ে যাচ্ছেন, পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার ও হয়রানির ভয় দেখাচ্ছেন।
আবু রেজা নদভীর এই ধরনের বাড়াবাড়ির মাধ্যমে বিশ্বদ্যিালয়টিকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।