চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ২য় বর্ষের মেধাবী ছাত্র নাইমুল হাসান মিশন (২১)। চিরকুটে তিনি লিখলেন, ‘এই দুনিয়া আমার জন্য নয়, পারলে সবাই আমাকে ক্ষমা করে দিবেন।’ অপর একটিতে লিখেন, আমার মৃত্যুর জন্যে কেউ দায়ী নয়, আমার বেঁচে থাকার কোনো ইচ্ছা নেই, তাই আমি এই সিন্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি। ডারউইন বলেছিলেন, ঝঁৎারাধষ ভড়ৎ ঃযব ভরঃঃবংঃ.
ইঁঃ ও হড়ঃ বাবহ ভরঃ. আমার জন্য কেউ কখনো কষ্ট পেয়ে থাকেন পারলে ক্ষমা করে দিয়েন। আম্মু আমাকে মাফ করে দিয়েন, মিলনের খেয়াল রাখিয়েন (ছোট ভাই)। আব্বু আমাকে সফল করার জন্য অনেক কিছু সহ্য করেছেন, আমি পারিনি তাই ক্ষমাপ্রার্থী।’ চিরকুট লিখে চিরবিদায় নিলেন তিনি।
নাইমুল আত্মহত্যা করেছেন গত শুক্রবার দিবাগত রাতে, খাগড়াছড়ির রামগড় ফেনীরকুল নির্মাণাধীন স্কেল লোড স্টেশনের পাশে নিজ বাসায়। তার বাবা মো. কামাল উদ্দিন সেনাবাহিনীতে কর্মরত। ক্যারিয়ার ও সেশনজট নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে হতাশাগ্রস্ত ছিলেন বলে জানিয়েছেন তার বন্ধুরা।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মিশন বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে রাতের খাবার খেয়ে ঘুমাতে যান। রাতের কোনো এক সময়ে সুইসাইড নোট লিখে আত্মহত্যা করেন। ভোরবেলা অনেক ডাকাডাকি করেও কোনো সাড়া না পেয়ে দরজা ভেঙে তার ঝুলন্ত লাশ দেখতে পান স্বজনরা।
ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাহাব উদ্দিন জানান, সে বেশ কিছুদিন ধরে মানসিক দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত ছিল। এজন্য তাকে ঢাকায় ডাক্তার দেখানো হয়েছিল। ডাক্তারও এ সংক্রান্ত চিকিৎসা দিয়েছিলেন।
রামগড় থানার ওসি (তদন্ত) মনির হোসেন বলেন, লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য খাগড়াছড়ি পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করা হয়েছে।
নাইমুলের প্রতিবেশী ও সহপাঠী মো. আরমান আজাদীকে বলেন, পারিবারিক তেমন কোনো সমস্যা ছিল না। সকল পাবলিক পরীক্ষা পরীক্ষায় সে গোল্ডেন এ+ পেয়েছে। সেনাবাহিনীর অফিসার পদে দুইবার ও মেডিকেলে ভর্তির জন্য দুইবার চেষ্টা করেও সফল হয়নি। এর জন্য সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ইয়ার ড্রপও দিয়েছে। এজন্য মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিল। আর সাম্প্রতিক সময়ে সেশনজট ও ক্যারিয়ার নিয়ে হতাশাগ্রস্ত ছিল।
চবি রসায়ন বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. শাহানারা বেগম আজাদীকে বলেন, নাইমুলের মৃত্যুর খবর শুনেছি। সঠিক করে বলতে পারছি না কী হয়েছে। তবে ওর বন্ধুরা বলল সে ফার্স্ট ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা দেয়নি। প্রথম বর্ষেই থেকে গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভুঁইয়া আজাদীকে বলেন, এ ব্যাপারে তার বিভাগের শিক্ষকদের সাথে কথা হয়েছে। কিছু বিষয় নিয়ে সে মনে হয় হতাশাগ্রস্ত ছিল।