মহামারির মধ্যে দারিদ্র্য বিমোচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে অগ্রাধিকার দিয়ে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ-এনইসি। গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এনইসি সভায় ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকার সংশোধিত এডিপি অনুমোদন দেওয়া হয়, যা চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের মূল এডিপি থেকে ৭ হাজার ৫০২ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ কম। দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, চলতি অর্থবছরের মূল এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। মোট বরাদ্দ থেকে যে ৭ হাজার ৫০২ কোটি টাকা কমানো হয়েছে, তার পুরোটাই বৈদেশিক সহায়তা থেকে কাটা হয়েছে। মূল এডিপিতে সরকারের নিজস্ব তহবিলের মোট বরাদ্দ কমানো হয়নি। তবে সামগ্রিক চাহিদা বিবেচনায় দারিদ্র্য বিমোচনের সঙ্গে সরাসরি সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে অগ্রাধিকার দিয়ে বিভিন্ন খাতের বরাদ্দ বাড়িয়ে বা কমিয়ে সমন্বয় করা হয়েছে।
বাংলাদেশে দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যারা দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে, তাদের জীবনযাত্রার উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। অনেক সময় ধরে এই সমস্যা থেকে নিরসনের জন্য সরকার, সরকারি সংস্থা, বেসরকারি সংস্থাগুলো যৌথভাবে এবং পৃথকভাবে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে আসছে। ফলাফল কিছুটা ইতিবাচক হলেও কিছু কিছু সমস্যার ফলে ইতিবাচক পদক্ষেপগুলো বারবার ব্যর্থ হচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে ২০১৫ সালে বিশ্বের ৭৪ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। এখন ২০১৯ সাল চলমান, উন্নয়নশীল এবং উন্নত দেশগুলো দারিদ্র্যতার বিরুদ্ধে তাদের গৃহীত পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কোনো কোনো দেশ কিছুটা সফল হয়েছে আবার কোনো কোনো দেশ সফলতার আলো দেখার আগে ভুল সিদ্ধান্তের জন্য দারিদ্র্য নামক অভিশাপ থেকে বের হতে পারছে না বলে অভিমত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার প্রথম লক্ষ্য হলো সকল প্রকার দারিদ্র্য বিমোচন করা। দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য সরকারের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপের পাশাপাশি চাই সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গুলোর যৌথ উদ্যোগ।
ঘূর্ণিঝড়সহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাংলাদেশের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার মধ্যে করোনাভাইরাস মহামারির অভিঘাত দারিদ্র্য বিমোচনে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দারিদ্র্য বিমোচনে সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বিত কর্মসূচি গ্রহণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলেন, ‘দারিদ্র্য বিমোচনে আমাদের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে দারিদ্র্য দূরীকরণে আমাদের সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। দারিদ্র্য দূরীকরণে আমাদের সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোকে একই উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিশেষ করে ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে দরিদ্র মানুষগুলো ঝুকিপূর্ণ অবস্থানে চলে যাচ্ছে। আবার জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে পড়েও বিপুল সংখ্যক মানুষ তার শেষ সম্বল হারাচ্ছে। এসব সমস্যার সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে কোভিড-১৯ মহামারী। তাই দেশের হতদরিদ্র মানুষকে দারিদ্র্য সীমার উপরে তুলতে সরকারি ও বেসরকারি উভয় দিক থেকেই মানুষকে স্বাবলম্বী করে তোলায় এগিয়ে আসতে হবে।
বাংলাদেশ দিন দিন উন্নত হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের আশা ও বিশ্বাস, জাতিসংঘ প্রণীত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট এবং বাংলাদেশ সরকার গৃহীত ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্য পূরণে সরকারের গৃহীত কর্মসূচি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। দারিদ্র্যসীমায় বসবাসরত তরুণদের আধুনিক বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত ব্যবস্থার সাথে যুগোপযোগী করে তুলতে হবে। আধুনিকায়ন এর মাধ্যমে তাদের মধ্যে নতুন নতুন চিন্তা ভাবনার উদ্ভাবন হবে। তারা উদ্যমী হবে।
তাছাড়া, দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসরতদের চাকরির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। চাকরির ব্যবস্থা বাংলাদেশে একটি প্রধান সমস্যা বলা যায়। কেননা বর্তমানে অনেক শিক্ষিত বেকার চাকরির জন্য ঘুরছে। বাংলাদেশে শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও জনসংখ্যার তুলনায় কম। এজন্য প্রয়োজন উদ্যোক্তা তৈরির যথাযথ পদক্ষেপ এবং উদ্যোক্তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। উদ্যোক্তা বৃদ্ধির ফলে শিল্পপ্রতিষ্ঠান বৃদ্ধি পাবে এবং কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা হবে। দারিদ্র্য বিমোচন করার জন্য আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞান বৃদ্ধি করতে হবে। যে দেশ যত বেশি তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে অগ্রসর, সেই দেশ তত বেশি উন্নত। যারা দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করে তাদের তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কে অবহিত করতে হবে।