করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সঙ্গে স্থূলতার একটি যোগসূত্র পাওয়ার দাবি করেছেন গবেষকরা। তারা দেখেছেন, যেসব দেশে মানুষের স্থূলতার হার বেশি কোভিড-১৯ এ মৃত্যুও সেসব দেশে বেশি। ওয়ার্ল্ড ওবেসিটি ফেডারেশন বিশ্বে করোনাভাইরাসে মৃত্যু নিয়ে জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির তথ্য বিশ্লেষণ করে এই চিত্র পেয়েছে বলে রয়টার্স গতকাল বৃহস্পতিবার জানিয়েছে।
ওবেসিটি ফেডারেশনের গবেষকরা দেখেছেন, যেসব দেশে পূর্ণবয়স্ক মানুষের কমপক্ষে ৫০ শতাংশ স্থূল, সেসব দেশে মৃত্যুর হার অন্য দেশগুলোর তুলনায় ১০ গুণ বেশি। গবেষণায় পাওয়া এই তথ্যকে নাটকীয় বলছেন গবেষকরা। খবর বিডিনিউজের। জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে এখন অবধি করোনাভাইরাসে সাড়ে ১১ কোটি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে, এরমধ্যে ২৫ লাখ ৬১ হাজারের মৃত্যু ঘটেছে। মৃতদের ৫ লাখের বেশি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। ব্রাজিলে আড়াই লাখের বেশি মৃত্যু ঘটেছে। মেক্সিকো ও ভারতে মারা গেছে দেড় লাখের বেশি। এরপর সবচেয়ে বেশি মারা গেছে যুক্তরাজ্যে সোয়া লাখ। ইতালিতে ৯৮ হাজার, ফ্রান্সে ৮৭ হাজার, রাশিয়ায় ৮৬ হাজার, জার্মানিতে ৭১ হাজার, স্পেনে ৭০ হাজার মানুষ মারা গেছেন। ওবেসিটি ফেডারেশনের গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ এ বিশ্বে যে ২৫ লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটেছে, তার ২২ লাখ মানুষই সেই সব দেশের, যেখানকার মানুষের মধ্যে মেদবহুল হওয়ার প্রবণতা রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, তথ্য বিশ্লেষণে এমন কোনো দেশ পাওয়া যায়নি, যেখানে স্থুলতার হার কম, অথচ করোনাভাইরাসে মৃত্যুর হার বেশি, যা বেশ চমকপ্রদ। এই প্রতিবেদন তৈরিতে যুক্ত ওবেসিটি ফেডারেশনের বিশেষজ্ঞ উপদেষ্টা ও অস্ট্রেলিয়ার সিডনি ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক টম লবস্টাইন বলেন, দেখুন জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার দিকে, এ দেশ দুটিতে কোভিড-১৯ এ মৃত্যু হার কম, আবার পূর্ণবয়স্ক স্থুল মানুষও কম সেখানে। এর বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের কথা বলা হয় প্রতিবেদনে; যেখানে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর হার যেমন বেশি, তেমনি স্থুলতাও দেশ দুটিতে বড় একটি সমস্যা। করোনাভাইরাসে মৃত্যুর হারে বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছ যুক্তরাজ্য, স্থুলতার হারে বিশ্বে দেশটি বিশ্বে চতুর্থ।
যুক্তরাজ্যের লিভারপুল ইউনিভার্সিটির মেডিসিনের অধ্যাপক এবং ওবেসিটি ফেডারেশনের সভাপতি জন ওয়াইল্ডিং বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্তের পর স্বাস্থ্য ঝুঁকির ক্ষেত্রে স্থুলতাকে চিহ্নিত করা দরকার এবং টিকাদানের ক্ষেত্রেও বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে। এটা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ যে আমরা স্থুলতাকে চিহ্নিত করতে পেরেছি, যা ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। তাই ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগীদের মতো তাদেরও টিকার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার, বলেন তিনি।