উলঙ্গ অবস্থায় তিন কিলোমিটার দৌড়, দীঘিতে ঝাঁপ

পিচ্চি সাহাবুদ্দিন

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ at ১০:৩৭ পূর্বাহ্ণ

নগরীর বিভিন্ন থানায় তার মামলার সংখ্যা ২২টি। এর মধ্যে তিনটিতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। কোতোয়ালী থানা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তারে পাহাড়তলী সিগন্যাল কলোনির বাসায় হানা দেয়। সে ভাবে, তাকে ধরতে পারলে পুলিশ ক্রসফায়ার দেবে। এই ভাবনা থেকে সে যা করল তা রীতিমতো আশ্চর্যজনক।
পিচ্চি সাহাবুদ্দিনকে গ্রেপ্তারে নেতৃত্বদানকারী সিআরবি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মো. রবিউল ইসলাম আজাদীকে বলেন, চট্টগ্রামের আলোচিত অপরাধী পিচ্চি সাহাবুদ্দিন। নগরীতে তার তিনটা বাসা। দুই স্ত্রী দুই বাসায় থাকে। তার মা-বাবা, ভাই-ভাবী থাকে পাহাড়তলী সিগন্যাল কলোনিতে। সে কখন কোন বাসায় থাকে কেউ বলতে পারে না।
তিনি বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ২৫ ফেব্রুয়ারি আমরা খবর পাই, সে সিগন্যাল কলোনিতে তার বাবার বাসায় আছে। আমরা যখন হানা দিই তখন ঘুমাচ্ছিল। তাকে ডেকে তুলে শার্টের কলার চেপে ধরি। এ সময় সে শার্ট খুলে হাতের কছে থাকা বড় স্টিলের চামচ দিয়ে আমার হাতে আঘাত করে। আমি তখন তার লুঙ্গি টেনে ধরে হাতকড়া পরানোর চেষ্টা করি। সে লুঙ্গি খুলে শো-কেসের উপর থাকা বঁটি নিয়ে আমাদের মারতে উদ্যত হয়। তার মা-বাবা, ভাই-ভাবী আমাদের বাধা দেয়ার ফাঁকে উলঙ্গ অবস্থায় সে বেরিয়ে যায় বঁটি হাতে। আমরা ধাওয়া করতে করতে এক পর্যায়ে তাকে খড়ের গাদায় লুকানো অবস্থায় শনাক্ত করি। কাছে যেতেই আবারো বঁটি হাতে কোপ দেয়ার চেষ্টা করে। এই ফাঁকে আবারো ছুটতে থাকে। এক পর্যায়ে ঝাঁপ দেয় ভেলুয়ার দিঘিতে। ১০/১২ মিনিট তার সাথে কথা বলি। সে ভাবছিল, ধরা পড়লে আর রক্ষা নেই। পরে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় তাকে পানি থেকে তোলা হয়। তাকে ডবলমুরিং থানায় সোপর্দ করা হয়। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ নিয়ে তার বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা দাঁড়াল ২৪।
কে এই পিচ্চি সাহাবুদ্দিন? পাহাড়তলী সিগন্যাল কলোনির রুস্তম ড্রাইভারের ছেলে সাহাবুদ্দিন। আগে তারা বিআরটিসি জামতলা বস্তিতে থাকত। নগরীতে বাসে বা টেম্পোতে প্যাসেঞ্জার বেশে পকেট কাটার একটা গ্রুপের নেতৃত্ব দেয়। দৈনিক ভিত্তিতে চোরদের বেতন দেওয়া হয়। তার গ্রুপের সদস্যরা হলো গাল কাটা আল-আমিন, তাজু, নুরু, সুমন, বাপ্পী, আবছার, জামাল ওরফে জাম্বু, ফয়সাল, মানিক, কালা আজম, রইব্ব্যা, আনোয়ার, ইদু, বেলু প্রমুখ।
সাহাবুদ্দিন জানায়, ভিড় বেশি থাকলে কাজে সফলতাও আসে বেশি। একেকটি গ্রুপের সদস্য সংখ্যা পাঁচ থেকে সাতজন। কর্মদক্ষতা, অভিজ্ঞতা, পেশাদারিত্ব যার যত বেশি, মোবাইল চুরির মূল দায়িত্ব থাকে তার ওপর। এরা মিস্ত্রি নামে পরিচিত। অন্যরা পরিচিত হেলপার হিসেবে। মিস্ত্রি ছাড়া বাকিদের দায়িত্ব থাকে ভিড়ের মাঝে চাপ সৃষ্টি করা। এতে মিস্ত্রির পক্ষে মোবাইল চুরি করাটা সহজ হয়। একটি মোবাইল সেট হাতিয়ে নিতে দুই-তিন মিনিট লাগে।
মোবাইল নেওয়ার কৌশল প্রসঙ্গে সাহাবুদ্দিন পুলিশকে জানায়, একজন যাত্রীকে ধাক্কা দিয়ে জটলার সৃষ্টি করে। আরেকজন পকেটের নিচ থেকে হালকাভাবে ঘষতে ঘষতে মোবাইলটি উপরের দিকে নিয়ে আসে। তারপর হুট করে নিয়ে পাশে থাকা আরেকজনকে দিয়ে দেয়। সে আরেকজনকে দেয়। এভাবে মোবাইলটি পার হয়ে যায়। এ সময় যদি কেউ ধরা পড়ে তাকে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য তিন-চারজন কাজ করে।
মোবাইল চুরির স্পটগুলো হলো টাইগারপাস থেকে নিউ মার্কেট, কাজির দেউড়ি থেকে নিউ মার্কেট, ষোলশহর ২ নম্বর গেট থেকে জিইসি মোড়, বহদ্দারহাট থেকে বাস টার্মিনাল, চকবাজার-মতিঝর্ণা, আগ্রাবাদ থেকে টাইগারপাস, দেওয়ানহাট থেকে বারিক বিল্ডিং, বারিক বিল্ডিং থেকে পতেঙ্গা বিচ, আগ্রাবাদ থেকে কর্নেল হাট ও সাগরিকা পয়েন্ট। মোবাইলগুলো স্টেশন রোডের চোরাই মার্কেট এবং তামাকুমন্ডি লেইনের মোবাইল মার্কেটে বিক্রি করা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ১০ বছর পর কমার্স কলেজ ছাত্রলীগের নতুন কমিটি
পরবর্তী নিবন্ধএকদিনের ব্যবধানে আরো দুই মৃত্যু