অর্থ আত্মসাৎ ও নথিপত্র সংরক্ষণ না করার প্রবণতা বাড়ছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) রাজস্ব বিভাগের কোনো কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর। প্রয়োজনীয় নথিপত্র সংরক্ষণ না করার মাধ্যমে ‘দুর্নীতি ও অনিয়ম’ আড়ালের চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। অবশ্য মাঝেমধ্যে বিষয়গুলো জানাজানি হলে চসিক কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেয় দোষীদের বিরুদ্ধে। এরকম গত ২২ দিনে অর্থ আত্মসাৎ করায় একজনকে বহিষ্কার ও নথিপত্র সংরক্ষণ না করায় ছয় কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নোটিশ দেয়া হয়। এরমধ্যে সর্বশেষ গত মঙ্গলবার কর কর্মকর্তা শাহ্ আলমসহ পাঁচজনের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চসিকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শাখাগুলোর একটি রাজস্ব বিভাগ। গৃহকর ও ট্রেড লাইসেন্সসহ নিজস্ব আয়ের খাতগুলোর অধিকাংশই বিভাগটির নিয়ন্ত্রণে। কাঙ্খিত রাজস্ব আদায় না হলে এর প্রভাব পড়ে নগর উন্নয়ন কার্যক্রমে। তাই বিভাগটির কার্যক্রমে অধিক বেশি স্বচ্ছতা থাকা জরুরি। অথচ উক্ত বিভাগের বিভিন্ন সময় নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত চসিকের বর্তমান পর্ষদের প্রথম সাধারণ সভায় ২৫ নং রামপুর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুস সবুর লিটনও এমন অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, যারা হোল্ডিং ট্যাঙ আদায় করে তারা পাঁচ হাজার টাকা আদায় করলে অনেক সময় দুই হাজার টাকা জমা করে বলে অভিযোগ আছে। অর্থাৎ যা আদায় করে তার চেয়ে কম জমা দেয়। এঅনিয়ম রোধ এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিতে কাউন্সিলরদের সঙ্গে কর আদায়কারীদের সমন্বয় করার প্রস্তাব দেন তিনি।
পাঁচজনের কাছে ব্যাখ্যা : নথিপত্র সংরক্ষণ না করায় গত মঙ্গলবার যাদের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে তারা হচ্ছেন-রাজস্ব সার্কেলের কর কর্মকর্তা (কর) শাহ্ আলম ও উপ-কর কর্মকর্তা (কর) মঞ্জুর উদ্দিন চৌধুরী। বাকিরা হচ্ছেন- রাজস্ব সার্কেল-৭ এর উপ-কর কর্মকর্তা (লাইসেন্স) আবুল কালাম, রাজস্ব সার্কেল-২ এর কম্পিউটার অপারেটর রাবেতা খানম ও রাজস্ব সার্কেল-৩ এর সহকারী শাহনেওয়াজ বেগম চৌধুরী। এরা সবাই আগে রাজস্ব সার্কেল-১ এ একই পদে কর্মরত ছিলেন।
ব্যাখ্যা প্রদানে তাদের তিন কার্যদিবস সময় দিয়েছেন প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. মুফিদুল আলম। এ সংক্রান্ত নোটিশে বলা হয়, রাজস্ব সার্কেল-১ এর শুলকবহর ওয়ার্ডে ২০১২ সালের ২১ জুনের পূর্বের হোল্ডিং আপিল প্রসিডিং খাতা, নিষ্পত্তিকৃত আপিল ফরম, ২০০৮-২০০৯ অর্থ বছরের পূর্বের ফিল্ড বই, অ্যাসেসমেন্ট লেজার, ট্যাঙ পেয়ার রেজিস্টার বই সার্কেল অফিসে সংরক্ষিত নাই। দায়িত্ব হস্তান্তরকালে পরবর্তী দায়িত্বপ্রাপ্তগণকে চার্জ লিস্টের মাধ্যমে হস্তান্তর করেন নি ওই সময়ে কর্মরত পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারী।
বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. মুফিদুল আলম দৈনিক আজাদীকে বলেন, রাজস্ব শাখার অডিট আপত্তির কারণে ব্যাখ্যা চেয়েছি। জবাব পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শো-কজ : গত ২ ফেব্রুয়ারি রাজস্ব সার্কেল-৫ এর কর কর্মকর্তা (লাইসেন্স) মো. ইউসুফকে শোকজ করা হয়েছিল। তাকে দেয়া নোটিশে বলা হয়, সার্কেল-৮ কর কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ১৪টি আপিল শুনানির কার্যদিবসের মধ্যে ৪৩৩টি রেজিস্টার লিপিবদ্ধ হলেও পাওয়া যায় ৩৮৯ টি ফরম। ৪৪টি ফরম পাওয়া যায় নি। আপিল নিষ্পত্তিকৃত তিনটি ফরমে ও প্রসিডিং খাতায় রিভিও বোর্ড এর সদস্যবৃন্দের নিকট থেকে স্বাক্ষর গ্রহণ করা হয়নি।’ এখানে স্বাক্ষর না থাকায় রিভিউ বোর্ডের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা আজাদীকে বলেন, বিভিন্ন সময় সার্কেলে কর্মরত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে রিভিউ বোর্ড দেখিয়ে আপিল নিষ্পত্তির অভিযোগ থাকে। এক্ষেত্রে ভবন মালিকের সাথে যোগসাজশ করে মনগড়া পৌরকর ধার্য করার অভিযোগ পাওয়া যায়। নথিপত্র পাওয়া না যাওয়া সেটার ইঙ্গিত দেয়। বিষয়গুলো অধিকতর তদন্ত হওয়া উচিত।
অর্থ আত্মসাৎ ও বহিষ্কার
গত ২ ফেব্রুয়ারি রাজস্ব সার্কেল-০৭ এর অনুমতিপত্র পরিদর্শক আক্তার হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ট্রেড লাইসেন্স বাবদ দুই লাখ ২০ হাজার ৭৭০ টাকা আদায় করলেও কর্পোরেশনের তহবিলে জমা করেছে মাত্র সাড়ে ৫১ হাজার টাকা। অর্থাৎ এক লাখ ৬৯ হাজার ৭৭০ টাকা জমা করেন নি। আত্মসাৎকৃত অর্থ অবিলম্বে সিটি কর্পোরেশন তহবিলে জমা দেয়ার নির্দেশনা দিয়ে অফিস আদেশ জারি করেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক।