আগামীতে বাংলাদেশেই নিজেদের জন্য যুদ্ধ বিমান তৈরির আকাঙ্ক্ষার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমাদের একটা আকাঙ্ক্ষা আছে, বাংলাদেশেই যুদ্ধ বিমান তৈরি করতে চাই। কাজেই এর ওপর গবেষণা করা এবং আমাদের আকাশসীমা আমরা নিজেরাও যেন রক্ষা করতে পারি সেভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি। গতকাল মঙ্গলবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যশোরে বিমান বাহিনীর ঘাঁটি বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানে বিমান বাহিনীর ১১ এবং ২১ স্কোয়াড্রনকে ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। খবর বাংলানিউজের।
বিমান বাহিনীর আধুনিকায়নে সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণে উৎকর্ষ আনতে বিমান বাহিনী একাডেমির জন্য এই ঘাঁটিতে নির্মাণ করা হয়েছে আন্তর্জাতিক মানের ‘বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স’। মহাকাশ গবেষণা, দেশের বিমান বাহিনী এবং বেসামরিক বিমানকে দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে আমরা প্রতিষ্ঠা করেছি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়। যেটা লালমনিরহাটে প্রতিষ্ঠা হবে। ইতোমধ্যে তার কাজ আমরা শুরু করেছি। এসব কার্যক্রম বিমান বাহিনীর সক্ষমতা বহুলাংশে বাড়িয়েছে। আজ বাংলাদেশ বিমান বাহিনী দেশে ও দেশের বাইরে এক সম্মানজনক অবস্থায় উন্নীত হয়েছে। তাছাড়া যেহেতু জাতিসংঘ মিশনেও বাংলাদেশ ভূমিকা রাখছে, সেক্ষেত্রে বিমান বাহিনীকে আমরা উপযুক্ত করে গড়ে তুলছি। বিমান বাহিনীর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সঙ্গে আমরা অ্যারোনটিক্যাল সেন্টার নির্মাণ করছি। আর আমাদের একটা আকাক্সক্ষা আছে, বাংলাদেশেই আমরা আমাদের যুদ্ধ বিমান তৈরি করব। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা এবং প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে যাওয়ার পদক্ষেপ আমরা নিয়েছি। ইনশাল্লাহ আমরা এ ব্যাপারে সাফল্য অর্জন করব বলে বিশ্বাস করি।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার সুদূরপ্রসারী কর্মপরিকল্পনা ও দূরদৃষ্টি সামনে রেখে সশস্ত্র বাহিনীকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করার জন্য ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’ প্রণয়ন করি। ইতোমধ্যে আমরা বিমান বাহিনীতে সংযোজন করেছি মিগ-২৯ সহ বিভিন্ন ধরনের ফাইটার বিমান, সর্বাধুনিক অ্যাভিওনিক্স সমৃদ্ধ পরিবহন বিমান, ইউটিলিটি হেলিকপ্টার, যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ বিমান, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এয়ার ডিফেন্স র্যাডার, ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র, নতুন নতুন ঘাঁটি, ইউনিট ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছি।
বিমান সেনাদের সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১১ স্কোয়াড্রনকে বৈমানিকদের মৌলিক উড্ডয়ন প্রশিক্ষণ এবং ২১ স্কোয়াড্রনকে দেশের আকাশসীমা প্রতিরক্ষায় অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ আজ স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক ‘জাতীয় পতাকা’ দেওয়া হলো।
তিনি বলেন, জাতীয় পতাকা পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করা যে কোনো ইউনিটের জন্য একটি বিরল সম্মান ও গৌরবের বিষয়। তিনি বলেন, ২১ স্কোয়াড্রন বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সম্মুখসারির নিবেদিত আক্রমণাত্মক স্কোয়াড্রন। এই স্কোয়াড্রন এফটি-৬ এবং এ-৫ যুদ্ধবিমান পরিচালনার মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে। পরবর্তীকালে ২০১৫ সালে এই স্কোয়াড্রনে সংযুক্ত হয় চতুর্থ প্রজন্মের ইয়াক-১৩০ কম্ব্যাট ট্রেইনার বিমান, যা ২১ স্কোয়াড্রনকে আকাশসীমা প্রতিরক্ষার দায়িত্বে আরও শক্তিশালী ও নির্ভরযোগ্য করে তোলে। বর্তমানে এই স্কোয়াড্রন আমাদের আকাশ প্রতিরক্ষা শনাক্তকরণ অঞ্চলের সর্বোচ্চ শেষ সীমানায় পর্যবেক্ষণ মিশন পরিচালনা করে, যা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।