পাহাড়তলী বধ্যভূমি প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে না?

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ at ৬:৪৯ পূর্বাহ্ণ

মাত্র সাত কোটি টাকার অভাবে চট্টগ্রামে বধ্যভূমি সংরক্ষণ এবং মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ প্রকল্প হিমাগারে পড়ে রয়েছে। চট্টগ্রামে বিভিন্ন এলাকায় ১১১টি বধ্যভূমিতে পাকবাহিনী নির্মমভাবে বাঙালি নিধন করেছে। তবে একটি বধ্যভূমিও সংরক্ষিত হয়নি। পাহাড়তলীতে একটি বধ্যভূমিকে ঘিরে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না। পাহাড়তলী বধ্যভূমি রক্ষা পরিষদ আগামী ২৬ মার্চের মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণসহ প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু করার দাবি জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, চট্টগ্রামে ১১১টি বধ্যভূমিতে পাক হানাদার বাহিনী নির্মমভাবে বাঙালি নিধন করেছে। ‘প্রামাণ্য দলিল মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম’ শীর্ষক গ্রন্থে দাগ, খতিয়ান নম্বরসহ বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত উল্লেখ করে এসব বধ্যভূমি চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু উক্ত বধ্যভূমিগুলোর একটিও সংরক্ষিত হয়নি।
১৯৯৯ সালে প্রজন্ম ৭১-এর সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রায়ের বাজার ও পাহাড়তলী বধ্যভূমিসহ সকল বধ্যভূমি সংরক্ষণের জন্য সকল জেলা প্রশাসককে নির্দেশ প্রদান করেছিলেন। ওই নির্দেশের প্রেক্ষিতে ঢাকার রায়ের বাজার বধ্যভূমি সংরক্ষণ হয়। তবে চট্টগ্রামের পাহাড়তলী বধ্যভূমিকে ঘিরে গ্রহণ করা প্রকল্প ঝুলে আছে। পাহাড়তলী বধ্যভূমি সংরক্ষণের প্রক্রিয়া হিসেবে জমি অধিগ্রহণে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে ৯৮ লাখ টাকা চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক বরাবরে প্রেরণ করা হয়। বধ্যভূমি সংরক্ষণ পরিষদ জানিয়েছে, নানা ষড়যন্ত্রে সেই উদ্যোগ আলোর মুখ দেখেনি। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের ওই প্রকল্পটি গ্রহণ করেছে। অজ্ঞাত কারণে তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না।
পরিষদের পক্ষ থেকে বলা হয়, চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধের কোনো যাদুঘর নেই। পাহাড়তলী বধ্যভূমিকে ঘিরে ওখানে একটি যাদুঘর নির্মাণ করা যায়। একই সাথে লাইট অ্যান্ড সাউন্ডের মাধ্যমে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসও প্রজন্মকে জানানোর ব্যবস্থা করার সুযোগ রয়েছে। একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের মাধ্যমে পাহাড়তলী বধ্যভূমিতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষিত হলে জাতি উপকৃত হবে। মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস পরবর্তী প্রজন্মকে জানানোর জন্য এই মুজিববর্ষে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করার দাবি জানানো হয়েছে।
বধ্যভূমি সংরক্ষণ পরিষদের নেতা প্রফেসর ড. গাজী সালেহ উদ্দিন বলেন, চট্টগ্রামের ১১১টি বধ্যভূমির একটিও সংরক্ষিত হয়নি। ১৯৯৮ সালে প্রধানমন্ত্রী পাহাড়তলী বধ্যভূমি সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। দশমিক ৭৫ একর জমি রয়েছে এই বধ্যভূমিতে। আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মানুষেরা এক হয়ে অনেকদিন ধরে চেষ্টা করছি। কিন্তু নানা ষড়যন্ত্রের কারণে বধ্যভূমি সংরক্ষিত হয়নি।
তিনি বলেন, আমরা কোনো স্মৃতিই সংরক্ষণ করতে পারিনি। আমাদের শহীদেরা রক্ত দিয়েছেন। তাদের রক্তের চিহ্ন মুছে যাচ্ছে। স্মৃতি সংরক্ষণ করতে পারিনি বলে মানুষ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানে না। বধ্যভূমি সংরক্ষিত হয়নি বলে ইতিহাস মুছে যাচ্ছে। আগামী প্রজন্মকে প্রকৃত ইতিহাস জানানোর স্বার্থে পাহাড়তলীতে বধ্যভূমি সংরক্ষণ এবং মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ জরুরি।
নাট্যজন প্রদীপ দেওয়ানজি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুছে ফেলার সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছে পাহাড়তলী বধ্যভূমি সংরক্ষণ এবং মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ প্রকল্প। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সুরক্ষিত হবে। ইতিহাস সংরক্ষণের স্বার্থে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই।
সাংস্কৃতিক সংগঠক রাশেদ হাসান বলেন, ২০১৪ সালে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু ওই প্রকল্প আর এগোয়নি। পৌনে সাত কোটি টাকা প্রাক্কলন ব্যয় ধরা হয়েছে। জমিটি উদ্ধার করে মাত্র সাত কোটি টাকায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করলে চট্টগ্রামের আগামী প্রজন্ম উপকৃত হবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোস্তফা কামাল যাত্রা বলেন, বধ্যভূমিগুলোতে হাজার হাজার বাঙালিকে হত্যা করা হয়েছে। আগামী ২৬ মার্চের আগেই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরার জন্য এই প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। বহুমুখী ষড়যন্ত্রের কবল থেকে এই প্রকল্পটিকে উদ্ধার করে বাস্তবায়নের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
সংস্কৃতিকর্মী শরীফ চৌহান বলেন, আমরা নানাভাবে চেষ্টা করছি। দুয়ারে দুয়ারে ধর্না দিচ্ছি। এখানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করার পদক্ষেপ না নিলে তীব্র আন্দোলন করব। আন্দোলনের মাধ্যমেই দাবি আদায় করব। এই দাবির মাধ্যমে চট্টগ্রামের এই প্রজন্মের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআড়াই বছর পর আমীর খসরুকে ফের দুদকে তলব
পরবর্তী নিবন্ধ১ বছর পর ফের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু