গত মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় হালদার ভাঙন রোধে ১০৫ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। আজাদীতে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, বৈঠকে ১৯ হাজার ৮৪৪ কোটি ৫৭ টাকা ব্যয়ের ৯টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ‘চট্টগ্রাম জেলাধীন হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলায় হালদা নদীর উভয় তীরের ভাঙন হতে বিভিন্ন এলাকা রক্ষা’ প্রকল্পও অনুমোদন দেওয়া হয়। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ১০৫ কোটি টাকা।
হালদা পাড়ের মানুষেরা নানা নামে ডাকে হালদাকে। কেউ বলে রাক্ষসী হালদা, কেউ বলে সর্বগ্রাসী হালদা। নদীর উৎপত্তি পার্বত্য অঞ্চলে হওয়ায় বর্ষায় তার গর্জনে কপাল পুড়ে দুই পাড়ের হাজার হাজার হালদা পাড়ের বাসিন্দাদের। এখন সেই হালদা নদীর ভাঙন রোধে নেওয়া হচ্ছে নানা উদ্যোগ। বসেছে সিসি ব্লক। বন্যা প্রতিরোধে নির্মিত হচ্ছে বেড়িবাঁধ। বন্যায় চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয় এলাকাবাসী।
জানা গেছে, ফটিকছড়ির সমিতিরহাট ইউনিয়নের শত বছরের পুরনো আরবান আলী হাজিপাড়া জামে মসজিদটি হালদা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। পাহাড়ি ঢলের কারণে হালদা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে প্রবাহিত হওয়ায় পুরো সমিতিরহাট ইউনিয়নের ছোট বড় একটি রাস্তাও অক্ষত থাকে না। সেই সঙ্গে ওই ইউনিয়নের শতাধিক মাটির ঘর বন্যার পানিতে তলিয়ে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে যায়। এছাড়া প্রমত্তা হালদা নদীর প্রায় ১০ কি.মি এলাকাজুড়ে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে।
নানা পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যায়, হালদার ভাঙনে নদীতে বিলীন হাজারো পরিবারের বসতঘর হুমকির মুখে। রাউজানের পশ্চিম গহিরা বদুর ঘোনা, মঘাশাস্ত্রি বড়ুয়া পাড়া, অংকুরী ঘোনা, দক্ষিণ গহিরার কাজী পাড়া, পশ্চিম নদীমপুর বিনাজুরী, কাগতিয়া, কাসেম নগর, আজিমের ঘাট, মগদাই, পশ্চিম আবুর খীল, খলিফার ঘোনা, উরকির চর, হারপাড়া, সাকর্দা, দেওয়ানজি ঘাট, মোকামী পাড়া, কচুখাইন, গনি মিয়ার হাট এলাকার হাজারো পরিবারের বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে যায়। হালদা নদীর ভাঙনে রাউজানের উরকির চর ইউনিয়নের সাকর্দা মৌজার পুরো অংশ এবং কাগতিয়া কাসেমনগর এলাকায় শতাধিক বসতঘর বিলীন হয়ে যায়। আরো সহস্রাধিক বসতঘর হুমকির মুখে রয়েছে। হালদা নদীর ভাঙনে বসতবাড়ি হারানো পরিবারের সদস্যরা হাটহাজারীর বিভিন্ন এলাকায় বসবাস শুরু করেছেন। হালদা নদীর ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধ ধসে পড়ে নতুন করে নদীর ভাঙন বৃদ্ধি পেয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, হালদা নদীতে তীব্র স্রোতের ফলে প্রতি বছর এ সময় ভাঙন শুরু হয়। এতে উপজেলার বিনাজুরী ইউনিয়নের পশ্চিম বিনাজুরীর কয়েকটি গ্রাম একটু একটু করে নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বসতভিটা হারিয়ে সড়কের পাশে মানবেতর জীবনযাপন করছে ক্ষতিগ্রস্ত অনেক পরিবার। পাশাপাশি ভাঙনে ফসলি জমি বিলীন হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এ অঞ্চলের কৃষিনির্ভর অর্থনীতি।
বিনাজুরীর এক বাসিন্দা বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকটি দফতরে ভাঙন রোধে এলাকার চেয়ারম্যানের মাধ্যমে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবে ভাঙন রোধে এখনও ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রতিবেদক জানান, হালদা নদীর সমিতিরহাট ইউনিয়নের দক্ষিণ নিচিন্তাপুর, ধুরুং খালের মুখ, পেলা গাজির বাড়ি, আকবর শাহ বাড়ি, ছাদেক নগর, আরবানীয়া হালদা ব্রিজ এলাকায় দেখা গেছে বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ অনেক শেষ হয়েছে। সমিতিরহাট হাজির ঘাটা, রোসাংগীরি ইউনিয়নের শীলের হাট, নাজিরহাট পৌরসভার ফরহাদাবাদ, কুম্ভারপাড় এলাকায় সিসি ব্লক স্থাপনের বেশ কিছু কাজ শেষ হয়েছে। সুন্দরপুর, আজিমপুর, সুয়াবিল, হারুয়ালছড়ি, পাইন্দং, ভূজপুর, নারায়ণহাট, হাটহাজারীর ফরহাদাবাদ এলাকায় এবং ধুরুং খালের ফটিকছড়ি পৌরসভার বিভিন্ন অংশে বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও সিসি ব্লক স্থাপনের কাজ চলছে।
হালদা নদীর ভাঙন আর হালদার পুরাতন সেতু এলাকার বড় দুঃখ। একনেক সভায় হালদার ভাঙন রোধে ১০৫ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দিয়ে আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে যে অন্তত এই বিষয়ে একটা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই।