তিন দিনের ছুটিতে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে দেশি-বিদেশি পর্যটকের ঢল নেমেছে। ছুটি কাটাতে পরিবার ও নিকটজনদের নিয়ে তারা ছুটছেন টেকনাফ সেন্টমার্টিন দ্বীপে। রাত্রিকালীন সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগ করতে নদী-সাগর পাড়ি দিয়ে হাজারো পর্যটক এখন সেন্টমার্টিনে অবস্থান করছেন। ইতিমধ্যে দ্বীপের শতাধিক আবাসিক হোটেল এবং কটেজসমূহ পর্যটকে ভরে গেছে।
হোটেল মালিকরা জানান, লকডাউন পরবর্তী সময়ে ছুটির সুযোগে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের ফাঁকে আগে থেকেই ৯০% পর্যটক সেন্টমার্টিনের হোটেল এবং কটেজে বুকিং দিয়েছেন। হোটেলে কক্ষ না পেয়ে হাজারো পর্যটক সৈকতের বালিয়াড়িতে রাত কাটাবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
মিরপুর থেকে ভ্রমণে আসা পর্যটক নাফিস ইকবাল জানান, সেন্টমার্টিন দ্বীপে এসে রাতযাপন করার শখ ছিল দীর্ঘ দিনের। আনন্দ উদযাপন করতে পরিবার নিয়ে প্রবাল দ্বীপে ছুটে এসেছি।
সেন্টমার্টিন হোটেল কটেজ মালিক সমিতি ও দ্বীপ আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মুজিবুর রহমান জানান, ৩ দিনের টানা ছুটিতে দ্বীপ পর্যটকে ভরে গেছে। পর্যটকেরা প্রতিবছর এ সময় সেন্টমার্টিনে আসেন। এবছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। দ্বীপের হোটেল-কটেজ মালিক সমিতি সবসময়ই তাদের সর্বোচ্চ সেবা প্রদানে বদ্ধপরিকর।
সেন্টমার্টিন ইউপি চেয়ারম্যান নুর আহমদ জানান, ৩ দিনের ছুটিতে ৭/৮ হাজারেরও বেশি পর্যটক দ্বীপে এসেছেন। অনেকে হোটেল-কটেজে জায়গা না পেয়ে ইতিমধ্যে তাঁবু, প্যান্ডেল ভাড়া নিয়েছেন। তারা নিকটজনদের নিয়ে সৈকতের বালিয়াডিতে রাত কাটাবেন। সন্ধ্যার পর থেকে প্যান্ডেল নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
সেন্টমার্টিন পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পুলিশ পরিদর্শক মো. মুস্তাকিম হোসাইন জানান, পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা দিতে পুলিশ কাজ করছে। পর্যটকরা যেন অবাধে চলাচল করতে পারেন সেই জন্য তিন স্তরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পর্যটকদের স্বার্থে বিচে মোটরসাইকেল চালানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
আমাদের বান্দরবান প্রতিনিধি জানান, পাহাড়ি জেলা বান্দরবান মুখরিত হয়ে উঠেছে পর্যটকদের পদচারণায়। দর্শনীয় স্থানগুলোতে উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে টানা তিনদিনের সরকারি ছুটিতে। আবাসিক হোটেল, মোটেল, রেস্ট হাউজ, গেস্ট হাউজ কোথাও ফাঁকা নেই কক্ষ। এতে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মাচাং ঘরগুলোকে থাকার বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে বেছে নিচ্ছেন পর্যটকদের অনেকে। অর্থের বিনিময়ে রাত্রী যাপন, থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা এবং ট্যুরিস্ট গাইড হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর অনেকে।
পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, সরকারি ছুটি মানেই বান্দরবান জেলায় পর্যটকদের বাড়তি চাপ। একুশে ফেব্রুয়ারিসহ টানা তিন দিনের ছুটিতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রকৃতির নির্মল ছোয়া পেতে ভ্রমণপিপাসু পর্যটকরা ভিড় জমিয়েছেন এখানে। পর্যটনের অফুরন্ত সম্ভাবনাময় বান্দরবানে প্রকৃতির নির্মল ছোয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন তারা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, জেলা সদরের মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্সে লেকের উপর নির্মিত দুটি ঝুলন্ত সেতু, মিনি সাফারি পার্ক ও চিড়িয়াখানা ঘুরে বেড়াচ্ছেন হাজারো পর্যটক। পাহাড়ের চূড়ায় নির্মিত নীলাচল পর্যটন স্পটের টাওয়ারে দাঁড়িয়ে পাহাড়ের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করছেন তারা। বাংলার দার্জিলিং খ্যাত চিম্বুক পাহাড়, নীল দিগন্ত, শীতা পাহাড় এবং সেনা নিয়ন্ত্রিত স্বপ্নীল নীলগিরি পর্যটন স্পটে গিয়ে পাহাড়ের নৈসর্গিক সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন পর্যটকরা। অসংখ্য পাহাড়ের মধ্যখানে গড়ে তোলা পর্যটন স্পটগুলো যেন সাদা মেঘে ভাসছে।
অপরদিকে শৈলপ্রপাত, ফারুকপাড়া ঝর্ণা, রুপালী ঝর্ণার স্বচ্ছ পানিতে গাঁ ভাসাচ্ছেন বেড়াতে আসা অনেকে। পাথরের ফাঁকে ফাঁকে ঝর্ণার স্বচ্ছ পানি বয়ে চলেছে অবিরাম ধারায়। পাশে বসেই পাহাড়িদের কোমর তাঁতে তৈরি কাপড় বিক্রি করছেন তরুণীরা। এছাড়াও বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের তীর্থ স্থান বৌদ্ধ ধাতু স্বর্ণ জাদি, রামাজাদি, প্রান্তিকলেক এবং সাঙ্গু নদীতে নৌকা নিয়েও ছুটে বেড়াচ্ছে পর্যটকেরা।
বেড়াতে আসা পর্যটক রিদোয়ান, সাব্বির, মারিয়া, নাদিয়া বলেন, অসংখ্য সৌন্দর্যের সংমিশ্রণে গড়া প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর জেলা বান্দরবান। পাহাড় থেকে ঝরে পড়া ঝর্ণা, প্রাকৃতিক লেক, ঝুলন্ত সেতু এবং সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ। পর্যটকের মন ভোলানোর সমস্ত আয়োজনই রয়েছে এ জেলায়। তবে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, আবাসন এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার সংকট এখনো রয়ে গেছে।
জেলা আবাসিক হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, করোনা ভাইরাসের প্রভাবে দেশের পর্যটন শিল্পে ধস নেমেছে। তবে একুশে ফেব্রুয়ারিসহ টানা ৩ দিনের সরকারি ছুটিতে দৃশ্যপট যেন অনেকটাই বদলে গেল। আগামী দুদিন আবাসিক হোটেলগুলোতে কোথাও কোনো রুম খালি নেই। পর্যটকদের স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে প্রয়োজনীয় সেবা প্রদানে কাজ করছে মালিক সমিতি।
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি জানান, তিন দিনের লম্বা ছুটি পেয়ে দেশের বিভিন্ন পর্যটন স্পটে ছুটছে পর্যটকরা। খাগড়াছড়ির সবকটি পর্যটন কেন্দ্রে এখন ভিড়। খাগড়ছড়ির আলুটিলা রহস্যময় সুড়ঙ্গ, রিছাং ঝরণা, ঝুলন্ত ব্রিজসহ বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র ও রাঙামাটির সাজেক ভ্যালিতে যাচ্ছে পর্যটকরা। খাগড়াছড়ি ও সাজেক ভ্যালির অধিকাংশ হোটেল-কটেজ বুকিং হয়ে গেছে। করোনার কারণে বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ কম থাকায় দেশের জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রে ভিড় বাড়ছে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, খাগড়াছড়িতে আসা ৯০ শতাংশ পর্যটকের গন্তব্য রাঙামাটির সাজেক ভ্যালি। যাতায়াত সুবিধার কারণে পর্যটকরা খাগড়াছড়ি হয়ে সাজেকে যাতায়াত করেন। তাদের আগমনে মুখরিত রুইলুই ও কংলাক পাড়া। অধিকাংশ হোটেল ও কটেজ বুকিং হয়ে গেছে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৮শ ফুট উঁচুতে অবস্থিত কংলাক পাড়া থেকে দেখা মিলছে মিজোরামের পাহাড় এবং মেঘ। প্রকৃতির সৌন্দর্যে মুগ্ধ পর্যটকরা।
সাজেকে ভ্যালিতে কয়েকটি রিসোর্ট মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পর্যটকের চাপ থাকবে বেশি। এই ক’দিন কোনো রিসোর্ট ফাঁকা নেই। অনেক পর্যটক বাধ্য হয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের ঘরে থাকছে।
খাগড়াছড়ির একটি অভিজাত আবাসিক হোটেলের ব্যবস্থাপক প্রান্ত ত্রিপুরা জানান, তিন দিনের ছুটিতে খাগড়াছড়িতে বিপুল পর্যটক সমাগম হয়েছে। আগামী তিন দিন হোটেলের কোনো রুম ফাঁকা নেই। খাগড়াছড়ি জেলা শহরের সবকটি রিসোর্টের একই অবস্থা। অনেক পর্যটক রুম না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
জেলা ট্যুরিস্ট পুলিশের ইনচার্জ সন্তোষ ধামাই জানান, পর্যটকদের নিরাপত্তায় প্রতিটি পর্যটন কেন্দ্রে নিয়োজিত থাকবে ট্যুরিস্ট পুলিশ। এছাড়া সাজেকগামী পর্যটকদের ভ্রমণে সহায়তা করছে তারা। পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিতের জন্য আমরা সবধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি।