দেশে করোনাভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচি শুরুর পর ইতোমধ্যে ১ শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রধান বৈজ্ঞানিক কমকর্তা ড. এএসএম আলমগীর জানিয়েছেন, যেসব দেশে টিকা দেওয়া হচ্ছে তার মধ্যে ১৫টির বেশি দেশ মোট জনসংখ্যার এক শতাংশের বেশি টিকার আওতায় আনতে পেরেছে। বাংলাদেশ তার মধ্যে একটি। ইসরায়েল এক শতাংশের চেয়েও কিছু বেশি মানুষকে টিকা দিয়েছে কিন্তু তাদের জনসংখ্যা অনেক কম। এছাড়া যুক্তরাজ্য ২৩ শতাংশ মানুষকে টিকা দিতে পেরেছে। আবার আমাদের আগে টিকা কার্যক্রম শুরু করার পরেও জনসংখ্যা বেশি বিধায় ভারতেও ওই টার্গেটে যেতে পারেনি। গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম আয়োজিত ‘করোনা সংক্রমণের গতিবিধি ও টিকা’ শীর্ষক সংলাপে এই তথ্য তিনি তুলে ধরেন। খবর বিডিনিউজ ও বাংলানিউজের।
গত ২৭ জানুয়ারি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের একজন নার্সকে টিকা দিয়ে বাংলাদেশে টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর পর ৭ ফেব্রুয়ারি শুরু হয় সারা দেশে গণ টিকাদান। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মেডিকেলে ইনফরমেশন সার্ভিসেস বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশে ১৮ লাখ ৪৮ হাজার ৩১৩ জন টিকা নিয়েছেন। এর মধ্যে বৃহস্পতিবারই টিকা নিয়েছেন ২ লাখ ৬১ হাজার ৯৪৫ জন। সংলাপে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করে ডা. এএসএম আলমগীর বলেন, মানুষকে টিকা দিতে উৎসাহিত করতে হবে। পজেটিভ বিষয়টি বারবার তুলে ধরতে হবে। এখন মানুষ দলে দলে টিকা নিচ্ছে। টিকা নেওয়ার এই গতিটা ধরে রাখতে হবে, মানুষ যেন টিকা নেয়। দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার গত এক মাসের বেশি সময় ধরে ৫ শতাংশের নিচে আছে। তাতে একটি স্বস্তির পরিবেশ থাকলেও সতর্কতায় ঢিল না দিতে সবাইকে তাগিদ দেন ডা. এএসএম আলমগীর। এর মানে এই নয় যে সংক্রমণ কমে গেছে। বিশ্বের অনেক দেশেই সংক্রমণের হার কমার পরে আবার বেড়েছে। তাই আমাদের ঢিলেমি দিলে চলবে না। টিকা নেওয়ার পাশাপাশি মাস্ক পড়া এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে টিকা মৃত্যু কমাবে। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে টিকা একটি অন্যতম পন্থা, একমাত্র পন্থা নয়।
প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহও একই মত পোষণ করেন। তার ভাষায়, সংক্রমণ কমে এসেছে, তা স্বস্তির খবর। কিন্তু আত্মতুষ্টিতে ভোগার সুযোগ নেই। এটা বৈশ্বিক সমস্যা, আমাদের দেশে কমলেও অনেক দেশে এখনও সংক্রমণের হার বেশি। সারা পৃথিবীর সব দেশ ভালো না থাকলে আমরাও ভালো থাকব না। যেসব দেশে সংক্রমণ আছে তাদের অনেকে আমাদের দেশে আসবে। তারা যেন ভাইরাসটি ছড়িয়ে না দেয় সেদিকে নজর রাখতে হবে। টিকা দেওয়ার পাশাপাশি মাস্কও পরতে হবে। দুটি মাস্ক পরলে তা আরো বেশি কার্যকর বলে বলা হচ্ছে।
সংক্রমণ কমলেও বাংলাদেশ এখনও ঝুঁকিমুক্ত হয়নি মন্তব্য করে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ও করোনাভাইরাস প্রতিরোধে জাতীয় কারিগরি পরামর্শ কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সালান বলেন, জনসমাগম বন্ধ রাখতে সরকারকে আরও উদ্যোগী হতে হবে।
জনসমাবেশ আমরা দেখতে পাচ্ছি বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে। সেটা রাজনৈতিক, ধর্মীয়, সামাজিক- সেই জায়গাতে আমরা বন্ধ করতে পারছি না। এই জায়গাটায় সরকারকে জোর দিতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকেও এসব জনসমাগম বন্ধে চাপ সৃষ্টি, আইনের প্রয়োগ বা অনুরোধ করতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জনস্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ডা. আবু জামিল ফয়সাল বলেন, করোনাভাইরাসের টিকার কর্মযজ্ঞকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। সমাজপতি, জনপ্রতিনিধি, ধর্মীয় নেতাদের টিকাদান কার্যক্রমে এগিয়ে আসতে হবে। নারীরা এগিয়ে আসছে না, গরীব, অসচ্ছল, ভাসমান মানুষ এখনও টিকা নিচ্ছে না। এদের কাছে টিকা পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য জনপ্রতিনিধি, ধর্মীয় নেতা এবং সমাজপতিদের একটা ভূমিকা রাখতে হবে।
ফোরামের সভাপতি তৌফিক মারুফের সঞ্চালনায় এ সংলাপে অন্যদের মধ্যে একুশে পদকপ্রাপ্ত অনুজীব বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. সমীর কুমার সাহা বক্তব্য দেন। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বিএইচআরএফের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ রাব্বি।