২০০৮ সাল থেকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট-সমাঝোতা করে নির্বাচনে অংশ নেওয়া জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন, তারা এখন আর কোনো দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ নেই। জাতীয় পার্টি কারও দয়া-ভিক্ষা নয়, সম্মানের জন্য রাজনীতি করছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। খবর বিডিনিউজের।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর বনানীতে দলটির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে যৌথ সভায় জিএম কাদের একথা বলেন।
সংসদের বিরোধী দলীয় উপনেতা কাদের বলেন, “জাতীয় পার্টি মহাজোটে নেই, জাতীয় পার্টি কোনো জোটেই নেই। জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগ বা বিএনপির বি-টিম নয়। নির্বাচনের সময় কিছু আসনে সমঝোতা হয়েছে, তবে বেশিরভাগ আসনেই জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা শেষ সময় পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে লড়াই করেছেন। জাতীয় পার্টি নিজস্ব রাজনীতি নিয়ে মাঠে আছে। নিজস্ব স্বকীয়তা নিয়ে রাজনীতির মাঠে এগিয়ে যাচ্ছে জাতীয় পার্টি।”
২০০৮ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে ভিড়লেও নানা বিষয় নিয়ে অসন্তোষ দলটির বরাবরই ছিল। তারপরও বিএনপির বর্জনের মধ্যে অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচনে আসন সমঝোতা করেই অংশ নিয়েছিল জাতীয় পার্টি। পরে সরকারের অংশ নেয়ার পাশাপাশি সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসনও নিয়েছিল। দলের ভেতরে ও বাইরে এ নিয়ে সমালোচনায় ছিল জাতীয় পার্টি।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে এককভাবে ভোট করার ঘোষণা দিয়েছিলেন দলটির প্রয়াত চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। কিন্তু বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়ার পর মহাজোটেই থেকে যায় তারা, যদিও আসন সংখ্যা নিয়ে অসন্তোষ ছিল তাদের।
সংসদে ২৬ জন সদস্য নিয়ে বিরোধী দলের আসনে রয়েছে জাপা। তবে বর্তমান সংসদে বিএনপির সংসদ সদস্যরা, তাদের বিরোধী দল হিসেবে মেনে নিতে নারাজ।
জি এম কাদের বলেন, “ দেশ ও মানুষের অধিকার প্রশ্নে জাতীয় পার্টি ধান বিরোধী দলের ভূমিকায় কখনোই আপস করছে না। জাতীয় পার্টি কারও দয়া বা ভিক্ষার রাজনীতি করে না। কারো করুণা নয়, সম্মানের জন্য রাজনীতি করছে জাতীয় পার্টি।”
তিনি বলেন, “১৯৯১ সালের পর থেকে দেশে সাংবিধানিকভাবেই একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। এতে আনুষ্ঠানিকভাবেই দেশে বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে। যারাই সরকার গঠন করে তারা আইনের ঊর্ধে থেকে দুর্নীতি ও লুটপাটে জড়িত। উপজেলা পর্যায়ের নেতারাও বিদেশে হাজার কোটি টাকা পাচার করছে। পেশি শক্তি, কালো টাকা আর প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে কলুষিত করছে নির্বাচন ব্যবস্থা। একটি দলের প্রার্থীরাই নির্বাচনে জিতছে, তাই রাজনীতির মাঠে অন্য দলগুলোর টিকে থাকাই দুরূহ হয়ে পড়েছে।”
জাপা চেয়ারম্যান আরও বলেন, “রাষ্ট্রক্ষমতায় না থাকলে রাজনৈতিক দলগুলো দুর্বল হতে থাকে। আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে আমাদের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করেছে। তার আগে আওয়ামী লীগ দুর্বল থাকলেও এখন রাষ্ট্রক্ষমতায় থেকে সুপার পাওয়ার হয়ে গেছে। বিএনপিও অনেকদিন রাষ্ট্র ক্ষমতার বাইরে থেকে অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে। কিন্তু জাতীয় পার্টি আরও বেশি সময় পর্যন্ত রাষ্ট্রক্ষমতার বাইরে থাকার কারণে দুর্বল হয়েছে। তাই এখনই রাজনীতির মাঠে জাতীয় পার্টি ঘুরে দাঁড়াবে।”
ওই যৌথসভায় দলটির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বর্তমান নির্বাচন নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “ দেশে মানুষের ভোটের অধিকার নেই। দেশে নির্বাচনের নামে প্রহসন চলছে, তাই ভোটের প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ নেই। দুর্নীতি, দুঃশাসন আর লুটপাটের রাজনীতির বিরুদ্ধে জাতীয় পার্টির সংগ্রাম চলবে।”
জি এম কাদেরের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন মহিলা পার্টির সভাপতি সালমা ইসলাম, কৃষক পার্টির সভাপতি সাহিদুর রহমান টেপা, জাতীয় মটর শ্রমিক পার্টির সভাপতি মোস্তাকুর রহমান মোস্তাক, যুব সংহতির আহ্বায়ক এইচ এম শাহরিয়ার আসিফ, স্বেচ্ছাসেবক পার্টি সাধারণ সম্পাদক মো. বেলাল হোসেন, সাংস্কৃতিক পার্টির সদস্য সচিব আলাউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।