মহানগরসহ চট্টগ্রাম জেলায় বন্ধ থাকা কেন্দ্রগুলোতে করোনার টিকার অনলাইন রেজিস্ট্রেশন পুনরায় চালু হয়েছে। গতকাল বুধবার সকাল থেকে এসব কেন্দ্রে অনলাইন রেজিস্ট্রেশন করতে পারছেন অগ্রাধিকার তালিকাভুক্ত সম্মুখ যোদ্ধাসহ চল্লিশোর্ধ সাধারণ মানুষ। বন্ধ থাকা কেন্দ্রগুলোতে পুনরায় অনলাইন রেজিস্ট্রেশন চালুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) করোনা ভ্যাকসিন প্রদান কমিটির সদস্য সচিব ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী ও চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি।
এসএমএস ছাড়া টিকা নয় : রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হলেই এখন আর আগের মতো কেন্দ্রে গিয়ে টিকা নেয়ার সুযোগ থাকছে না। রেজিস্ট্রেশনের পর নিবন্ধনধারীর মোবাইলে এসএমএস-এর মাধ্যমে টিকাদানের তারিখ ও সময় জানিয়ে দেয়া হবে। এই এসএমএস পাওয়ার পরই নির্ধারিত তারিখে কেন্দ্রে গিয়ে টিকা নিতে হবে। এর আগে টিকা নেয়ার সুযোগ থাকছে না। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীর, চসিক করোনা ভ্যাকসিন প্রদান কমিটির সদস্য সচিব ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী ও চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তারা বলছেন- প্রতিটি কেন্দ্রের বিপরীতে দৈনিক টিকা প্রদানের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। নির্ধারিত সীমার সমান সংখ্যক নিবন্ধনধারীকে এসএমএস-এর মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হবে। তারা গিয়ে কেন্দ্রে টিকা নেবেন। এর বাইরে টিকা গ্রহণের সুযোগ থাকছে না।
চমেক হাসপাতালে দৈনিক দেড় হাজার এবং চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে দৈনিক ১২শ জনকে টিকা প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানান চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীর ও চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি।
অনলাইন রেজিস্ট্রেশন ফের চালু : সারাদেশের পাশাপাশি ৭ ফেব্রুয়ারি করোনার টিকাদান কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় চট্টগ্রামেও। উদ্বোধনের কয়েকদিন পর থেকেই টিকা নিতে আগ্রহী মানুষের চাপ সামলাতে হিমশিম অবস্থায় পড়তে হয় স্বাস্থ্য বিভাগকে। চাপ বেড়ে যাওয়ায় চট্টগ্রাম মহানগরের সবকয়টি কেন্দ্রের বিপরীতে অনলাইন নিবন্ধন সাময়িক বন্ধ রাখা হয়। সিংহ ভাগ উপজেলার কেন্দ্রেও অনলাইন নিবন্ধনের বন্ধ রাখা হয়। ফলে মহানগরসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় টিকা নিতে আগ্রহী মানুষ অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করার সুযোগ পাননি। অবশেষে মঙ্গলবার রাতের পর চট্টগ্রাম মহানগরসহ বিভিন্ন উপজেলার কেন্দ্রগুলোতে অনলাইন রেজিস্ট্রেশন ফের চালু করা হয়েছে। গতকাল বুধবার সকাল থেকেই টিকা নিতে আগ্রহীরা অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে পারছেন। মহানগরের কেন্দ্রে টিকা নিতে গতকাল অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছেন বলে অনেকেই জানিয়েছেন।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে- পুনরায় রেজিস্ট্রেশন চালু হওয়ায় শেষ ২৪ ঘণ্টায় (বুধবার দুপুর পর্যন্ত) ২১ হাজার ৪৪৯ জন নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন চট্টগ্রামে। এর মধ্যে মহানগরে নিবন্ধন করেছেন ১৪ হাজার ৫১৮ জন। আর উপজেলা পর্যায়ে নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন ৬ হাজার ৯৩১ জন। সবমিলিয়ে এ পর্যন্ত মোট ১ লাখ ৯৮ হাজার ৭১৬ জন নিবন্ধন করেছেন চট্টগ্রামে। এর মধ্যে বুধবার পর্যন্ত টিকা নিয়েছেন ১ লাখ ৩০ হাজার ১১৪ জন। হিসেবে মোট নিবন্ধনধারীর ৬৫ ভাগ এরই মধ্যে টিকা গ্রহণ করেছেন।
সংরক্ষিত কেন্দ্রে নিবন্ধনধারীদের টিকা গ্রহনে জটিলতা : কেন্দ্র হিসেবে সিএমএইচ (সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল), বিমান বাহিনী, নৌ-বাহিনীর হাসপাতালসমূহ সংশ্লিষ্ট বাহিনীর সদস্যদের জন্য সংরক্ষিত মর্মে অনলাইন নিবন্ধনের সুরক্ষা প্লাটফর্মে স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করা আছে। অর্থাৎ টিকা গ্রহণে কেন্দ্র হিসেবে এসব কেন্দ্র জনসাধারণকে নির্বাচন না করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এরপরও অনেকে এসব কেন্দ্র নির্বাচন করে অনলাইন রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছেন। সংরক্ষিত এসব কেন্দ্রে অনলাইন নিবন্ধনকারীরা করোনার টিকা গ্রহণে বেকায়দায় পড়েছেন। এসব কেন্দ্রে জনসাধারণের টিকাদান কার্যক্রম এখনো চালু করা হয়নি। আর ভিন্ন কেন্দ্রে টিকাদান এরইমধ্যে বন্ধ করে দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। নিবন্ধিত কেন্দ্রেই টিকাদান নিশ্চিতে স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। মঙ্গলবার চট্টগ্রামে এসে এমন নির্দেশনা দিয়ে যান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। অনলাইনে নিবন্ধিত কেন্দ্রের বাইরে ভিন্ন কেন্দ্রে গিয়ে টিকা নিলে পরবর্তীতে টিকা সনদ পেতে জটিলতা দেখা দিতে পারে। এই জটিলতা এড়াতে নিবন্ধিত কেন্দ্রেই টিকাদান নিশ্চিতে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনার প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার থেকে নিবন্ধিত কেন্দ্রের বাইরে অন্য কোনো কেন্দ্রে টিকা না দেয়ার কথা জানান চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও চসিক করোনা ভ্যাকসিন প্রদান কমিটির সদস্য সচিব ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী। তিনি বলেন, যিনি যে কেন্দ্রের জন্য অনলাইনে নিবন্ধন করেছেন, এখন থেকে তিনি সে কেন্দ্রেই টিকা নেবেন। ভিন্ন কোনো কেন্দ্রে টিকা নেয়া যাবে না। সকলকে নিবন্ধিত স্ব-স্ব কেন্দ্রে গিয়ে টিকা গ্রহণের অনুরোধ জানান তিনি।
এমন নির্দেশনায় সংরক্ষিত কেন্দ্রগুলোতে নিবন্ধনকারীরা টিকা গ্রহণে বেকায়দায় পড়েছেন। এমন অনেককেই টিকা নেয়ার আশায় গতকাল নগরের এ কেন্দ্র- ও কেন্দ্র ঘুরতে দেখা গেছে। কিন্তু হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন তারা। সংরক্ষিত কেন্দ্রগুলোতে নিবন্ধনকারীরা টিকা নিতে সমস্যায় পড়েছেন স্বীকার করে এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাথে আলাপ করে নির্দেশনা চাওয়া হবে বলে জানান চসিক করোনা ভ্যাকসিন প্রদান কমিটির সদস্য সচিব ও চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতর চৌধুরী। আর সংরক্ষিত কেন্দ্রগুলোতে নিবন্ধনধারীদের আপাতত অপেক্ষায় থাকতে হবে জানিয়ে সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন- অনলাইন প্লাটফর্মে এ বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা উল্লেখ করা আছে। এরপরও নিবন্ধনের সময় অনেকেই ভুল করেছেন। তাদের আপাতত অপেক্ষায় থাকতে হবে। পরবর্তীতে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।