বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, স্বাধীনতার ঘোষণা এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রথম বিদ্রোহ চট্টগ্রাম থেকেই হয়েছে। তাই চট্টগ্রামের ইতিহাস মুক্তিযুদ্ধপূর্ব এবং যুদ্ধকালীন সময়ে অবিস্মরণীয়। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে নীরব ছিলেন না। এদেশের সেনাবাহিনীকে সংগঠিত করে তিনি পাক সেনাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করেছেন চট্টগ্রাম থেকেই। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, ‘আজ স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে এসেও তাঁর অবদানকে খাটো করা হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করা হচ্ছে। ভোটাধিকার ও গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করতে হচ্ছে এদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষকে। মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া হচ্ছে নির্লজ্জভাবে। গতকাল সোমবার দুপুরে চট্টগ্রাম ক্লাবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের উদ্যোগে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন মিডিয়া কমিটির আয়োজনে চট্টগ্রামের সাংবাদিকদের নিয়ে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি উপরোক্ত কথাগুলো বলেছেন। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তরুণ প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতে আগামী মার্চ মাস থেকে শুরু হওয়া বছরব্যাপী কর্মসূচি কেন্দ্র থেকে ঘোষণা করা হবে বলে জানান তিনি। এক্ষেত্রে জিয়াউর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত চট্টগ্রামের কালুরঘাট এলাকাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, সাবেক মন্ত্রী ও স্বাধীনতা সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন মিডিয়া কমিটির আহবায়ক ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় আমীর খসরু আরো বলেছেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার পরের সরকারের একদলীয় শাসন ব্যবস্থা থেকে দেশকে বের করে নিয়ে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষায় শহীদ জিয়ার অবদান এদেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখা থাকবে।
তিনি বলেন, রাজনীতিবিদরা যখন ইতিহাস রচনা করেন, তখন সেই ইতিহাস হয় প্রপাগান্ডা। একমাত্র ইতিহাসবিদরাই সত্যিকারের ইতিহাস রচনা করতে পারেন। তাই আমি মনে করি যারা ইতিহাসবিদ তারাই প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে সত্যিকারের ইতিহাস পৌঁছে দেবেন। ইতিহাস বিকৃতকারীদের এদেশের আপাম’র জনগণ চিনে গেছেন। তাই ইতিহাসকে বিকৃত করে জনসম্মুখে তুলে ধরে নিজেরাই নিজেদের আসল রূপের বহিঃপ্রকাশ করছেন।
মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন, এদেশের মানুষ স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে আরো অনেক সংগ্রাম করেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় ৬৯ সালের গণ আন্দোলন হয়েছে। স্বাধীনতার আন্দোলন এদেশের কোন একক দল বা ব্যক্তি করেননি। সর্বদলীয় ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে ঢাকাসহ সারাদেশে এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল। ঢাকা শহরসহ সারাদেশের রাজপথে আগুন জ্বলে উঠেছিল একসাথে। মাওলানা ভাষানী, স্যার সরোয়ারদী, শেরে বাংলা একে ফজলুল হকসহ অসংখ্য নেতার অবদান রয়েছে এসব সংগ্রাম ও যুদ্ধের সাথে। একটি যুদ্ধের ইতিহাস একদিনে রচিত হয়নি। তার আগে আরো অনেক ইতিহাস রয়েছে। পরেও রয়েছে অনেক ইতিহাস। কিন্তু এখন স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসসহ সব ইতিহাস ব্ল্যাকআউট করার অপচেষ্টা চলছে। ইতিহাস কখনো মুছে ফেলা যায় না। সত্য ইতিহাস এই প্রজন্মের ইতিহাসবিদরাই রচনা করবেন। দেশের মানুষকে মনে রাখা উচিত দলের চাইতে দেশের ইতিহাস অনেক বড়। তাই সঠিক ইতিহাস মেনেই যেকোন রাজনৈতিক নেতাদের কথা বলা উচিত।
তিনি আরো বলেছেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এখন একটা পাতায় বন্দি হয়ে গেছে। একটি মুক্তিযুদ্ধে একাধিক নায়ক থাকবেন এটাই স্বাভাবিক ইতিহাস। কিন্তু এখন শুধুমাত্র একজন নায়ক। ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে এদেশের সংগ্রামের বীজবপন হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলনের সূত্র ধরেই ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সুবর্ণ জয়ন্তী পালনের মাধ্যমে স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে চায়।
মতবিনিময় সভার শুরুতেই উপস্থিত সাংবাদিকদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন মিডিয়া কমিটির সদস্য সচিব শ্যামা ওবায়েদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধকে একটি দল নিজেদের ইতিহাস বলে দাবি করে আসছেন। এই ইতিহাসের সাথে এদেশের গণমানুষের যে ইতিহাস জড়িয়ে আছে, তা স্বীকার করছেন না এই দলটি। দেশে একদলীয় শাসন কায়েম করে মানুষের কথা বলার মৌলিক অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম বলেছেন, যে কারনে এদেশের মুক্তিযোদ্ধারা প্রাণ দিয়ে, রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছেন, তার সঠিক মর্যাদা পাচ্ছেন না এদেশের মানুষ। মহান মুক্তিযুদ্ধের সম্মুখযোদ্ধা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নাম এই ইতিহাস থেকে মুছে ফেলতে নানা ষড়যন্ত্র চলছে। অথচ শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েই এদেশের মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য তৈরি করেছিলেন।
বিএনপির কেন্দ্রিয় কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দীন বলেছেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে মহান মুক্তিযুদ্ধ একটি কালজয়ী ইতিহাস। আর ইতিহাসের সাথে জড়িয়ে আছেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানসহ অসংখ্য মহানায়ক। বিএনপি স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস জাতি তথা বর্তমান প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতেই সুবর্ণ জয়ন্তী পালনের মাধ্যমে বছরব্যাপী দেশজুড়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে। আর এই আয়োজনকে এগিয়ে নেয়ার জন্য এদেশের কলম সৈনিকরাই কাজ করবে ইনশাআল্লাহ।
মতবিনিময় সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সাবেক রাষ্ট্রদূত ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহবায়ক গোলাম আকবর খন্দকার, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন মিডিয়া কমিটির সদস্য এডভোকেট ফারজানা শারমিন, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আলহাজ্ব আবু সফিয়ান ও সদস্য সচিব মোস্তাক আহমেদ খান।