গতকাল সকালে নগরের ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আয়োজিত সমাবেশে রেজাউল করিম চৌধুরীকে নানা পরামর্শ দিয়েছেন জনপ্রতিনিধি ও সুধীজনরা। চসিক মেয়র হিসাবে দায়িত্বগ্রহণ উপলক্ষে এ সুধী সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
হুইপ সামশুল হক চৌধুরী ঃ সমাবেশে নবনির্বাচিত মেয়রকে মন্ত্রীর মর্যাদা দেয়ার দাবি জানান কয়েকজন বক্তা। এ প্রসঙ্গে হুইপ সামশুল হক চৌধুরী বলেন, কাকে কি পদবী দিবেন তা প্রধানমন্ত্রী ভালো জানেন। দাবি দিবেন না। এসব ওনি পছন্দ করেন না। মেয়রকে খুশি করার করার দরকার নাই। ওনি জনগণের কাছে দায়বদ্ধ। ওনাকে জনতার নেতা ও দক্ষ প্রশাসক হতে হবে। সময়সূচী নির্ধারণ করে জনগণ তথা নগরবাসীকে সময় দেয়ার আহ্বান জানান মেয়রের প্রতি। তিনি বলেন, ‘এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী একজন দক্ষ প্রশাসক ছিলেন, আবার তিনি জনতার নেতাও ছিলেন। এমন একজন নেতা চট্টগ্রামের রাজনীতিতে আর আসবেন কি না, জানি না। মেয়র সাহেবকেও বলবো জনগণ আপনাকে ভোট দিয়েছে, আপনার দায়বদ্ধতা জনগণের কাছে। মহিউদ্দিন চৌধুরীর মতো জনতার নেতা হওয়াটাই আসল।
তিনি আরো বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী সায় দিয়েছেন, বন্দর তার আয় থেকে যদি কমপক্ষে ২০ শতাংশ টাকা দেয় তাহলে সিটি করপোরেশন উন্নয়ন কাজ করতে পারবে। বন্দর উপদেষ্টা কমিটিতে আমরা আছি। প্রয়োজনে আমরা সেখানে সিদ্ধান্ত নিবো। এসময় চট্টগ্রামের স্থানীয় সংসদদের ডেকে মাঝে-মাঝে চা চক্রের আয়োজনের পাশাপাশি পরামর্শ নিতে বলেন তিনি। শামসুল হক বলেন, নতুন মেয়র বুদ্ধিমান ও কৌশলী। তিনি সফল হবেন এটাই প্রত্যাশা আমাদের। তিনি মহিলা কাউন্সিলরদেরও উন্নয়ন কাজের সাথে যুক্ত করবেন এটা আশা রাখি।
এমপি নজরুল ইসলাম চৌধুরী ঃ সাংসদ নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, নতুন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী ত্যাগী রাজনীতিক। আমার প্রত্যাশা চট্টগ্রামের স্বার্থে ও উন্নয়নের তাগিদে তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্যদের মাঝে মাঝে ডেকে আলাপ-পরামর্শ করবেন। তিনি মহেশ খাল, চাক্তাই খাল খননের পর এরই দুই খালে ওয়াটারবাস চালু করতে নতুন মেয়রকে পরামর্শ দেন। এতে নগরীর সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি পাবে বলে উল্লেখ করেন।
এমপি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ ঃ সাংসদ মোছলেম উদ্দিন আহমেদ বলেন, অনেকে আছেন যারা ক্ষমতায় গিয়ে কারো পরামর্শ নেয়ার প্রয়োজন মনে করেন না। সিডিএ’র সাবেক সাবেক চেয়ারম্যান আমাদের পরে রাজনীতিতে এসেছেন। কখনো পরামর্শ নেননি। তিনি বলেন, সমন্বয়ের প্রয়োজন আছে। সাংসদরা মেয়রকে যোগান দিতে পারবো। চট্টগ্রামের স্বার্থে মেয়রকে সহযোগিতা করবো। আমরা রেজাউল করিম চৌধুরীকে নয়, চট্টগ্রামবাসীকে সহযোগিতা করব। মোহরা এখনো পিছিয়ে আছে উল্লেখ করে বলেন, রিয়াজুদ্দিন বাজার গেলেও অনেকে বলে শহরে যাচ্ছি।
আবদুচ ছালাম ঃ সিডিএ’র সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বলেন, উন্নয়নে মহিউদ্দিন চৌধুরীর মডেল অনুসরণ করলে চট্টগ্রামের মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হবে।
খোরশেদ আলম সুজন ঃ খোরশেদ আলম সুজন বলেন, আইন করে চসিকের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা না গেলে মানুষের আশাগুলো পূরণ হবে না। তিনি শহরকে ব্যবহার করে যেসব সরকারি প্রতিষ্ঠান লাভবান হচ্ছে তাদের কাছ তেকে উপযুক্ত সারচার্জ আদায় করার দাবি জানান। বলেন, নগরবাসী মাত্র ২০ শতাংশ নগরীকে ব্যবহার করে। যে ট্যাঙ একজন সাধারণ নাগরিক দেবে, তা বন্দর দিলে হবে না। ৩০ হাজার ট্রাক নগরীতে ঢোকে প্রতিদিন। তাদের ট্যাঙের আওতায় আনতে হবে।
মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী ঃ সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী মেয়র হওয়ার পরে প্রতিটি আইনি বিষয়ে আমার পরামর্শ নিতেন। ভয় দেখিয়ে উনাকে কখনও দমিয়ে রাখা যায়নি। নতুন মেয়রকেও বলব দুর্নীতি দমন কমিশনকে ভয় করে কাজ করবেন না। অনেক কাজ করতে গেলে মামলার আসামি হতে হবে। তিনি বলেন, চট্টগ্রামবাসী জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি চাই।
এম এ সালাম ঃ চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ সালাম বলেন, চট্টগ্রাম অবহেলার শিকার কথার সাথে আমি একমত না। এখানে যে উন্নয়ন হয়েছে তা অনেক জেলায় হয়নি। সমন্বিতভাবে না হওয়ায় পরিকল্পিতভাবে হচ্ছে না বা দৃশ্যমান হচ্ছে না মনে হচ্ছে। তিনি বলেন, সব উন্নয়ন হলেও মানসিকতার পরিবর্তন আমরা করতে পারিনি। রাস্তাঘাট হলে উন্নতি হয় না, যদি নৈতিকতার উন্নয়ন না হয়। দেশের দ্বিতীয় বড় শহরের নাগরিক ময়লাটা রাস্তায়-নালায় ফেলি, সড়কে দোকান করছি। সমন্বয়ের জন্য মেয়রকে নির্বাহী ক্ষমতা দেওয়ার প্রয়োজন।
মাহবুবুল আলম চৌধুরী ঃ চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম চৌধুরী হকার ব্যবস্থাপনা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, মাদকমুক্ত শহর, কিশোর গ্যাং, ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট নিয়ে কাজ করতে মেয়রের প্রতি আহবান জানান। তিনি স্বল্প, দীর্ঘ ও মধ্য মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণের আহবান জানান।
এছাড়া সমাবেশে বক্তব্য রাখেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কাজী মুহাম্মদ মোজম্মেল হক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. আনোয়ারুল আজিম আরিফ, ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, নগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসিনা মহিউদ্দিন, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ডা. শেখ শফিউল আজম, চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রে সভাপতি প্রকৌশলী প্রবীর কুমার সেন, নবনির্বাচিত কাউন্সিলরদের মধ্যে সাইয়েদ গোলাম হায়দার মিন্টু, বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদের সভাপতি প্রকৌশলী মোহাম্মদ হারুন, চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রদীপ চক্রবর্ত্তী, চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) এর ভাইস চ্যান্সেলর ড. রফিকুল আলম, জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দীন বাবুল, প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, মুক্তিযোদ্ধা মহানগর কমান্ডার মোজাফফর আহাম্মেদ।












