আহমদ শরীফ প্রগতিমনস্ক এবং চিন্তাশীল লেখক ও গবেষক হিসেবে খ্যাতিমান। জীবন ও কর্মে তিনি ছিলেন দৃঢ়চেতা, আপোষহীন এবং সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ একজন ব্যক্তিত্ব। নিজস্ব দর্শন, চিন্তা ও মৌলিকত্বের কারণে একাধারে তিনি ছিলেন আলোচিত, সমালোচিত এবং বিতর্কিত। মৃত্যুর পরও এই ধারা ক্রিয়াশীল। আজ তাঁর ৯৯তম জন্মবার্ষিকী।
আহমদ শরীফের জন্ম ১৯২১ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার সুচক্রদণ্ডী গ্রামে। বিশিষ্ট পুঁথি গবেষক আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ ছিলেন আহমদ শরীফের চাচা। তাঁর জীবন গঠনে চাচার অবদান ছিল অনেকখানি। আহমদ শরীফ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এম.এ ডিগ্রি নেন ১৯৪৪-এ। পেশাগত জীবনের শুরু কলেজে অধ্যাপনার মধ্য দিয়ে। পরবর্তীসময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। এখান থেকেই অর্জন করেন পিএইচ.ডি ডিগ্রি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সুদীর্ঘ তেত্রিশ বছর অধ্যাপনা শেষে দু বছরের জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নজরুল অধ্যাপক হিসেবে অধিষ্ঠিত ছিলেন। বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও ইতিহাস নিয়ে তিনি গবেষণা করেছেন নিরন্তর, লিখেছেনও প্রচুর। সেসব লেখায় উঠে এসেছে এ দেশের সমাজ, ইতিহাস, সংস্কৃতি, দর্শন, ধর্ম, রাজনীতি সহ বিবিধ বিষয়। তাঁর লেখায় খুঁজে পাওয়া যায় যুক্তিনিষ্ঠ, প্রগতিশীল, মানবতাবাদী ও বিজ্ঞানমনস্ক আহমদ শরীফকে। ব্যক্তি জীবনেও তিনি প্রগতিপন্থী ও জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার বিভিন্ন সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন। ধর্মান্ধতা, সামপ্রদায়িকতা আর মৌলবাদের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন সোচ্চার। নিঃশঙ্ক, নিঃস্বার্থ আর মানবহিতৈষী চেতনায় আহমদ শরীফ নিজেই একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছিলেন।
তাঁর অসংখ্য গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য: ‘সাহিত্য ও সংস্কৃতি চিন্তা’, ‘বাঙালি ও বাঙলা’, ‘মধ্যযুগের সাহিত্যে সমাজ ও সংস্কৃতির রূপ’, ‘কালের দর্পণে স্বদেশ’, ‘মানবতা ও গণমুক্তি’, ‘স্বদেশ অন্বেষা’, ‘বিশ শতকে বাঙালি’, ‘মৌলবাদ’, ‘বাঙলার বিপ্লবী পটভূমি’ প্রভৃতি।
১৯৯৯ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারি আহমদ শরীফ প্রয়াত হন। তাঁর মরদেহ তিনি চিকিৎসাবিজ্ঞানের ছাত্রদের জন্য উৎসর্গ করে গিয়েছিলেন।