কয়েক মাসের মধ্যেই শিশুদের টিকা পাওয়ার আশা

| শনিবার , ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ at ৬:৩৬ পূর্বাহ্ণ

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বিশ্বজুড়ে প্রাপ্তবয়স্কদের টিকা দেওয়া শুরু হলেও শিশুদের টিকার বিষয়ে এখনও কোনো ঘোষণা আসেনি। শিশু সন্তানদের নিয়ে বাবা-মায়ের দুশ্চিন্তার অবসানে তাদের জন্য টিকার বিষয়ে কাজ চলছে বলে খবর দিয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমস। গতকাল শুক্রবার তাদের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের দুই টিকা উৎপাদক কোম্পানি ফাইজার ও মডার্না এরইমধ্যে টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে ১২ বছর এবং তার বেশি বয়সী শিশুদের অন্তর্ভুক্ত করেছে। আগামী গ্রীষ্ম নাগাদ (১ জুন থেকে ৩১ অগাস্ট) এই পরীক্ষার ফল পাওয়ার আশা করছে তারা। খবর বিডিনিউজের।
এই বয়সী শিশুদের ওপর টিকার কার্যকারিতার ওপর ভিত্তি করে কোম্পানি দুটো আরও ছোট শিশুদের ওপর তার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন সাধারণত ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ডেটা পর্যালোচনায় কয়েক সপ্তাহ সময় নিয়ে থাকে, সব ঠিক থাকলে পরপরই টিকার অনুমোদন দেয় তারা।
করোনাভাইরাসের টিকা নিয়ে আসা অন্য তিনটি কোম্পানি জনসন অ্যান্ড জনসন, নোভাভ্যাক্স ও অ্যাস্ট্রাজেনেকাও শিশুদের ওপর তাদের টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগের পরিকল্পনা করেছে। তবে তারা এখনও বেশ খানিকটা পিছিয়ে রয়েছে।
গবেষকরা প্রথমে প্রাপ্তবয়স্কদের ওপর কোনো ওষুধ বা টিকার পরীক্ষা করলে পরে তারা বয়সের সীমা তুলতে থাকেন। ভিন্ন বয়সীদের ক্ষেত্রে তারা দেখেন ডোজে কোনো পরিবর্তন আনতে হবে কি না বা অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয় কি না।
ফাইজার ও মডার্না উভয় টিকার ক্ষেত্রেই ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে ৫০ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে যুক্ত করা হয়েছিল। বড় সংখ্যায় মানুষকে এই পরীক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করার কারণ ছিল যারা টিকা নিচ্ছেন, আর যারা প্ল্যাসেবো (রোগ নিরাময়ে কার্যকারিতাহীন ওষুধ জাতীয় জিনিস) নিচ্ছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্যগুলো কী কী দেখা দিচ্ছে তা বোঝার জন্যে। তবে শিশুদের করোনাভাইরাসে গুরুতর অসুস্থ হওয়ার ঘটনা খুব বেশি না হওয়ায় তাদের ক্ষেত্রে ওই ধরনের পরীক্ষা যুক্তিসঙ্গত হবে না। কারণ এতে টিকার প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য অনেককে পরীক্ষার আওতায় আনতে হয়। তার বদলে কোম্পানিগুলো টিকা দেওয়া শিশুদের ওপর নজর রাখছে যে, তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হচ্ছে কি না, যেটা তাদের কোভিড-১৯ থেকে রক্ষা করবে। ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকা গত ডিসেম্বরে ১৬ বছর এবং তার বেশি বয়সীদের ওপর প্রয়োগের অনুমোদন পায়। এরপরে কোম্পানিটি বয়সে তরুণদের ওপর তাদের ট্রায়াল চালিয়ে গেছে, ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সী দুই হাজার ২৫৯ জনের ওপর তারা এই পরীক্ষা চালাচ্ছে। আগামী গ্রীষ্ম নাগাদ এই পরীক্ষার ফল পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ফাইজারের মুখপাত্র কেয়ান্না গজভিনি বলেন, ১২ বছরের কম বয়সীদের টিকার ক্ষেত্রে নতুন স্টাডি এবং নতুন ফর্মুলা বা ডোজ শিডিউল দরকার হবে। এ পরীক্ষা বছরের শেষ দিকে শুরু হতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, ১২ বছরের বেশি বয়সীদের ওপর পরীক্ষার ফল আসার পরই এই পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হবে।
গত ডিসেম্বরেই অনুমোদন পাওয়া মডার্নার টিকাও শিশুদের ওপর পরীক্ষামূলক প্রয়োগের একই পথে রয়েছে। অনুমোদনের মাসেই তারা ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের ওপর পরীক্ষা শুরু করে। এই বয়সী তিন হাজার জনের ওপর তারা পরীক্ষা চালাচ্ছে। এ বছর মাঝামাঝিতেই পরীক্ষার ফল পাওয়ার আশা করছে কোম্পানিটি। এই ট্রায়ালের ফলের ওপর ভিত্তি করে মডার্না বছরের শেষ দিকে ৬ থেকে ১১ বছর বয়সী শিশুদের ওপর টিকার পরীক্ষা চালাতে চায়। এসব ট্রায়ালে শিশুদের ওপর টিকা প্রয়োগে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয় কি না সে বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে। এছাড়া অভিভাবকরা যেসব বিষয় নিয়ে বেশি উদ্বেগে থাকেন, তা প্রশমনের চেষ্টা করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপিঠা-পুলির একদিন
পরবর্তী নিবন্ধবঙ্গবন্ধুর সমাধিতে চসিক মেয়রের শ্রদ্ধা নিবেদন