সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বে আলোচিত বিষয়, ‘বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাস’। যা সমগ্র বিশ্বকে তছনছ করে দিয়েছে। অস্ত্রবিহীন এ যুদ্ধে মানব সভ্যতা আজ হুমকির মুখে। এ মহামারীর কারণে মানব সভ্যতা থমকে গেছে। ২০১৯ এর ডিসেম্বরে চীনের হুপোই প্রদেশের উহান নগরীতে করোনাভাইরাস প্রথম চিহ্নিত হয়। এ রোগে সাম্প্রতিক সময়ের তথ্যনুযায়ী বিশ্বে ১০.৬ কোটি লোক আক্রান্ত হয় এবং ২৩.৩ লাখ লোক মৃত্যুবরণ করে। ৫.৯৪ কোটি লোক এ মহামারী হতে সুস্থ হয়ে ওঠে। বাংলাদেশের সরকারি তথ্যনুযায়ী আক্রান্তের সংখ্যা ৫.৩৮ লাখ, তার মধ্যে ৮২৩৭ জন মৃত্যুবরণ করেছে এবং প্রায় ৪.৮৪ লাখ সুস্থ হয়েছে। কঠিন এ সময়ে দুঃসাহসিক ও চ্যালেঞ্জিং নেতৃত্বের মাধ্যমে এবং ক্যারেশমেটিক চিন্তা ও পরিকল্পনায় এ মহামারীকে মোকাবেলা করছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর মেধা, প্রজ্ঞা ও সঠিক সময়ে সঠিক পরিকল্পনা ও নির্দেশনার মাধ্যমে। আজকে বিশ্বে মুষ্টিমেয় যে ক’টি দেশ করোনা মহামারী প্রতিশেধক টিকা পেয়েছে সর্বাগ্রে এবং কিনেছে তার মধ্যে প্রথম সারিতেই বাংলাদেশের অবস্থান। আর এর প্রধান কৃতিত্ব সাধারণ মানুষের আশা ও ভরসার স্থল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার।
করোনা মহামারীকালীন মানুষের মনে এক প্রকার শঙ্কা কাজ করেছে। ভ্যাকসিন তৈরি হবে কি হবে না? হলে কাজ করবে কি করবে না? কাজ করলে বাংলাদেশে আসবে কি আসবে না? এমনি হাজারো প্রশ্নের সম্মুখীন ছিল পুরো দেশ। সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ইতিমধ্যে ৭ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে শুরু হয়েছে টিকাদান কর্মসূচি। দ্বিমতের কোন অবকাশ নেই, যে এত বিশাল কর্মযজ্ঞ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করা মোটেই সহজ নয়। করোনা মহামারী তথা কোভিড-১৯ দেশে সংক্রমণের মাত্র ১১ মাসের মাথায় দেশে টিকা দেয়া শুরু হয়ে গেছে।
নির্ধারিত সময়ে দেশের টাকায় কিনা তিন কোটি ডোজ করোনার টিকার প্রথম চালান, ৫০ লাখ ডোজ টিকা ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউট থেকে এসেছে। এর আগে ভারত সরকারের উপহার হিসেবে এসেছে ২০ লাখ ডোজ টিকা। বাংলাদেশের ক্রয়কৃত টিকার বাকি ৫টি চালান আসবে জুন মাসের মধ্যে। ২৭ জানুয়ারি বুধবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র নার্স রুনু ভেরেনিকা কান্তাকে টিকাদানের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন টিকাদান কর্মসূচি।
টিকাদান বা ভ্যাকসিন কর্মসূচির সূচনার মধ্য দিয়ে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ আরও একধাপ এগিয়ে গেল। একই সঙ্গে টিকার মাধ্যমে করোনা মহামারী মোকাবেলায় বৈশ্বিক প্রচেষ্টায় যুক্ত হলো বাংলাদেশ। ঢাকা ও চট্টগ্রামে এবং অন্যান্য জেলার প্রাপ্ত তথ্যনুযায়ী টিকা গ্রহীতা সকলেই সুস্থ রয়েছেন। আমার বন্ধু বান্ধব পরিচিত অনেকে ইতিমধ্যে টিকা গ্রহণ করেছেন। এখনো পর্যন্ত টিকা যারা গ্রহণ করেছেন তাদের পক্ষ হতে কোনরূপ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সংবাদ পাওয়া যায়নি, যা একটি শুভ সংবাদ বটে। সরকারের পক্ষে হতে টিকা নিয়ে যাতে কোন ভীতি বা বিভ্রান্ত ছড়ানো না হয় সে দিকেও লক্ষ্য রাখা হচ্ছে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ইতিপূর্বে জাতিসংঘ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে করোনার টিকা বৈশ্বিক সম্পদ হিসেবে ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছেন। উল্লেখ্য যে, ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউটে উৎপাদিত টিকা মূলত যুক্তরাজ্যের অঙফোর্ড ও ব্রিটিশ সুইডিশ কোম্পানি এ্যাস্ট্রাজেনেফার যৌথ গবেষণার ফসল। সম্প্রতি যুক্তরাজ্য, ভারত ও অন্যান্য দেশ এ টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। বাংলাদেশও এ টিকা পেয়েছে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে। বিস্তারিত পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বাংলাদেশ অঙফোর্ডের সহযোগিতায় বিশ্বের বৃহত্তম টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউটের সঙ্গে নভেম্বর মাসে টিকা সরবরাহের জন্য চুক্তি করেন। চুক্তি অনুযায়ী সেরাম ইন্সটিটিউট বাংলাদেশে জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ হতে ৬ মাসের মধ্যে ৩ কোটি ডোজ টিকা সরবরাহ করবেন।
দেশের জনগণের জন্য সরকারের আন্তরিকতা এবং জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা সরকার করোনার টিকা আমদানিতে যে প্রচেষ্টা নিয়েছে তা সফল হয়েছে। আজ দেশে টিকা গ্রহণের মহাউৎসব চলছে। জনগণের মাঝে টিকা নিয়ে উৎসাহ দেখা দিয়েছে যা খুবই আশাব্যঞ্জক। সত্যিকারভাবে এসবের কৃতিত্ব যদি কাউকে এককভাবে দিতে হয় তা দিতে হবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে। কোভিড নিয়ন্ত্রণে এটি প্রধানমন্ত্রীর সাফল্য।
আজ দেশে মহামারী রুখে দেয়ার জন্য উৎসবমুখর পরিবেশে করোনার টিকা প্রয়োগ শুরু হয়েছে। একযোগে দেশের সকল জেলায় টিকা প্রয়োগ দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় দেশ হিসেবে বাংলাদেশে শুরু হয়েছে। দেশ বিরোধী সংগঠন সমূহ বিরোধীতার খাতিরে বিরোধীতাকারীদের সকল অপপ্রচারকে এবং বিভ্রান্তিকে ভুল প্রমাণিত করে এবং সাধারণ মানুষের মন হতে টিকা ভীতি দূর করার জন্য মন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি, সাংসদ সদস্য, সচিব সহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছাড়াও রাজনৈতিক নেতারা সর্বাগ্রে ভ্যাকসিন গ্রহণ করছেন। নির্ভয়ে এ টিকা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিশিষ্ট জনেরা।
সারা বিশ্বে ২০২০ এর শুরুতে করোনা ভাইরাস আঘাত হানলেও গতবছর মার্চ হতে দেশে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এরপর থেকে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও করোনার বিরুদ্ধে লড়াই শুরু হয়। বিশেষজ্ঞরা ধারণা দেন যে কেবল টিকাই এই ভাইরাসকে রুখে দিতে পারে। বিশ্বের ধনী দেশগুলো করোনার টিকার অগ্রিম অর্ডার দিয়ে গবেষণা এবং টিকা উন্নয়নে সহায়তা করে। সে সময়ে কোন তৃতীয় বিশ্বের দেশের জন্য এভাবে অগ্রিম দিয়ে ঝুঁকি নেয়া কঠিন হলেও দেশের জন্য এবং দেশের মানুষের জন্য অনন্তপ্রাণ মানুষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই ঝুঁকি নিয়েছিলেন।
১৭ কোটি মানুষের জন্য ৩ কোটি ডোজ টিকা চাহিদার এক ক্ষুদ্র অংশ মেটাতে পারবে। চাহিদার বৃহদাংশ মেটানোর জন্য সরকার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দেশের মানুষকে করোনা ভাইরাসের মরণছোবল থেকে রক্ষার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের লক্ষ্য হলো ১৭ কোটি মানুষকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিরাপদ ও সফল টিকা প্রয়োগ। এখানে এনিয়ে রাজনীতির কোন সুযোগ নেই। টিকার কোন রাজনৈতিক পরিচয় নেই।
আমরা আশাকরি জনগণের ভাগ্য নিয়ে এবং কঠিন এ সময়ে রাজনীতি না করে বরঞ্চ সকল শ্রেণীর রাজনীতিবিদ্দের মানুষের পাশে দাঁড়ানো উচিত। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষে এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর এ উৎসবমুখর সময়কে দেশ ও দেশের মানুষকে কোভিডমুক্ত ঘোষণা করার প্রত্যয়ে সকলের আন্তরিকতা ও এ বিষয়ে ন্যায়নিষ্ঠতা দেশপ্রেম থাকা প্রয়োজন। বিনামূল্যে এ টিকা নিয়ে যেন কোন দুর্নীতি, অনিয়ম বা ‘নয়-ছয়’ যেন না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।
লেখক : প্রাবন্ধিক; সম্পাদক : শিল্পশৈলী।