চোরাই জ্বালানি সরবরাহের অভিযোগে গত সপ্তাহে চট্টগ্রাম কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের আগ্রাবাদ সার্কেল দুইটি অয়েল ট্যাংকার (জাহাজ) ও দুইটি ট্যাংক লরি (ভাউজার) আটক করে। এসব জাহাজ ও লরিতে পাওয়া জ্বালানির নমুনা পরীক্ষার নিয়ে বেকায়দায় পড়েছে ভ্যাট প্রশাসন। প্রাথমিক পর্যায়ে নমুনা পরীক্ষার জন্য বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডে (ইআরএল) পাঠায় আগ্রাবাদ ভ্যাট অফিস। কিন্তু পরীক্ষার জন্য পাঠানো নমুনা “কোন ধরনের জ্বালানি” তা নিশ্চিত না করার অযুহাত দেখিয়ে এসব নমুনা পরীক্ষা ছাড়াই ফেরত দেয় ইআরএল। এরপর পরীক্ষার জন্য চট্টগ্রাম কাস্টমস ল্যাবে পাঠানো হয় এসব নমুনা।
জানা যায়, গত সপ্তাহে দুইটি অয়েল ট্যাংকার (জাহাজ) থেকে ট্যাংক লরিতে করে অপরিশোধিত জ্বালানি অবৈধভাবে খালাস করার সময় নগরীর বাংলাবাজার ঘাট এলাকা থেকে নদীতে অবস্থান করা “ওটি মোহছেন আউলিয়া-৩” এবং “ওটি ওশেন কুইন” এবং ঘাটে জ্বালানি ভর্তি দুইটি ট্যাংক লরি “নারায়ণনগঞ্জ- ঢ-৪১-০০৭৫” এবং “ নোয়াখালী- ঢ-৪১-০০২৫” আটক করে চট্টগ্রাম কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কর্তৃপক্ষ। ট্যাংক লরি দুইটি বর্তমানে সদরঘাটস্থ আগ্রাবাদ ভ্যাট অফিস চত্বরে আটক অবস্থায় রয়েছে।
আগ্রাবাদ ভ্যাট অফিসের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘গণমাধ্যমে কথা বলার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ রয়েছে। মূলত একটি সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট এসব জ্বালানি নিয়ে রাতের আধারে ট্যাংক লরি করে খালাস করছিল। আটক জাহাজ ও ট্যাংক লরির লোকজন এসব জ্বালানি ‘স্লাজ’ বলে দাবি করছিল। কিন্তু আমাদের কাছে তথ্য ছিল, একটি সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে বহির্নোঙর থেকে চোরাই জ্বালানি এনে কর্ণফুলীর বিভিন্ন ঘাট দিয়ে লরির মাধ্যমে খালাস করে বিক্রি করছিল। এখানে বিভিন্ন সময়ে ক্রুড অয়েলের পাশাপাশি পরিশোধিত জ্বালানিও চোরাইভাবে বিক্রি করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।’
জ্বালানি ব্যবসায় জড়িত বেশ কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৩ সালে সমুদ্রগামী বিদেশি জাহাজে বাংকারিং বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে বেশ কয়েকটি ছোট অয়েল ট্যাংকার চোরাই জ্বালানি পরিবহনে জড়িয়ে পড়ে। এগুলো নিয়ন্ত্রণে কর্ণফুলী নদীকেন্দ্রিক বেশ কয়েকটি সিন্ডিকেট রয়েছে।
এব্যাপারে চট্টগ্রাম কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার আকবর হোসেন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘আমরা অয়েল ট্যাংকার ও দুইটি লরি আটকের পর নমুনা নিয়ে পরীক্ষার জন্য ইস্টার্ন রিফাইনারিতে পাঠিয়েছিলাম। নমুনায় কোন ধরনের জ্বালানি তা চিঠিতে উল্লেখ করে না দেয়ায় তারা নমুনাগুলো ফেরত পাঠিয়েছে। এখন কাস্টমসের ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। পরীক্ষায় প্রতিবেদন পাওয়া গেলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।’ তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘আটক লরিতে কোন ধরনের জ্বালানি রয়েছে, তা নিশ্চিত হলে তো পরীক্ষার প্রয়োজন হতো না। কোন ধরনের জ্বালানি বা পদার্থ তাতো পরীক্ষা করে বিএসটিআই’র স্পেক (স্পেসিফিকেশন) অনুযায়ী নিশ্চিত হওয়ার কথা।’ কমিশনার বলেন, ‘আটক ট্যাংকার ও লরিতে পাওয়া জ্বালানি যদি স্লাজ হয় তাহলে বৈধ কাগজপত্র আছে কিনা পর্যালোচনা করে ছাড় দেয়া হবে। যদি অবৈধ জ্বালানি হয়, তাহলে জড়িতদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
নমুনা ফেরত পাঠানোর বিষয়ে জানতে ইস্টার্ন রিফাইনারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. লোকমানের মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়েও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। পরে বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে কথা হলে ইআরএল’র উপ মহাব্যবস্থাপক (কোয়ালিটি কন্ট্রোল) মো. জাহিদুল ইসলাম দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘আমরা নমুনা ফেরত দিইনি। তবে ভ্যাট কর্তৃপক্ষ নমুনা দেয়ার সময় ওই নমুনা কোন জ্বালানির সেটি উল্লেখ করেননি। মূলত একটি জ্বালানির একাধিক পরীক্ষা রয়েছে। এতে অনির্ধারিত কোন জ্বালানির স্পেক নির্ধারণ দুরূহ। তাই আমরা নমুনাটি কিসের, নির্ধারিত নাম উল্লেখ করার জন্য ভ্যাট কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছি।’