৬ মাসে সঞ্চয়পত্রের রেকর্ড বিক্রি

| বুধবার , ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ at ১১:৪৪ পূর্বাহ্ণ

চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) ৫৫ হাজার কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই ছয় মাসে এত বেশি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়নি। এই অঙ্ক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৬১ শতাংশ অর্থাৎ দেড় গুণেরও বেশি। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে ৩৪ হাজার ২১১ কোটি ৩৪ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল। পুরো অর্থবছরে (জুলাই-জুন) বিক্রি হয়েছিল ৬৭ হাজার ১২৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, গত অর্থবছরে মোট যত টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল তার ৮২ শতাংশ এবার ছয় মাসেই বিক্রি হয়ে গেছে। খবর বিডিনিউজের।
সঞ্চয়পত্র বিক্রির এই উল্লম্ফন অব্যাহত থাকলে চলতি অর্থবছর শেষে মোট বিক্রির পরিমাণ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছেন অর্থনীতির গবেষক আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, ‘ছয় মাসে ৫৫ হাজার কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। বাকি ছয় মাসেও যদি এভাবে বিক্রি বাড়ে, তাহলে বছর শেষে মোট বিক্রি এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।’ মহামারীকালে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি বাড়ার পেছনে দুটি কারণ ভাবছেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান মনসুর। প্রথমত প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের একটি অংশ দিয়ে মানুষ সঞ্চয়পত্র কিনছে। আগেও কিনত, তবে এখন রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়ায় এই অঙ্ক বেড়েছে। দ্বিতীয়ত, অন্য যে কোনো সঞ্চয় প্রকল্পের চেয়ে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার যেহেতু বেশি, সবাই এখানেই বিনিয়োগ করছে।
সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় সরকারের ভবিষ্যৎ ঋণের বোঝা বেড়ে যাবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক জায়েদ বখত। তিনি বলেন, ‘নানা কড়াকড়ি আরোপ করার পরও সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কমছে না। বেশি বিক্রি হলে সরকারকে বিনিয়োগকারীদের বেশি সুদ দিতে হবে। এতে বাজেট ব্যবস্থাপনা ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।’ তাই পরিবার ও পেনশনার সঞ্চয়পত্র ছাড়া অন্য সব সঞ্চয়পত্রের সুদের হার দ্রুত কমানোর পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি।
ব্যাংকগুলোর আমানতের সুদের হার কম এবং পুঁজিবাজারে দীর্ঘ মন্দার কারণে গত কয়েক বছর ধরে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছিল সঞ্চয়পত্র বিক্রি। এতে সরকারের ঋণের বোঝাও অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাচ্ছিল। বিক্রির চাপ কমাতে ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে সঞ্চয়পত্রে মুনাফার উপর উৎসে করের হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। পাশাপাশি জাতীয় পরিচয়পত্র এবং টিআইএন (কর শনাক্তকরণ নম্বর) বাধ্যতামূলক করেছে। তাছাড়া ব্যাংক হিসাব ছাড়া সঞ্চয়পত্র কেনা যায় না।
২০১৯-২০ অর্থবছরে ৬৭ হাজার ১২৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়। এর মধ্যে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল বাবদ ৫২ হাজার ৬৯৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা শোধ করা হয়। এ হিসাবে নিট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়ায় ১৪ হাজার ৪২৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের মোট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৯০ হাজার ৩৪২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। যা ছিল এ যাবৎকালে এক অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি বিক্রি। ওই বছরে সুদ আসল বাবদ বিনিয়োগকারীদের শোধ করা হয় ৪০ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা। নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪৯ হাজার ৯৩৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। ২০২০-২১অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে মোট ৫৪ হাজার ৯৭৬ কোটি ১৯ লাখ সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। সুদ-আসল বাবদ গ্রাহকদের শোধ করা হয়েছে ৩৪ হাজার ৪৮৯ কোটি টাকা। এ হিসাবে নিট বিক্রির পরিমাণ হচ্ছে ২০ হাজার ৪৮৭ কোটি ১২ লাখ টাকা।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ধরেছিল। কিন্তু ছয় মাসেই তার চেয়ে বেশি ঋণ নিয়ে ফেলেছে সরকার।আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধের পর যা অবশিষ্ট থাকে, তাকে বলা হয় নিট বিক্রি। ওই অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা থাকে এবং সরকার তা রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাজে লাগায়। বিনিময়ে সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের প্রতি মাসে সুদ দিতে হয়। এ কারণে অর্থনীতির পরিভাষায় সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রিকে সরকারের ঋণ হিসেবে ধরা হয়]

পূর্ববর্তী নিবন্ধঘাম থেকে মাদক শনাক্ত করবে পরিধেয় সেন্সর
পরবর্তী নিবন্ধসিএসইতে লেনদেন ২৬.৭২ কোটি টাকা