খান বাহাদুর আহছানউল্লা বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সমাজ সংস্কারক হিসেবে সুপরিচিত। বিশ শতকের গোড়ার দিকে ভারতবর্ষে পিছিয়ে থাকা মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষা বিস্তারে অগ্রগণ্য ভূমিকা রাখেন তিনি।
খান বাহাদুর আহছানউল্লার জন্ম ১৮৭৩ সালে সাতক্ষীরার নলতা গ্রামে। ১৮৯৫ সালে তিনি কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে দর্শনে এম.এ ডিগ্রি নেন। কর্মজীবনের শুরু রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের সুপার নিউমারারি শিক্ষক হিসেবে। এরপর দীর্ঘ কর্মময় জীবনে ফরিদপুর ও বাখরগঞ্জের উপ-পরিদর্শক, চট্টগ্রামের বিভাগীয় পরিদর্শক এবং সবশেষে শিক্ষা বিভাগের সহকারী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। কর্মজীবনের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি শিক্ষাকে সকলের মধ্যে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেওয়ায় তিনি ছিলেন সনিষ্ঠ। বিশেষ করে অনগ্রসর মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে তিনি বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। চেতনায় তিনি ছিলেন অসামপ্রদায়িক। কোনো শিক্ষার্থীই যেন পক্ষপাতিত্বের সুযোগ না পায় সেজন্যে পরীক্ষার খাতায় নামের বদলে রোল নম্বর লেখার পদ্ধতি প্রচলনের কৃতিত্ব খান বাহাদুর আহছানউল্লাহর। সে সময় বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে ফারসি, উর্দু ও ইংরেজি ভাষা শেখার প্রবণতা ছিল বেশি। আহছানউল্লাহ ব্যাপকভাবে বাংলা ভাষা শিক্ষায় তাদের উদ্বুদ্ধ করেন। কলকাতার ‘মখদুমী লাইব্রেরী’ ও ‘এম্পায়ার বুক হাউস’ তাঁরই প্রতিষ্ঠিত। এছাড়া কলকাতায় বেকার হোস্টেল, টেলর হোস্টেল, কারমাইকেল হোস্টেল, মোসলেম ইনস্টিটিউট ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন আহছানউল্লাহ।
বিখ্যাত জনহিতকর প্রতিষ্ঠান ‘আহছানিয়া মিশন’ তাঁরই উল্লেখযোগ্য কীর্তি। শিক্ষার সার্বিক উন্নয়নে প্রগতিশীল ভূমিকার জন্য তাঁকে ‘খান বাহাদুর’ উপাধি দেওয়া হয়। তাঁর রচিত গ্রন্থসমূহের মধ্যে ‘বঙ্গভাষা ও মুসলমান সাহিত্য’, ‘হিস্ট্রি অব দ্য মুসলিম ওয়ার্ল্ড’, ‘আমার জীবনধারা’, ‘ছুফি ও সৃষ্টিতত্ত্ব’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। ১৯৬৫ সালের ৯ই ফেব্রুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।