চারশ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ডও আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের। যেহেতু বাংলাদেশের নিজেদের মাঠে খেলা আর স্পিন নির্ভর উইকেটে পঞ্চম দিনে বাংলাদেশের স্পিনাররা বল ঘোরাবেন ইচ্ছেমতো সে ভরসাতেই বলতে গেলে জয়ের স্বপ্ন দেখছিল টাইগাররা। কিন্তু সে স্বপ্ন ভেঙে দিলেন কাইল মায়ার্স। পঞ্চম দিনে সব জল্পনা কল্পনাকে মিথ্যে প্রমাণ করে দিলেন তিনি।
মূলত তারই বীরত্বে জয়ের পরিবর্তে লজ্জার হার বরণ করতে হয়েছে টাইগারদের চট্টগ্রাম টেস্টে। কাইল মায়ার্সকে কেন টেস্ট দলে নেওয়া হচ্ছেনা তা নিয়ে বেশ সমালোচনা হচ্ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজে। তার উপর অনেকটা চ্যালেঞ্জ জানিয়ে দলে এসেছিলেন মায়ার্স। কথা রেখেছেন মায়ার্স। দলকে উপহার দিলেন অসাধারণ এক জয়। যে জয় হয়তো কল্পনাও করেনি ক্যারিবীয়রা। মায়ার্স বীরত্বে ঠিক যেন বাংলাদেশের মুখের গ্রাস কেড়ে নিল ক্যারিবীয়রা। ৩৯৫ রানের বিশাল পাহাড় ডিঙিয়ে ৩ উইকেটের অসাধারণ জয় নিয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
শেষ দিনে ক্যারিবীয়দের প্রয়োজন ছিল ২৮৫ রান। হাতে ছিল ৭ উইকেট। যা সচরাচর কঠিন লক্ষ্য। তবে অতিক্রম করা অসম্ভব নয়। আর সেটাই আরো একবার প্রমাণ করল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। একমাত্র পেসার মোস্তাফিজসহ তিন বোলারকে নিয়ে পুরো দিন খেলতে হয়েছে স্বাগতিকদের। তার উপর একের পর এক ক্যাচ ছেড়েছে বাংলাদেশের ফিল্ডাররা। যেমন ম্যাচের জয়ের নায়ক মায়ার্সের সহজ ক্যাচ ছেড়েছে শান্ত ৪৯ রানেই। এরপর আর থামানো যায়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই ব্যাটসম্যান মায়ার্স এবং বনারকে। রেকর্ড পার্টনারশিপ গড়ে এ দুজন দলকে খাদের কিনারা থেকে নিয়ে যায় জয়ের বন্দরের কিনারায়। আগের দিনের তিন উইকেটে ১১০ রান নিয়ে শেষ দিনের খেলা শুরু করেন বনার এবং মায়ার্স। প্রথম সেশনেই ক্যারিবীয়রা চলে যেতে পারতো ব্যাকপুটে। কিন্তু দলীয় ১৩৫ রানের মাথায় মিরাজের বলে স্লিপে মায়ার্সের সহজ ক্যাচ ছেড়ে দেন শান্ত। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাননি এ দুজন। বাংলাদেশের বোলারদের নাক আর চোখের জল এক করে প্রায় চার ঘন্টার বেশি ব্যাট করেছেন। তার উপর দুটি আবদনের রিভিউ না নিয়েও যে ভুল করেছে সেটা প্রমাণ হয়েছে টিভি রিপ্লেতে।
স্বাগতিকরা সুযোগ কাজে লাগাতে না পারলেও সফরকারীরা ঠিকই সব সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ম্যাচ বের করে নেয়। শেষ পর্যন্ত এ জুটি ভেঙেছেন বটে তাইজুল। তবে ততক্ষণে বড্ড দেরি হয়ে গেছে। ২১৬ রানের অসাধারণ এ জুটি ভাঙে বনারের আউটে। তাইজুলের বলে এলবিডব্লিউ হন বনার। ফেরার আগে ২৪৫ বলে ৮৬ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলে আসেন বনার।
তখনো ১২০ রানের দরকার ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের। ২৯২ রানের মাথায় নাইম এসে ব্ল্যাকউডকে ফেরালে আবারো আশায় বুক বাধতে থাকে বাংলাদেশ। কিন্তু জসোয়া ডা সিলভা এসে মায়ার্সের সাথে জুটি বাধলে আবার পাল্টে যায় দৃশ্য পট। ততক্ষণে নিজের দেড় শত রান পূরণ করে ডাবল সেঞ্চুরির দিকে ছুটছেন মায়ার্স। এরপর তার ব্যাট যেন খাপ খোলা তরবারিতে পরিণত হয়েছে। সমানে কচু কাটা করছিল বাংলাদেশের বোলারদের। সেটা পরিষ্কার হয়েছে যখন শেষ ৫০ রান তুলতে মায়ার্স খেলেছেন মাত্র ৪৩টি বল। ডা সিলভাকে নিয়ে ষষ্ট উইকেটে ঠিক ১০০ রান যোগ করে বাংলাদেশের মুটো থেকে ম্যাচটাকে বলতে গেলে দ্বিতীয়বারের মতো বের করে নিয়ে যান মায়ার্স।
২০ রান করে ডা সিলভা ফিরলেও দলকে জিতিয়ে তবেই ফিরেন মায়ার্স। ৩১০ বলে ২১০ রানে অপরাজিত থাকেন মায়ার্স। যেখানে ২০টি চারের পাশাপাশি ছক্কার মার ছিল ৭টি। নিজের অভিষেক টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি করে স্বদেশী লরেন্স রো র পাশে দাঁড়ালেন মায়ার্স। তবে ম্যাচ জিতিয়ে মায়ার্স ছাড়িয়ে গেলেন সবাইকে। সবচাইতে বড় কথা বেশ কয়েকজন তারকা ক্রিকেটারের অনুপস্থিতিকে মোটেও অনুভব করতে দেনননি কাইল মায়ার্স। অপরদিকে বাংলাদেশের সাকিবের অভাবটা বেশ ভালই টের পেল স্বাগতিকরা। বাংলাদেশের পক্ষে সফল বোলার ৪ উইকেট নেওয়া মিরাজ। তবে ম্যাচ সেরা হয়েছেন ক্যারিবীয়ান ডাবল সেঞ্চুরিয়ান কাইল মায়ার্স।