১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারির সেই উত্তাল দিনগুলোতে উল্লেখযোগ্য একটি ঘটনা হচ্ছে, তৎকালীন ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের বদলি। বদরুদ্দীন উমরের ‘পূর্ব বাঙলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি’ শীর্ষক গ্রন্থ থেকে জানা যায়, ভাষা আন্দোলন শুরু হওয়ার সময় জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন হায়দার নামের একজন প্রবীণ অফিসার। কিন্তু পূর্ব বাংলা সরকারের চিফ সেক্রেটারি আজিজ আহমদ তাকে বদলি করে তার জায়গায় কোরেশী নামে একজন অল্প বয়স্ক অফিসারকে ঢাকার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
বিষয়টি এ জন্য গুরুত্বপূর্ণ যে, ২১ ফেব্রুয়ারি এই জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশেই গুলি চালানো হয়েছিল। এ বিষয়ে প্রাদেশিক মুসলিম লীগের তৎকালীন সম্পাদক মোহন মিঞা জানান, ফরিদপুর জেলাবোর্ডের নির্বাচন উপলক্ষে ১৭ ফেব্রুয়ারি তার রওনা হওয়ার আগের রাতে ১০টা ১১টার সময় তিনি পূর্ব বাংলার প্রধানমন্ত্রী নুরুল আমীনের বাসায় যান। এ সময় তিনি নুরুল আমীনকে বলেন, ভাষার বিষয় নিয়ে এবার খুব বড় গণ্ডগোল হবে। ১৯৪৮ সালের আন্দোলনের কথা উল্লেখ করে বলেন, সে সময় ছাত্ররা পরিষদ ভবন, সেক্রেটারিয়েট ভবন, এসেম্বেলি ঘেরাও করে রেখেছিল। আমরা সবাই আটকা পড়েছিলাম। সেই সময় নাজিমুদ্দিন। আইজি ও জিওসিকে ডাকতে বাধ্য হয়েছিলেন। সেবার ছাত্ররা পরিষদ ভবনের ওপর ইট পাটকেলও ছুড়েছিল। কিন্তু পুলিশ তাদের ওপর গুলি করেনি। তিনি নুরুল আমীনকে সতর্ক পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেন।
তখনই মোহন মিঞা জানতে পারেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের বদলির কথা। মোহন মিঞার ভাষায় কোরেশী ছিলেন ‘ট্যাক্টলেস অফিসার’। অল্প বয়সের কারণে ‘ক্রাইসিস’ সময়ে ‘ট্যাক্টফুলি’ কাজ করতে পারতেন না। সে তুলনায় হায়দার সাহেব ছিলেন বয়স্ক ও সিনিয়র অফিসার। কঠিন পরিস্থিতিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা তার ছিল। মোহন মিঞার আশঙ্কা মিথ্যা ছিল না। ১৯৪৮ সালে ১১ মার্চ থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত চলা আন্দোলনের মুখেও নিশ্চুপ ছিল পুলিশ। কিন্তু ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্রদের বিক্ষোভের মুখে পুলিশ গুলি চালিয়েছিল।