অধিনায়ক মোমিনুলের সবাইকে ছাড়িয়ে যাওয়া সেঞ্চুরি আর স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজের দারুণ ঘূর্ণি বাংলাদেশকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট জয়ের সুবাশ দিচ্ছে। অধিনায়ক হিসেবে দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে সিরিজের এগিয়ে যাওয়ার পথ প্রশস্ত করেছেন মোমিনুল। ম্যাচ জিততে হলে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আরো ২৮৫ রান করতে হবে। ম্যাচের শেষ দিনে ৭ উইকেট হাতে নিয়ে যা সত্যিই কঠিন। প্রথম ইনিংসে ১৭১ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ ২২৩ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে। ফলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩৯৫ রানের। চতুর্থ দিন শেষে সফরকারীরা ৩ উইকেট হারিয়ে সংগ্রহ করেছে ১১০ রান। এখনো অনেক দূরের পথ ক্যারিবীয়দের জন্য। বাংলাদেশ দল এখন ম্যাচ জয়ের স্বপ্ন দেখতেই পারে। মূলত মোমিনুল, মিরাজ আর লিটনদের নৈপুণ্যে এখন ম্যাচ জয়ের সুবাস পাচ্ছে টাইগাররা।
আগের দিনের ৩ উইকেটে ৪৭ রান নিয়ে চতুর্থ দিন শুরু করা বাংলাদেশ দলের দুই সেরা ব্যাটসম্যান মোমিনুল এবং মুশফিকুর রহিম মিলে ২৬ রান যোগ করতে সক্ষম হয়। দলকে ৭৩ রানে রেখে ১৮ রান করে ফিরেন মুশফিক। এরপর লিটন দাশকে নিয়ে দলকে টানতে শুরু করেন মোমিনুল। এ জুটি দারুণভাবে দলকে এগিয়ে নিয়ে যান। গড়ে তুলেন ১৩৩ রানের দারুণ এক জুটি। আর এরই মধ্যে লিটন তুলে নেন নিজের হাফ সেঞ্চুরি আর মোমিনুল তুলে নেন নিজের ক্যারিয়ারের দশম সেঞ্চুরি, মূলত এ দুজনের কল্যাণে শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে দারুণভাবে ম্যাচে ফিরে বাংলাদেশ। প্রায় একই সাথে লিটন হাফ সেঞ্চুরি আর মোমিনুল সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার পর রানের গতি বাড়াতে গিয়ে আউট হন দুজনই। ১৭৩ বলে সেঞ্চুরি পূরণ করা মোমিনুল ফিরেন ১১৫ রান করে। আর ৯৬ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করা লিটন দাশ ফিরেন ৬৯ রান করে। এরপর ২২৩ রানে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে ৩টি করে উইকেট নিয়েছেন ওয়ারিকান এবং কর্নওয়েল। ২টি উইকেট নিয়েছেন গ্যাব্রিয়েল।
৩৯৫ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দুই ক্যারিবীয় ওপেনার ভালো কিছু করার ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন। কিন্তু ৩৯ রানের বেশি দুজনকে একসাথে চলতে দেননি মেহেদী হাসান মিরাজ। ক্যাম্পবেলকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে ফেরান মিরাজ। নিজের পরের ওভারে আবার মিরাজের আঘাত। এবার তার শিকার দলের সবচাইতে বড় ব্যাটসম্যান এবং অধিনায়ক ক্রেইগ ব্রেথওয়েট। ইয়াসির আলি রাব্বির দারুণ এক ক্যাচে পরিণত হয়ে ফিরেন ক্যারিবীয় অধিনায়ক।
তিনি করেন ২০ রান আর ক্যাম্পবেল করেন ২৩ রান। এরপর শাইনি মোসলে কে জেকে বসতে দেননি মিরাজ। তার ঘূর্ণিতে কাবু হলেন এই ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানও। তিনিও এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন। ৫৯ রানে ৩ উইকেট তুলে নেওয়ার পর দিনের শেষ ঘন্টায় আরো একাধিক উইকেট তুলে নেওয়ার যখন পরিকল্পনা করছিল তখনই বাধার দেওয়াল হয়ে দাঁড়ায় বনার এবং মায়ার্স। যদিও এই দেওয়ালও ভেঙে ফেলেছিলেন মিরাজ। কিন্তু প্রথম দফায় তামিম এবং দ্বিতীয় দফায় মোস্তাফিজ দুটি ক্যাচ ছেড়ে দিলে আর ভাঙ্গা সম্ভব হয়নি এই জুটি। ৫১ রানের জুটি গড়ে অবিচ্ছিন্ন থাকেন এ দুজন। ১৫ রান নিয়ে বনার এবং ৩৭ রান নিয়ে মায়ার্স আজ আবার ব্যাট করতে নামবেন। আগের দিনের মতো গতকালও সাকিবের অভাবটা বেশ ভালোই অনুভুত হয়েছে বাংলাদেশ শিবিরে। সাকিব থাকলে হয়তো গতকালই ম্যাচ শেষ হয়ে যেতো। তারপরও আজ ম্যাচের শেষ দিনে বাংলাদেশের স্পিনারদের বিপক্ষে কতক্ষণ আর লড়াই করতে পারে সেটাই এখন দেখার বিষয়। মিরাজ প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি গতকাল নিয়েছেন ৩ উইকেট।