বহুল প্রত্যাশিত চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের মেয়াদ ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। তবে কাজ শেষ করতে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় লাগবে। অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে আরও ৬ মাস বেশি লাগবে। প্রকল্প পরিচালক এই তথ্য জানিয়েছেন। প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মফিজুর রহমান জানান, প্রকল্পের চট্টগ্রাম অংশে রাস্তা ভরাটের জন্য মাটির সংকট প্রকট। বিশেষ করে সাতকানিয়া থেকে দোহাজারী পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকায় কোথাও মাটি পাওয়া যাচ্ছে না। এখন শক্সখ নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে বালি উত্তোলন করে রাস্তা ভরাটের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তিনি জানান, সব মিলে এখন পর্যন্ত মোট প্রকল্পের ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, প্রকল্পের ৩৯টি সেতুর মধ্যে অনেক সেতুর কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। অনেক সেতুর কাজ অর্ধেক হয়ে গেছে।
প্রকল্প পরিচালকের অফিস সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের কাজের জন্য ২০১৭ সালে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে রেলের চুক্তি হয়। কিন্তু জমি পেতে দেরি হওয়ায় প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজও দেরিতে শুরু হয়।
প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মফিজুর রহমান আজাদীকে জানান, কক্সবাজার অংশের কাজ পুরোপুরি চলছে। চট্টগ্রাম অংশের মধ্যে সাতকানিয়া থেকে দোহাজারী পর্যন্ত ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার অংশে মাটির সংকট বেশি। মাটির সংকটের কারণে কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। করোনার কারণে ৫/৬ মাস কাজ বন্ধ ছিল। পার্শ্ববর্তী জমি থেকে মাটি কাটতে দিচ্ছে না। পাহাড় থেকে মাটি কাটতে দিচ্ছে না। এখন বিআইডব্লিউটিসির সাথে কথা হয়েছে। তারা ড্রেজার এনে সাঙ্গু থেকে বালি উত্তোলন করবে। আমরা এই বালি কিনে এনে রাস্তা ভরাট করব। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে সারা দেশের রেলওয়ে নেটওয়ার্কের সঙ্গে কক্সবাজার যুক্ত হবে-এটা নিশ্চিত করে বলা যায়।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, এই প্রকল্পকে পৃথক দুটি লটে ভাগ করা হয়েছে। একটি হচ্ছে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজারের চকরিয়া পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার। দ্বিতীয় লট হচ্ছে চকরিয়া থেকে কক্সবাজার সদর। চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন (সিআরইসি) ও দেশীয় তমা কনস্ট্রাকশন কোম্পানি এবং চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কর্পোরেশন (সিসিইসিসি) ও দেশীয় ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড পৃথক দুই লটের কার্যাদেশ পায়। তারা কাজ করছে।
দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নতুন রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পটি ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত এবং প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের একটি। এই কারণে এই প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করতে চায় রেল কর্তৃপক্ষ।
রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এই প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত ৮৮ কিলোমিটার, রামু থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার এবং রামু থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মিত হবে। ১২৮ কিলোমিটার রেলপথের মধ্যে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া, কক্সবাজারের চকরিয়া, ডুলাহাজারা, ঈদগাহ, রামু, সদর স্টেশনের নির্মাণ কাজও চলছে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা। ভূমির মালিকদের ক্ষতিপূরণ দিতে ২ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসনকে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন সম্ভব না হলে প্রকল্প ব্যয় বাড়তে পারে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এ প্রকল্পে অর্থের জোগান দিচ্ছে।