প্রশ্ন: নামাযরত অবস্থায় যদি মুখে লালা বা থুতু আসে সে ক্ষেত্রে ইসলামী শরীয়ত মতে করণীয় কি হবে?
উত্তর: নামাযরত অবস্থায় মুখ দিয়ে অনিচ্ছাকৃত লালা বা থুতু বের হলে নামায ফাসেদ হবে না। এমতাবস্থায় মুসল্লী এক হাত ব্যবহার করে সাথে থাকা রুমাল বা টিসু দ্বারা তা পরিষ্কার করবে। যেটাকে শরীয়তে আমলে কলীল বলা হয়। আমলে কলীল করলে নামায ফাসেদ হবে না। এ ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করবে। (আলমগীরি, দুররুল মোখতার, বাহারে শরীয়ত ৩য় খন্ড)
প্রশ্ন: আমরা অনেকে শুধু ফরজ নামায পড়ি, সুন্নাত ও নফল পড়ি না। এটা কতটুকু ইসলাম সম্মত দয়া করে জানাবেন।
উত্তর: যে সব ফরজ নামাযের পূর্বাপর সুন্নাতে মুআক্কাদাহ নামায রয়েছে বিনা ওজরে তা একবারও বর্জন করলে গুনাহগার হবে। বর্জনে অভ্যস্ত ব্যক্তি ফাসিক হিসেবে গণ্য। শরয়ী বিধানে তার সাক্ষ্য পরিত্যাজ্য। (বাহারে শরীয়ত, ৪র্থ খন্ড)
সুন্নাতে মুআক্কাদাহ যথাক্রমে ফজরের নামাযে ফরজের পূর্বে দু’রাকাত, জোহরে ফরজের পূর্বে চার রাকাত, পরে দু’ রাকাত, মাগরীবের ফরজের পর দু’রাকাত, এশার ফরজের পর দু’রাকাত। মোট বার রাকাত। (ইবনে মাযাহ ১ম খন্ড, হাদীস নং: ১১৪০)
এভাবে জুমাবারে দুরাকাত ফরজের পূর্বে ও পরে নির্ধারিত সুন্নাতে মুআক্কাদাহ’র ব্যাপারে শরীয়তে তাগিদ রয়েছে। বর্জনকারী গুনাহগার হবে। এ ছাড়াও সুন্নাতে যায়েদাহ ও নফল নামায সমূহ আদায়ে অসংখ্য সওয়াব রয়েছে। (ফাতওয়া-এ রজভীয়্যাহ ৩য় খন্ড, দুররুল মোখতার)
প্রশ্ন: বায়াত হওয়া কি ফরজ? না হলে কি গুনাহগার হবে, দয়া করে জানাবেন।
উত্তর: বায়আত তাসাউফ শাস্ত্র বা তরীক্বতের একটি পরিভাষা। তরীক্বতের শায়খ বা হক্কানী কামিল পীর মুর্শিদের নিকট বায়আত হওয়া কুরআন, হাদীস ও সাহাবায়ে কেরামের আমল দ্বারা সমর্থিত ও প্রমাণিত। পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে, “ঐ সব লোক যারা আপনার নিকট বায়আত গ্রহণ করেছে তারা তো আল্লাহরই নিকট বায়আত গ্রহণ করেছে।” (আল কুরআন ৪৮:১০)
আরো এরশাদ হয়েছে, “নিশ্চয় আল্লাহ সন্তুষ্ট হয়েছে ঈমানদারের প্রতি তখন তারা এ বৃক্ষের নীচে আপনার নিকট বায়আত গ্রহণ করেছিল।” (আল কুরআন: ৪৮:১৮)
মূলত: বায়আত হলো ইসলামের বিধি-বিধান মেনে চলা ও শরীয়ত বিরোধী কার্যকলাপ পরিত্যাগ ও বর্জন করার ব্যাপারে কামিল পীরের হাতে অঙ্গীকারাবদ্ধ হওয়া। সাহাবায়ে কেরাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র নিকট বায়আত গ্রহণের ব্যাপারে অসংখ্য হাদীস রয়েছে।
হযরত জরীর ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট নামায কায়েম করার, যাকাত প্রদানের এবং প্রত্যেক মুসলমানকে নসীহত করার বায়আত গ্রহণ করেছি। (সহীহ বুখারী শরীফ, ১ম খন্ড: পৃ: ৭৫)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এ মর্মে বায়আত গ্রহণ করেছি যে,তাঁর কথা শুনবো ও আনুগত্য করবো। (সহীহ বুখারী শরীফ, ২য় খন্ড, পৃ: ১৩৬৯)
কামিল পীরের বায়আত হওয়া সৌভাগ্যের ব্যাপার। ঈমান, আমল ও আকিদার হিফাজতের জন্য হাক্কানী পীর মুর্শিদের হাতে বায়আত হওয়ার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব অপরিসীম।
বায়আত না হওয়ার কুফল সম্পর্কে হযরত মুয়াবিয়া (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, বায়আতের রজ্জু ধারণ না করে যার মৃত্যু হল জাহেলিয়াত তথা গোমরাহী অবস্থায় তার মৃত্যু হল। (ইমাম তাবরানী, মু’জামুল আওসাত, হাদীস নং: ৭৬৯)
হযরত ইমাম ফখরুদ্দীন রাজী (র.), হযরত জুনাইদ বোগদাদী (র.), হযরত খাজা নিজাম উদ্দিন আউলিয়া (র.) ও সুলতান হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (র.) প্রমূখ বর্ণনা করেছেন, যার শায়খ বা পীর সেই তার পীর হল শায়তান। (আওয়ারিফুল মা’রিফ ইমাম গাজ্জালী ১ম খন্ড, পৃ: ৩৩)
কামিল পীরের হাতে বায়আত হওয়া ছাড়া শয়তানী চক্রান্তে ঈমান হারা হয়ে মৃত্যুর সম্ভাবনা রয়েছে। কামিল পীর হলেন যিনি মুরীদকে দ্বীনের সঠিক পথে পরিচালিত করেন। (তাফসীরে রুহুল বায়ান, ১ম খন্ড, পৃ: ২৩৬)
ইমাম আহমদ রেযা (র.) বলেন, যে বায়আতকে অপ্রয়োজনীয় ও অনর্থক ধারণা করবে এবং তা অস্বীকার করবে সে পথভ্রষ্ট। (বায়আত ওয়া খিলাফত কি আহকাম, পৃ: ৬০)
আল্লাহ তা’আলা বুঝার তৌফিক দিন।
ম খাইরুন নেছা
খুলশী চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন : মিথ্যা বলা মহাপাপ, কিন্তু কোনো সময় পরিস্থিতির কারণে মিথ্যা বলতে হয় এ বিষয়ে ইসলামী সমাধান জানালে কৃতার্থ হব।
উত্তর: মিথ্যা বলা কবীরা গুনাহ। হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে, “তোমরা মিথ্যাচার হতে বেঁচে থাকো। (মিশকাত শরীফ, পৃ: ৪১২), তবে পরিস্থিতির কারণে তিন অবস্থায় মিথ্যা বলার অনুমতি রয়েছে। ১. যুদ্ধাবস্থায় প্রতিপক্ষ কে ধোঁকা দেয়ার জন্য। এভাবে জালিমের জুলুম থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য। ২. দুইজন মুসলমানের পরস্পরের বিরোধ নিষ্পত্তি সমাঝোতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মিথ্যা বলার অনুমতি আছে। যেমন একজনের সামনে এ কথা বলা সে তোমাকে ভাল জানে। তোমার প্রশংসা করে অথবা সে তোমাকে সালাম দিয়েছে। অন্যজনের নিকটও এ জাতীয় কথা বলা, এতে পারস্পরিক দূরত্ব ও শক্রতা হ্রাস পাবে। শান্তি প্রতিষ্ঠা হতে পারে। ৩. তৃতীয় হচ্ছে নিজ স্ত্রীকে সন্তুষ্ট করার জন্য। (আলমগীরি, বাহারে শরীয়ত, ষষ্ঠদশ খন্ড, পৃ: ১১৫)
ম রিফাত চৌধুরী
জামাল খান, চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন : তাবিজ ব্যবহার শরীয়ত সম্মত কিনা?
উত্তর: নিজের ও অন্য মুসলিম নরনারীর কল্যাণ ও উপকারার্থে পবিত্র কুরআনের আয়াত ও আল্লাহর নামসমূহ বা কুরআন হাদীস সমর্থিত দুআ দ্বারা তাবিজ ব্যবহার শরীয়ত সম্মত। (দুররুল মুখতার , রদ্দুল মুখতার, বাহারে শরীয়ত, ষষ্ঠদশ খন্ড, পৃ: ৪৬)
তাবীজ শব্দটি আরবি, এর অর্থ আল্লাহর নিকট সাহায্য চাওয়া। “শরহু মা’আনিল আছার” এ হযরত আয়েশা (রা.)’র হাদীস বর্ণিত হয়েছে, পবিত্র কুরআনের আয়াত লিখা অথবা আল্লাহর নাম সমূহ লিখে তাবীজ ব্যবহারে কোন ক্ষতি নেই। (শরহে মায়ানীল আছার, ২য় খন্ড, পৃ: ৩২২)
তা’বীজের ভাষা আরবী হতে হবে, অর্থ বোধক হওয়া শর্ত। আল্লাহর বাণী, আল্লাহর নাম ও গুণাবলী সম্বলিত দুআ হওয়া শর্ত। এ ধরনের তাবীজ গলায় ঝোলানো হাতে বাঁধা জায়িজ। উপকারের ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহরই এ আক্বিদা পোষণ করা অপরিহার্য। (মেরকাত, খন্ড:৮, পৃ:২২)
ইসলাম সম্পর্কিত পাঠকের প্রশ্নাবলি ও নানা জিজ্ঞাসার উত্তর এই বিভাগে যতদূর সম্ভব সহজভাষায় প্রদান করা হচ্ছে। প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ, মাদরাসা-এ তৈয়্যবিয়া ইসলামিয়া সুন্নিয়া ফাযিল (ডিগ্রী)’র অধ্যক্ষ ও কদমমোবারক শাহী জামে মসজিদের খতীব মাওলানা মুহাম্মদ বদিউল আলম রিজভি। নির্বাচিত প্রশ্নোত্তর প্রকাশিত হবে প্রতি শুক্রবার। আগ্রহীদের বিভাগের নাম উল্লেখ করে নিচের ইমেলে প্রশ্ন পাঠাতে অনুরোধ জানানো হচ্ছে। [Email : azadieditorial@gmail.com]