করোনা মহামারীর কারণে পরীক্ষা ছাড়াই আগের পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে ২০২০ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে।
এতে শতভাগ পাস করা ছাড়াও জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৬১ হাজার ৮০৭ জন শিক্ষার্থী। বিডিনিউজ
পরীক্ষা না নিয়ে ফল প্রকাশে আইন সংশোধনের পর আজ শনিবার (৩০ জানুয়ারি) একযোগে ১১টি শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয় যাতে পৌনে ১৪ লাখ শিক্ষার্থীর অপেক্ষার অবসান ঘটে।
এইচএসসি ও সমমানে গত বার অর্থাৎ ২০১৯ সালে পাসের হার ছিল ৭৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ। তার আগের বছর ছিল ৬৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
গত বার জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের সংখ্যা ছিল ৪৭ হাজার ২৮৬। তার আগের বছর ছিল ২৯ হাজার ২৬২।
ঢাকার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউটে সকালে এক অনুষ্ঠানে এই ফল প্রকাশ হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে অনলাইনে যুক্ত হয়ে ডিজিটালি এই পাবলিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি শিক্ষা বোর্ডগুলোর চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে এইচএসসির ফলাফলের সারসংক্ষেপ গ্রহণ করেন।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বছরের পর এবার মহামারীর মধ্যে পরীক্ষা ছাড়া সব শিক্ষার্থীকে পাস করানো হলো।
বিশেষ পরিস্থিতিতে এইভাবে ফল প্রকাশের বিষয়টি তুলে ধরে পরীক্ষাহীন এই ফল নিয়ে শিক্ষার্থীদের স্বার্থে বিরূপ মন্তব্য না করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি জানান, সাধারণ ও মাদরাসা বোর্ডের ক্ষেত্রে জেএসসি ও সমমান এবং এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার বিষয়গুলোকে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার বিষয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে ফলাফল প্রস্তুত করা হয়েছে।
কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ক্ষেত্রে এসএসসি ও সমমান এবং একাদশ শ্রেণির পরীক্ষার বিষয়গুলোকে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার বিষয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রস্তুত হয়েছে ফল।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “পরামর্শক কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে সাবজেক্ট ম্যাপিং করে ফল প্রকাশ করা হয়। সমন্বয়কৃত বিষয়ের প্রাপ্ত নম্বরের গড় মানের ভিত্তিতে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার বিষয়ভিত্তিক নম্বর প্রতিস্থাপন করে বিদ্যমান পদ্ধতিতে গ্রেড পয়েন্ট নির্ধারণের মাধ্যমে জিপিএ চূড়ান্ত করা হয়।”
এছাড়া উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে গ্রুপ বা বিভাগ পরিবর্তনকারী পরীক্ষার্থী, বোর্ড পরিবর্তনকারী পরীক্ষার্থী, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আগত পরীক্ষার্থী, অনিয়মিত পরীক্ষার্থী, মানোন্নয়ন পরীক্ষার্থী, সমতুল্য সনদপ্রাপ্ত পরীক্ষার্থী ও প্রাইভেট পরীক্ষার্থীদের ফলাফল পরামর্শক কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে করা হয়।
তিনি আরো বলেন, “ফলাফলে কোনো শিক্ষার্থী সংক্ষুব্ধ হলে রিভিউ চেয়ে আবেদন করতে পারবে।”
তিনি জানান, এবারের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা না হওয়ায় পরীক্ষার্থীদের ফরমপূরণ বাবদ আদায়কৃত অর্থের অব্যয়িত অংশ ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “যদি মূল্যবোধ তৈরি না হয়, তাহলে শুধু বেশি নম্বর পেয়ে কী হবে, মানবিক গুণে গুণান্বিত হও; চারপাশে তাকাও- মানুষকে ভালবাসো। নীতি নৈতিকতা নিয়ে বেড়ে ওঠো, স্বদেশ প্রেমে উজ্জীবিত হও, নিঃস্বার্থ চিত্তে মানব কল্যাণে নিবেদিত হও।”
দীপু মনি অভিভাবকদের প্রতি বলেন, “আপনার সন্তানকে অসুস্থ প্রতিযোগিতার দিকে ঠেলে দেবেন না, স্বার্থপর হিসেবে গড়ে তুলবেন না। দেশের কল্যাণে, মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত হওয়ার শিক্ষা যদি আপনার সন্তান না পায়, মনে রাখবেন এ শিক্ষা অর্থবহ হবে না, শিক্ষার আসল উদ্যেশ্যই ব্যাহত হবে।”
শিক্ষকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “যারা শিক্ষকতা পেশায় আছেন, আপনাদের দায়িত্ব অনেক অনেক বেশি। শিক্ষার গুণগত পরিবর্তনে বিষয়ভিত্তিক মানসম্পন্ন শিক্ষাদানে আপনাদের ভূমিকাই প্রধান। মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন নাগরিক তৈরির ক্ষেত্রেও আপনারাই রাখতে পারেন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।”
১১টি শিক্ষা বোর্ডের ১৩ লাখ ৬৫ হাজার ৭৮৯ জন শিক্ষার্থীর এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল ১ এপ্রিল থেকে।
কিন্তু করোনাভাইসের প্রকোপ বাড়তে শুরু করলে ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। তার আগে এসএসসি পরীক্ষা হয়ে গেলেও আটকে যায় এইচএসসি পরীক্ষা।
মাসের পর মাস অপেক্ষা করেও পরীক্ষা নেওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি না হওয়ায় গত ৭ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, পঞ্চম ও অষ্টমের সমাপনীর মতো এইচএসসি পরীক্ষাও নেওয়া যাচ্ছে না।
এরপর অষ্টমের সমাপনী এবং এসএসসির ফলাফলের গড় করে ২০২০ সালের এইচএসসির ফল নির্ধারণের সিদ্ধান্ত হয়। জেএসসি-জেডিসির ফলাফলকে ২৫ এবং এসএসসির ফলকে ৭৫ শতাংশ বিবেচনায় নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকের ফল ঘোষিত হলো।
কিন্তু আইনে পরীক্ষা নিয়ে ফল প্রকাশের বিধান থাকায় তা সংশোধনের প্রয়োজন হয়ে পড়ে।
বিশেষ পরিস্থিতিতে পরীক্ষা ছাড়াই ফল প্রকাশের বিধান যুক্ত করে গত সপ্তাহে জাতীয় সংসদে আইন সংশোধন করতে হয়।
সংসদে পাস হওয়া তিনটি বিলে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সই করার পর সোমবার রাতে‘ইন্টারমিডিয়েট অ্যান্ড সেকেন্ডারি এডুকেশন (অ্যামেন্ডমেন্ট) অ্যাক্ট-২০২১’ বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড (সংশোধন) অ্যাক্ট-২০২১’, ‘বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড (সংশোধন) অ্যাক্ট-২০২১’ গেজেট আকারে জারি করে সরকার।
এরপর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রস্তুত, ঘোষণা ও সনদ বিতরণের জন্য শিক্ষা বোর্ডগুলোকে ক্ষমতা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।