দীর্ঘদিন উত্তাপ ছড়ানোর পর পাইকারি বাজারে অবশেষে কমছে ভোজ্যতেলের দাম। আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দরপতনের কারণে পাইকারিতে প্রভাব পড়েছে বলে জানান আমদানিকারকরা। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে সয়াবিন এবং পাম তেলের মণপ্রতি বুকিং রেট কমেছে ১০০ থেকে ১৫০ ডলার; যার প্রভাবে পাইকারিতে দুই ধরনের তেলের দাম মণে কমেছে সর্বোচ্চ ৫৫০ টাকা পর্যন্ত।
এদিকে পাইকারিতে দরপতন হলেও খুচরা বাজারে তেল বিক্রি হচ্ছে আগের দামেই। বাজারের মনিটরিং দুর্বলতার সুযোগে খুচরা ব্যবসায়ীরা দাম কমাচ্ছেন না বলে দাবি করছেন ভোক্তারা।
গতকাল খাতুনগঞ্জের বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুই সপ্তাহ আগে প্রতি মণ (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) পাম তেল বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৯০০ টাকায়। বর্তমানে মণে ৫৫০ টাকা কমে গিয়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৩৫০ টাকায়। এছাড়া সয়াবিন তেলের মণ এক সপ্তাহ আগে ছিল ৪ হাজার ৫০০ টাকা। বর্তমানে ৪০০ টাকা কমে গিয়ে বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ১০০ টাকায়।
খাতুনগঞ্জের তেল ব্যবসায়ীরা জানান, বৈরী আবহাওয়ার কারণে সয়াবিন এবং পামের উৎপাদন কম হয়েছে। এছাড়া করোনার সময়ে সরবরাহ ব্যবস্থাও ভেঙে পড়ে। এর প্রভাবে গত কয়েক মাস ধরে তেলের বাজার চড়া ছিল। তবে সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমার কারণে দাম কমেছে। আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর মূলত তেলের বাজার নির্ভর করে। তাই দেশে সিন্ডিকেট করে তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণ করার কোনো সুযোগ নেই।
খাতুনগঞ্জের তেল ব্যবসায়ী এবং আরএম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আলমগীর পারভেজ আজাদীকে বলেন, তেলের বাজার সম্পূর্ণ আমদানি-নির্ভর। তাই আমদানি পর্যায়ে দাম বাড়লে তেলের বাজারে প্রভাব পড়বে-এটাই স্বাভাবিক। সাধারণত পাম তেল আমদানি হয় ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া থেকে। এছাড়া সয়াবিন আমদানি হয় ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা থেকে। ওইসব অঞ্চলে পণ্যের সরবরাহ ঘাটতি দেখা দেয়ায় বিশ্বব্যাপী তেলের বাজারে দর বৃদ্ধি হয়েছে। তেলের দাম আমাদের দেশে বেড়েছে সেটি নয়। এখন বুকিং রেট ১০০ থেকে ১৫০ ডলার পর্যন্ত কমেছে।
তিনি জানান, বর্তমানে পাম তেলের মণপ্রতি বুকিং রেট ৯১০ ডলার এবং সয়াবিনের বুকিং রেট হচ্ছে এক হাজার ১০ ডলার। বুকিং রেট কমার ফলাফল পাচ্ছেন ভোক্তারা।
খাতুনগঞ্জের তেল ব্যবসায়ী মেসার্স দ্বীন সিন্ডিকেটের স্বত্বাধিকারী জামাল উদ্দিন আজাদীকে বলেন, তেলের বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করার সুযোগ নেই। এখন মানুষ অনেক সচেতন। যে কেউ অনলাইনে আন্তর্জাতিক দর যাচাই করতে পারেন। বাজারে দাম বাড়লে সবাই বলতে থাকেন ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে দাম বৃদ্ধি করছেন।
কাজির দেউড়ির খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে রূপচাঁদা ব্র্যান্ডের সয়াবিন তেল এক লিটার বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়, যা আগে ছিল ১১০ টাকা। এছাড়া ২ লিটার বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকায়, আগে ছিল ২১০ টাকা। ৩ লিটার ৩৬০ টাকা, আগে ছিল ৩১৫ টাকা। ৫ লিটার তেল বিক্রি হচ্ছে ৫৮৫ টাকায়, যা আগে বিক্রি হচ্ছে ৫২০ টাকায়।