প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বুধবার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর দেশে এরইমধ্যে করোনার টিকাদান (ভ্যাকসিন) শুরু হয়েছে। শুরুতেই রাজধানী ঢাকায় এ টিকাদান কার্যক্রম চলছে। ঢাকার বাইরে ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে টিকাদান শুরুর ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রী জাহিদ মালেক। সব ঠিক থাকলে মন্ত্রীর ঘোষিত সময়ে চট্টগ্রামেও টিকাদান শুরু হতে পারে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা।
এদিকে কয়েকদিন আগেই জেলাভিত্তিক করোনার টিকা (ভ্যাকসিন) বরাদ্দ দিয়ে চিঠি দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ওই বরাদ্দের আওতায় সবমিলিয়ে ৫ লাখ ৪ হাজার ডোজ (৪২ কার্টন বা ৫০ হাজার ৪০০ ভায়াল) টিকা পাচ্ছে চট্টগ্রাম। মহানগরসহ চট্টগ্রাম জেলার অগ্রাধিকার তালিকাভুক্তদের মাঝে এই টিকা প্রদান করা হবে। আগামী রোববারের (৩১ জানুয়ারি) মধ্যে বরাদ্দকৃত টিকা জেলা পর্যায়ে (চট্টগ্রামে) পৌঁছে যাবে বলে জানিয়েছেন চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী ও চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। এসব টিকা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ইপিআই স্টোরে রাখা হবে বলেও জানান এই দুই কর্মকর্তা।
অন্যদিকে টিকাদানে চট্টগ্রাম সিটিকর্পোরেশন (চসিক) এলাকার সার্বিক প্রস্তুতিও প্রায় শেষ পর্যায়ে। এরইমধ্যে প্রাথমিকভাবে টিকাদান কেন্দ্র চূড়ান্ত করেছে চসিক করোনা ভ্যাকসিন প্রদান কমিটি। কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী- নগরের ১৫টি কেন্দ্রে করোনার টিকাদান কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। আর এসব কেন্দ্রে টিকাদানে নিয়োজিত থাকবে ৪২টি টিম। টিকাদানকারী হিসেবে ২ জন মিড ওয়াইফ, স্টাফ নার্স বা সিনিয়র স্টাফ নার্স এবং ৪ জন স্বেচ্ছা সেবকের সমন্বয়ে প্রতিটি টিমে মোট ৬ জন সদস্য থাকবেন। এরইমধ্যে কেন্দ্র ভিত্তিক টিম প্রস্তুত ও তাদের প্রশিক্ষণ প্রদানের প্রস্তুতিও শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট কমিটি। আজাদীকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন চসিক করোনা ভ্যাকসিন প্রদান কমিটির সদস্য সচিব ও চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী।
টিকাদানে ১৫ কেন্দ্র : চট্টগ্রাম মহানগরে করোনার টিকাদানে নির্ধারণ করা কেন্দ্রগুলোর মধ্যে রয়েছে- ১. চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল ২. চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল ৩. চট্টগ্রাম সেনানিবাস হাসপাতাল ৪. চট্টগ্রাম পুলিশ হাসপাতাল ৫. সিটি কর্পোরেশন জেনারেল হাসপাতাল ৬. চট্টগ্রাম নৌ-বাহিনী হাসপাতাল ৭. চট্টগ্রাম বিমান বাহিনী হাসপাতাল ৮. চট্টগ্রাম বন্দর হাসপাতাল ৯. চসিক বন্দরটিলা হাসপাতাল ১০. চসিক মোস্তফা হাকিম মাতৃসদন হাসপাতাল ১১. চসিক ছাপা মোতালেব মাতৃসদন হাসপাতাল ১২. ইউএসটিসি হাসপাতাল ১৩. সাউদার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ১৪. মা ও শিশু মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং ১৫. মেরিন সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। মহানগরের এই ১৫টি কেন্দ্রে করোনার টিকাদান কার্যক্রম পরিচালিত হবে বলে জানিয়েছেন কমিটির সদস্য সচিব ও চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী। তবে কেন্দ্র তালিকায় সংযোজন-বিয়োজন হতে পারে বলেও জানান তিনি।
টিকাদানে কেন্দ্র ভিত্তিক টিম : করোনার টিকাদানে মহানগরের কেন্দ্রগুলোতে নিয়োজিত থাকবে ৪২টি টিম। টিকাদানকারী হিসেবে ২ জন মিড ওয়াইফ, স্টাফ নার্স বা সিনিয়র স্টাফ নার্স এবং ৪ জন স্বেচ্ছা সেবকের সমন্বয়ে প্রতিটি টিমে মোট ৬ জন সদস্য থাকবেন। টিকাদানে কোন ধরনের কেন্দ্রে কতটি টিম কাজ করবে তাও নির্ধারণ করে দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী- চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম সেনানিবাস হাসপাতালে ৪টি করে টিম নিয়োজিত থাকবে। আর ৮টি টিম নিয়োজিত থাকবে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে। চট্টগ্রাম পুলিশ হাসপাতালে টিম কাজ করবে ১টি। এর বাইরে নির্ধারিত কেন্দ্রগুলোর মধ্যে সিটি কর্পোরেশন জেনারেল হাসপাতালে ৪টি এবং মা ও শিশু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩টি টিম কাজ করবে। আর বাকি ৯টি কেন্দ্রে ২টি করে টিম টিকাদানে নিয়োজিত থাকবে। টিমগুলোকে টিকাদানের জন্য প্রশিক্ষণ প্রদানের প্রস্তুতি চলছে জানিয়ে ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী আজাদীকে বলেন- টিম গঠন করে তালিকা পাঠাতে আমরা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি পাঠিয়েছি। তালিকা পাওয়ার পর এসব টিমের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করা হবে। কয়েকদিনের মধ্যেই এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু এবং আগামী সপ্তাহের মধ্যেই সম্পন্ন করা হবে বলে জানান তিনি।
উপজেলা পর্যায়ে টিকাদান : উপজেলায় প্রাথমিকভাবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে করোনার টিকা দেয়া হবে বলে স্বাস্থ্য বিভাগ সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ২টি করে টিম টিকাদানে নিয়োজিত থাকবে। টিকাদানে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে শনিবার (৩০ জানুয়ারি) থেকে জেলা পর্যায়ের এবং ১ ফেব্রুয়ারি থেকে উপজেলা পর্যায়ের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি।
এদিকে রোববারের মধ্যে টিকা আসলেও লিখিত কোনো নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত স্থানীয় পর্যায়ে এই টিকাদান কর্মসূচি শুরুর সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, মন্ত্রণালয় বা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা পেলে তবেই এ টিকাদান কর্মসূচি শুরু করা হবে।
করতে হবে অনলাইন রেজিস্ট্রেশন : ভ্যাকসিন পেতে অগ্রাধিকার তালিকাভুক্তদের অনলাইনে বাধ্যতামূলক ভাবে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এজন্য ‘সুরক্ষা অ্যাপ’ নামে একটি অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে। ভ্যাকসিন পেতে তালিকাভুক্তরা সুরক্ষা প্ল্যাটফর্মের ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনে (িি.িংঁৎড়শশযধ.মড়া.নফ) গিয়ে অথবা মোবাইলে অ্যাপ ডাউনলোড করে নিবন্ধন করতে পারবেন। অ্যাপটি ফ্রি ডাউনলোড করা যাবে। জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ও মোবাইল নম্বর দিয়ে এই নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ায় কেন্দ্র পছন্দের সুযোগ থাকবে। রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি (রেজিস্ট্রেশনকারী) ভ্যাকসিন গ্রহণের তারিখ ও কেন্দ্র সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পেয়ে যাবেন। নির্দিষ্ট তারিখে নির্ধারিত কেন্দ্রে গিয়ে সংশ্লিষ্ট রেজিস্ট্রেশনকারী ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিতে পারবেন।