চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন আজ। করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেও নির্বাচনী প্রচারণা দিন দিন হয়ে উঠছিল সহিংস। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের মনোনীত প্রার্থীদের সঙ্গে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা বেশি ঘটেছে বলে নগরবাসীর মনে একটা উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল। সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থী মানেই নির্বাচনে অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে ঘিরে সহিংসতার আশঙ্কা। এই আশঙ্কা এখন সত্যি হয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ মেয়র পদে একক প্রার্থী বাছাইয়ে সফলতা দেখালেও কাউন্সিলর প্রার্থী বাছাইয়ে সফল হতে পারেনি। ফলে প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডে দলীয় বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। এতে যতটা না সমস্যা, তারচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে এলাকায় প্রচার চালানোর সময় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা। আর তাতেই দুই পক্ষ মুখোমুখি হলে পরস্পরকে হুমকি-ধমকি, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া এবং এক পক্ষ আরেক পক্ষকে বিদ্রুপ করার ঘটনা ঘটেছে। আর এতেই দুইপক্ষে সৃষ্টি হয়েছে উত্তেজনা এবং সংঘর্ষ সৃষ্টির পরিবেশ। তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে কথা বলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন। তিনি বলেন, বিজিবি, আনসার, র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার ১৬ জনের বক্তব্য আমরা শুনেছি। নির্বাচনী পরিবেশ পরিস্থিতি নিয়ে তারা সবাই সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। প্রত্যেকে আশাবাদী, ২৭ জানুয়ারির নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য হবে। গত রোববার দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকের এসব কথা বলেন তিনি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, আশ্বস্ত করার মতো নির্বাচনী পরিবেশ বিরাজ করছে। বিপুল পরিমাণ মানুষ প্রচারণায় অংশগ্রহণ করছে। পোলিং এজেন্টদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে নির্বাচন কর্মকর্তাদের। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও ভোট সংশ্লিষ্ট কাজে যারা নিয়োজিত থাকবেন তাদের সকল প্রার্থীর প্রতি সমান নজর রাখতে হবে, যাতে এটি নিয়ে কোনো প্রশ্ন না ওঠে। তিনি বলেন, ইভিএম ভোটারদের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। নির্বাচনের বর্তমান পরিবেশ ধরে রাখতে হবে। সকল প্রার্থী যেন সমান অধিকার পায় এবং নির্বাচনী আচরণ বিধি মেনে চলে, সেটি সবাইকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
এদিকে, সরকার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে (চসিক) কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করবে না বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, চট্টগ্রামের জনগণ যাকে খুশি তাকেই ভোট দেবে। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে স্বাধীন ও কর্তৃত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে কমিশনকে সম্পূর্ণ সহযোগিতা দেবে সরকার। সোমবার সরকারি বাসভবনে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, শেখ হাসিনা সরকার ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় অবিরাম পরিশ্রম করছে। এ দেশের রাজনীতিতে সততার অনন্য নজির বঙ্গবন্ধুর পরিবার। এ পরিবার থেকে সবাইকে শিক্ষা নিতে হবে, সততা ও সুমহান ত্যাগের।
আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ক্ষমতার দাপট না দেখিয়ে জনমানুষের সেবায় নিবেদিতপ্রাণ হওয়ারও আহ্বান জানান তিনি।
আসলে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংস পরিস্থিতি কিংবা সংঘাতের ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, সংশ্লিষ্টদের সৃষ্ট পরিস্থিতি আমলে নিয়ে প্রশাসনকে প্রয়োজনে আরো কঠোর হতে হবে, নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠু রাখার জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন প্রশাসন। বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও যাতে আক্রমণের সম্মুখীন না হন, তার জন্যও সতর্ক থাকতে হবে। এছাড়া রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, নির্বাচনকে ঘিরে সিটি করপোরেশন এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা বাড়ানোর পদক্ষেপ প্রশংসনীয়। আমরা চাই, নির্বাচনী এলাকায় ভোটের উৎসব যেন আনন্দময় হয়। নির্বাচন সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য হোক-সেটাই আমাদের কামনা।