নগরবাসীর রায় আজ

কে হচ্ছেন মেয়র

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২৭ জানুয়ারি, ২০২১ at ৬:৪২ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের অভিভাবক নির্বাচনের দিন আজ। বহুল প্রত্যাশার নির্বাচন। কে হচ্ছেন মেয়র, নগরবাসীর রায় জানা যাবে আজ বুধবার। সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তবু আছে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা। কেননা ৭৩৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ৪১৬টি কেন্দ্রকে গুরুত্বপূর্ণ কিংবা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অবশ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়, তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আজ উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট উৎসব হবে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে রয়েছে।
নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোট ৭ জন প্রার্থী। এর মধ্যে রয়েছেন প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগের রেজাউল করিম চৌধুরী ও বিএনপির ডা. শাহাদাত হোসেন। প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে মূলত তাদের মধ্যেই। এছাড়া আছেন বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মাওলানা এম এ মতিন (মোমবাতি), ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মুহাম্মদ ওয়াহেদ মুরাদ (চেয়ার), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আবুল মনজুর (আম), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. জান্নাতুল ইসলাম (হাতপাখা) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী খোকন চৌধুরী (হাতি)। তবে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী খোকন চৌধুরী আওয়ামী লীগের রেজাউলকে সমর্থন করে নির্বাচনী মাঠ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।
কে হচ্ছেন মেয়র? এই নিয়ে গতকাল ভোটের আগের দিন পর্যন্ত জল্পনা-কল্পনা ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একাধিক মেগা প্রকল্পের সুফল পেতে রেজাউল করিম চৌধুরী কি নগরপিতা হবেন? নাকি নগর অভিভাবকের আসনে বসবেন ডা. শাহাদাত হোসেন? কে হাসছেন শেষ হাসি? এই প্রশ্নের উত্তর রয়েছে ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ জন ভোটারের কাছে। উত্তর পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আজ রাত পর্যন্ত।
জলাবদ্ধতা নিরসনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে চট্টগ্রামকে সর্বাধুনিক বাসোপযোগী বিশ্বমানের উন্নত ও নান্দনিক নগর হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী। অপরদিকে নিরাপদ ও সাম্য-সম্প্রীতির চট্টগ্রাম গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে জলাবদ্ধতামুক্ত পরিচ্ছন্ন, স্বাস্থ্য-শিক্ষাবান্ধব ও তথ্যপ্রযুক্তি সমৃদ্ধ নান্দনিক পর্যটন নগরী গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বিএনপির প্রার্থী শাহাদাত হোসেন। রেজাউলের ইশতেহারে আছে ৩৭ দফা। আর শাহাদাত দিয়েছেন ৭৫টি প্রতিশ্রুতি।
১৪ সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে প্রার্থী রয়েছেন ৫৭ জন। সাধারণ ৪১ ওয়ার্ডের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ৩৯ ওয়ার্ডে। ১৮ নং ওয়ার্ডে হারুনুর রশিদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। ৩১ নং আলকরণ ওয়ার্ডে এক কাউন্সিলর প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। তবে ওই ওয়ার্ডে মেয়র ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে নির্বাচন হবে। ৩৯ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে লড়ছেন ১৬৮ জন প্রার্থী।
চসিকের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট হবে। এজন্য সাড়ে ১১ হাজার ইভিএম কেন্দ্রগুলোতে পৌঁছে গেছে। ভোটগ্রহণ শেষে প্রতিটি কেন্দ্রে ফলাফল ঘোষণা করা হবে। কেন্দ্রীয়ভাবে চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হবে এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেসিয়াম থেকে। ইতিমধ্যে পুরো স্টেডিয়াম এলাকার নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেছে নির্বাচন কমিশন।
আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয় সূত্র জানায়, আজ সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হবে। বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোট চলবে। নির্বাচনে মেয়র, ৪০টি সাধারণ কাউন্সিলর এবং ১৪ জন মহিলা কাউন্সিলর পদে ভোটগ্রহণ হবে।
চসিক নির্বাচনের তারিখ ছিল গত বছরের ২৯ মার্চ। ১৬ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে ২১ মার্চ নির্বাচন স্থগিত করা হয়। মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে ৫ আগস্ট চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন এবং ৪১ জন সাধারণ ওয়ার্ড ও ১৪ জন সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের মেয়াদ শেষ হয়। প্রশাসক হিসেবে খোরশেদ আলম সুজনকে নিয়োগ দেয় সরকার।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে, স্থগিত হওয়া ওই সিডিউলেই আজ ভোটগ্রহণ হবে। ইতোমধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভোট উৎসবের সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। গতকাল সকালে ৭৩৫ ভোট কেন্দ্রে কঠোর নিরাপত্তায় পৌঁছে গেছে ইভিএমসহ সব নির্বাচনী সামগ্রী।
চসিক নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ও চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান আজাদীকে জানান, সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। কাউকে কোনো ধরনের অনিয়ম এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সুযোগ দেয়া হবে না।
মোট ভোট কেন্দ্র: চসিক নির্বাচনে মোট ভোটকেন্দ্র ৭৩৫টি। এর মধ্যে ৪৩৯টি ভোটকেন্দ্রকে গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ) কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ৩০৬ ভোটকেন্দ্র সাধারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বাড়তি নজরদারি রাখা হয়েছে।
ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা : ভোটগ্রহণে দায়িত্বে রয়েছেন ১৬ হাজার ১৬৩ জন কর্মকর্তা। সকলকে ইভিএম বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে প্রিজাইডিং ও সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ৫ হাজার ৯০২ জন এবং পোলিং অফিসার ১০ হাজার ২৬৮ জন।
ইভিএম : এবার প্রথমবারের মতো ইভিএম মেশিনে ভোটগ্রহণ করা হচ্ছে। ভোট কেন্দ্রে চলে গেছে ১১ হাজার ৫৭২ ইভিএম। প্রতিটি ভোট কক্ষে (৪৮৮৯ জনের জন্য) একটি করে ইভিএম মেশিন দেয়া হয়েছে। এছাড়া দুটি কক্ষের জন্য একটি করে ইভিএম মেশিন অতিরিক্ত রাখা হয়েছে। ঝুঁকি এড়াতে রাখা হয়েছে বিশেষ ব্যাকআপও।
ভোটদান পদ্ধতি : সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ইভিএমের কন্ট্রোল প্যানেলের মাধ্যমে ভোটারকে ইলেকট্রনিক ব্যালট ইস্যু করবেন। ভোটার নম্বর অথবা জাতীয় পরিচয়পত্র বা স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে ভোটার শনাক্ত করা হবে। তারপর আঙুলের ছাপের মাধ্যমে ভোটার শনাক্ত করার পর ভোটারের ছবিসহ পরিচয় পর্দায় ভেসে উঠবে। এরপর গোপন কক্ষে একজন ভোটার মেয়র, সংরক্ষিত ও সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলরসহ তিনটি পদে ভোট প্রদান করতে পারবেন। ব্যালট ইউনিটে প্রার্থীর নাম ও প্রতীকের ডান পাশে সাদা বোতামে চাপ দিয়ে ভোট দেবেন। পরে সবুজ বোতাম চেপে ভোট নিশ্চিত করবেন।
উল্লেখ্য, গত ৮ জানুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়। গত সোমবার রাত ১২টায় শেষ হয় প্রচারণা। ৪১টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ জন। এদের মধ্যে নারী ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৬৭৩ জন এবং পুরুষ ভোটার ৯ লাখ ৯২ হাজার ৩৩ জন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাধারণ ৪১ ও সংরক্ষিত ১৪ ওয়ার্ডে প্রার্থী কারা
পরবর্তী নিবন্ধচন্দনাইশে ২ মেয়র ও ৪ কাউন্সিলর প্রার্থীর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার