আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে কথা বলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা। তিনি বলেন, বিজিবি, আনসার, র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার ১৬ জনের বক্তব্য আমরা শুনেছি। নির্বাচনী পরিবেশ পরিস্থিতি নিয়ে তারা সবাই সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। প্রত্যেকে আশাবাদী, ২৭ জানুয়ারির নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য হবে। গতকাল রোববার দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকের এসব কথা বলেন তিনি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, আশ্বস্ত করার মতো নির্বাচনী পরিবেশ বিরাজ করছে। বিপুল পরিমাণ মানুষ প্রচারণায় অংশগ্রহণ করছে। পোলিং এজেন্টদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে নির্বাচন কর্মকর্তাদের। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও ভোট সংশ্লিষ্ট কাজে যারা নিয়োজিত থাকবেন তাদের সকল প্রার্থীর প্রতি সমান নজর রাখতে হবে, যাতে এটি নিয়ে কোনো প্রশ্ন না ওঠে। তিনি বলেন, ইভিএম ভোটারদের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। নির্বাচনের বর্তমান পরিবেশ ধরে রাখতে হবে। সকল প্রার্থী যেন সমান অধিকার পায় এবং নির্বাচনী আচরণ বিধি মেনে চলে, সেটি সবাইকে লক্ষ্য রাখতে হবে। বিএনপির মেয়র প্রার্থীর দাবির প্রেক্ষিতে সাংবাদিকরা সিইসির কাছে প্রশ্ন করেন, চসিক নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করা হবে কিনা। তা নাকচ করে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সেনা মোতায়েনের কোনো পরিকল্পনা নেই। তার প্রয়োজনীয়তাও কমিশন অনুভব করছে না।
তিনি বলেন, যেখানে ইভিএমে ভোট হবে সেখানে সশস্ত্র পুলিশ পাহারা থাকবে। ইভিএমে একজনের ভোট আরেকজন দেওয়া সম্ভব না।
বিএনপির প্রার্থীরা তাদের নির্বাচনী এজেন্ট এবং সমর্থকদের বাসায় গিয়ে পুলিশ হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন। এ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে সিইসি বলেন, বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিষ্প্রয়োজনে হয়রানি করছে-এমন কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে নেই। যাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা আছে এবং আদালতের ওয়ারেন্ট আছে, অবশ্যই পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করার জন্য চেষ্টা করতে পারে। নিরপরাধ কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে তাদের অভিযান নেই।
বিভিন্ন মামলার অনেক আসামি চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। তাদের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সিইসি বলেন, এক্ষেত্রে আইনের কারণেই তাদের কিছু করার নেই। কারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারে না সেটার একটা আইন আছে। কারা প্রার্থী হতে পারে সেটার কতগুলো বিধান আছে। যদি কেউ দুই বছরের শাস্তি পান তাহলে তাকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখা হয়। যদি কোনো অভিযোগ না থেকে থাকে, তাহলে সে অপরাধী না।
রিটার্নিং অফিসারের কাছে বিএনপির মেয়র প্রার্থীর জমা দেওয়া অভিযোগ নিষ্পত্তি না হওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, শনিবার পর্যন্ত জমা পড়া ৫৬টি অভিযোগের মধ্যে ৩৫টি নিষ্পত্তি হয়েছে এবং বাকিগুলো তদন্তাধীন।
নির্বাচনের চেয়ে জীবন অনেক মূল্যবান মন্তব্য করে নূরুল হুদা বলেন, প্রতিযোগিতায় নির্বাচন শুরু হবে, কিন্তু সহিংসতায় শেষ হবে না। তিনি বলেন, নির্বাচনে প্রতিযোগিতা করবেন, কিন্তু সেটা সহনশীল পর্যায়ে। এই নির্বাচন উপলক্ষে কয়েকজন নিরীহ ব্যক্তির জীবন চলে গেছে। এভাবে সংঘাত-সংঘর্ষে জীবন চলে যাবে-এটা হতে পারে না। তবে নির্বাচন উৎসবমুখর হওয়ায় মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের ধন্যবাদ জানান তিনি।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশে সিইসি বলেন, আপনাদের কাছে একজন প্রার্থীর পরিচয় সে প্রার্থী। সে কোন দলের, মতের, গোত্রের সেটা পরিচয় নয়। প্রত্যেককে তাদের নির্বাচনী প্রচারণায় আইনি সহায়তা দেওয়ার দায়িত্ব আপনাদের।
সাধারণ ছুটি না রাখার ব্যাখ্যা : আগামী ২৭ জানুয়ারি চসিকের ভোটের দিন সাধারণ ছুটি না রাখার ব্যাপারে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, নির্বাচন বৃহস্পতিবার বা রোববার করলে সেখানে আমাদের আশা থাকে ভোটাররা ভোট দেবে। কিন্তু দেখা যায় ছুটি পেয়ে তারা সবাই বাড়ি চলে যায়। ভোট দেয় না। সে কারণে আমরা মাঝখানে রাখি।
সাধারণ ছুটি না রাখার ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, কেবিনেট থেকে একটা নির্দেশনা জারি আছে। যারা ব্যক্তিগত বা সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োজিত থাকবেন, তাদের যেন ভোট দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। এ কারণে সাধারণ ছুটি রাখি না।
মতবিনিময় সভায় বিভাগীয় কমিশনার এবিএম আজাদ, জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, সিএমপি কমিশনার সালেহ্ মোহাম্মদ তানভীর, চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান, চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার রশিদুল হাসান, র্যাব, আনসার, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থাসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।