বাংলা সাহিত্যের চর্চা ও লোক সংস্কৃতির ইতিহাসে ওহীদুল আলম এক সৃজনশীল প্রতিভা। চট্টগ্রামের এই কৃতী সন্তান একাধারে ছিলেন কবি, কথা সাহিত্যিক, লোক সাহিত্য সংগ্রাহক, ইতিহাসকার ও শিক্ষাবিদ। তাঁর ছবি আঁকার হাতও ছিল চমৎকার। ওহীদুল আলমের জন্ম ১৯১১ সালের ১ জানুয়ারি চট্টগ্রামের ফতেয়াবাদ গ্রামে। ফতেয়াবাদ স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাস করে ১৯৩২ সালে ভর্তি হন চট্টগ্রাম কলেজে। এই কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক ডিগ্রি নেন কৃতিত্বের সাথে। ১৯৪০ সালে ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে বি.টি পাস করেন। ওহীদুল আলম বেড়ে উঠেছেন সাহিত্যিক পরিমণ্ডলে। অপর তিন ভাই শামসুল আলম, দিদারুল আলম, ও মাহবুব-উল-আলম – সকলেরই ছিল সাহিত্যের সাথে নিবিড় যোগ। ষোল বছর বয়সে ওহীদুল আলম প্রথম কবিতা লেখেন। সাহিত্যাঙ্গনে সেই তাঁর পথচলার শুরু। কবিতার পাশাপাশি ওহীদুল প্রচুর গল্প, উপন্যাস লিখেছেন, লিখেছেন স্মৃতিকথা। তবে কবি হিসেবেই তাঁর পরিচিত ছিল ব্যাপক। ওহীদুল আলমের কর্মজীবনের শুরু সীতাকুণ্ড হাই স্কুলে সহকারী শিক্ষক হিসেবে। পরবর্তী সময়ে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল, জে.এম. সেন ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রাম ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজ, চট্টগ্রাম জুনিয়র ট্রেনিং কলেজ প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেছেন। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম ‘কর্ণফুলীর মাঝি’। অন্যান্য রচনাপঞ্জির মধ্যে ‘জোহরার প্রতীক্ষা’, ‘শামীমা’, ‘বীরশ্রেষ্ঠ সোনাগাজী’, ‘পৃথিবীর পথিক’, ‘ছোটদের আবুল ফজল’, ‘দিদারুল আলম’, ‘চট্টগ্রামের ইতিহাস’, ‘চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধ’, ‘চট্টগ্রামের শিক্ষা সাধনা’, ‘চট্টগ্রামের লোকসাহিত্য’, ‘বাংলা জীবনীকোষ’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
বেশ কিছু শিশুতোষ গ্রন্থও রচনা করেছেন তিনি। প্রাণখোলা, সরলপ্রাণ এই মানুষটি ভালোবাসতেন সংগীত। শখের বশে গানও গাইতেন। প্রগতিপন্থী ওহীদুল আলম ধর্মান্ধ ছিলেন না, ছিলেন ধর্মপ্রাণ, প্রকৃতিপ্রেমী। সকল সংকীর্ণতা আর সাম্প্রদায়িকতার উর্ধ্বে মানবতার বাণী ধারণ করেছেন হৃদয়ে। চরিত্রবৈশিষ্ট্যে আর সাহিত্যকর্মে এর প্রমাণ মেলে। ১৯৯৮ সালের ২৪ জানুয়ারি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রয়াত হন তিনি।