চট্টগ্রাম কাস্টমসে মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি-রপ্তানি পণ্যের ক্ষেত্রে জাল জালিয়াতির ঘটনা নতুন নয়। এসব জালিয়াতির ক্ষেত্রে সবার আগে অভিযোগের তীর উঠে আমদানিকারকের মনোনীত প্রতিনিধি কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং (সিএন্ডএফ) এজেন্টের দিকে। কারণ আমদানি-রপ্তানি পণ্যের ডুকুমেন্টেশনের কাজটি সিএন্ডএফই করে থাকে। অভিযোগ রয়েছে, অনেক অসাধু আমদানিকারকের সাথে যোগসাজশ করে মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য খালাস অথবা রপ্তানিতে সহযোগিতা করে বেশ কিছু সিএন্ডএফ প্রতিষ্ঠান। আমদানি নিষিদ্ধ বা শর্তযুক্ত পণ্য খালাসে সহযোগিতার চেষ্টা, ঘোষণা বর্হির্ভূত পণ্য খালাসে চেষ্টা এবং বিভিন্ন জাল জালিয়াতির দায়ে গত ২০১৯ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ছয় সিএন্ডএফ এজেন্টের লাইসেন্স বাতিল করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এছাড়া একই সময়ের মধ্যে এবং একই ধরনের অভিযোগে ৩১টি সিএন্ডএফ প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে বলে জানান চট্টগ্রাম কাস্টমসের লাইসেন্স শাখার কর্মকর্তারা।
লাইসেন্স শাখার কর্মকর্তারা জানান, স্থায়ীভাবে বাতিল করা ছয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মেসার্স ট্রাইকম ফ্রেইট এন্ড লজিস্টিকস লিমিটেডের বিরুদ্ধে ঘোষণা অতিরিক্ত ও ঘোষণা বহির্ভূত পণ্য ছাড়করণের চেষ্টার দায়ে গত বছরের ১৪ জানুয়ারি লাইসেন্স স্থগিত করা হয়। পরবর্তীতে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় একই বছরের ১৬ জুলাই দুই লাখ টাকা জরিমানার পাশাপাশি লাইসেন্স বাতিল করে কাস্টমস। এছাড়া ঘোষণাতিরিক্ত পণ্য আমদানি ও খালাসে সহযোগিতার দায়ে গত বছরের ৭ জানুয়ারি মেসার্স অন্তরালয়ের লাইসেন্স সামিয়ক স্থগিত করা হয়। পরবর্তীতে একই বছরের ১৬ জুলাই এক লাখ ২৫ হাজার টাকা জরিমানার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির লাইসেন্স বাতিল করে লাইসেন্স শাখার কর্মকর্তারা। এছাড়া মেসার্স খায়ের ব্রাদার্সের বিরুদ্ধে ঘোষণা বহির্ভূত পণ্যের চালান খালাসে আমদানিকারককে সহযোগিতার দায়ে গত ২০২০ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি লাইসেন্স সাময়িক স্থগিত করা হয়। এছাড়া অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় একই বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর ১ কোটি টাকা জরিমানার পাশাপাশি লাইসেন্স বাতিল করে কাস্টমস। অন্যদিকে ফোর স্টার ট্রেডিং কোম্পানির বিরুদ্ধে মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি পণ্য খালাস চেষ্টার অভিযোগে গত বছরের ২২ মার্চ লাইসেন্স সাময়িক স্থগিত করা হয়। এছাড়া একই বছরের ৩১ ডিসেম্বর এক কোটি জরিমানার পাশাপাশি লাইসেন্স বাতিল করে কাস্টমস। অন্যদিকে মেসার্স ওএসএল ট্রেডিং ট্রেড (প্রাঃ) লিমিটেডের বিরুদ্ধে ঘোষণা বহির্ভূত পণ্য খালাসে আমদানিকারককে সহযোগিতার অভিযোগে গত বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি লাইসেন্স স্থগিত করে কাস্টমস। পরে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গত ১৭ জানুয়ারি ১৫ লাখ টাকা জরিমানার পাশাপাশি লাইসেন্স বাতিল করা হয়। অপরদিকে মেসার্স বিপাশা ইন্টারন্যাশনাল বিরুদ্ধে চীন থেকে পায়রা অঞ্চলের বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেডের নামে ক্যাপিটাল মেশিনারির আড়ালে ১৪ হাজার ৪০০ ক্যান বিয়ার এবং ১ হাজার ৯৬ বোতল মদসহ ঘোষণা বহির্ভূত ৫৮ টন পণ্য খালাস চেষ্টার অভিযোগ আনে কাস্টমস। গত ২০১৯ সালের জুলাইয়ে মদ ও বিয়ার আমদানির ঘটনাটি সারাদেশে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি। এক পর্যায়ে গত ২০২০ সালের ৭ জানুয়ারি বিপাশা ইন্টারন্যাশনালের লাইসেন্স সাময়িক স্থগিত করা হয়। এছাড়া গত ১৮ জানুয়ারি এক বছর পর অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটিকে ২০ লাখ টাকা জরিমানার পাশাপাশি লাইসেন্স বাতিল করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
লাইসেন্স শাখা সূত্রে জানা গেছে, বাতিলের পাশাপাশি প্রায় একই ধরনের অভিযোগে গত দেড় বছরে ৩১ সিএন্ডএফ এজেন্টের লাইসেন্স স্থগিত করে কাস্টমস। সেগুলো হলো- মেসার্স আইয়ুব ট্রেডিং এজেন্সি, মেসার্স আরিফ মেরিটাইম ইন্টারন্যাশনাল সিএন্ডএফ লিমিটেড, মেসার্স আলম এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স তাকিন ট্রেড সিন্ডিকেট, মেসার্স একতা ক্লিয়ারিং এজেন্সিজ লিমিটেড, মেসার্স তানিয়া কার্গো সার্ভিসেস, মেসার্স সিটি ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, মেসার্স জে. জে. মেসার্স বেঞ্জ মেকার, মেসার্স ইন্টারনাল ট্রেড ইন্ক, মেসার্স বাসিম এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স কুলগাঁও ট্রেডার্স, মেসার্স মানিক এন্ড ব্রাদার্স, মেসার্স পানামা ট্রেড লিংকার্স, মেসার্স আল ফাহিম (বিডি) লিমিটেড, মেসার্স জলসুকা ট্রেডার্স (প্রাঃ) লিমিটেড, মেসার্স খান এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স ইন্টারওয়েজ ট্রেডিং এজেন্সি, মেসার্স চাঁন্দু কর্পোরেশন, মেসার্স আহনাফ ট্রেড লিংক, মেসার্স মাসকো ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, মেসার্স দ্রুত ইন্টারন্যাশনাল, মেসার্স আর ইসলাম এজেন্সি, মের্সাস এসজিএস কোম্পানি, মেসার্স বিএনজেড ইন্টারন্যশনাল, মেসার্স প্রগতি কার্গো সার্ভিসেস, মেসার্স এসএফ ইন্টারন্যাশনাল, মের্সাস সুরমা এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স খন্দকার ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, মেসার্স নিউ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সিজ লিমিটেড এবং মেসার্স ফ্রেন্ডস ইন্টারন্যাশনাল। জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. ফখরুল আলম দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমদানিকারক হোক আর সিএন্ডএফ এজেন্ট- অসদুপায় অবলম্বন করে কারো পার পাওয়ার সুযোগ নেই। রাজস্ব সুরক্ষায় কাস্টমসের কর্মকর্তারা সব সময় তৎপর রয়েছে।












