সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর সিটি নির্বাচন চায় আ. লীগ

অপপ্রচার বিএনপির চিরাচরিত অভ্যাস আজাদীকে একান্ত সাক্ষাৎকারে হানিফ

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২১ জানুয়ারি, ২০২১ at ৬:০৬ পূর্বাহ্ণ

মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। কেন্দ্রীয়ভাবে তিনি চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত। চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক বিষয়সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তিনি প্রায় সময় চট্টগ্রাম আসেন। আসন্ন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রাক্কালে গতকাল বুধবার তিনি চট্টগ্রাম আসেন। এসময় স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবাদপত্র দৈনিক আজাদীকে একান্ত সাক্ষাতকারে তিনি আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনসহ চট্টগ্রাম মহানগর-উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক নানা বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেন। নিম্ন তা হুবহু তুলে ধরা হলো-
আজাদী : আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন দল। আপনি এই দলের চট্টগ্রামের দায়িত্বপ্রাপ্ত শীর্ষ নেতা। আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে আপনাদের দলের ভাবনা কী?
মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি : আমরা স্থানীয় নির্বাচনসহ সকল নির্বাচনকে গুরুত্ব দিয়ে থাকি। আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক দল হিসেবে সুষ্ঠু-সুন্দর পরিবেশে নির্বাচন হোক সেটাই চায়। এই দেশের মানুষ আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপর আস্থাশীল। এই দেশের জনগণ যে আমাদের নেত্রীর (শেখ হাসিনা) উপর আস্থাশীল তার প্রমাণ হলো-দুই ধাপে দেশে পৌরসভা নির্বাচন হয়েছে। চট্টগ্রামে দুটি পৌরসভায় নির্বাচন হয়েছে। এই নির্বাচন শতভাগ সুষ্ঠু হয়েছে। তাতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়লাভ করেছেন। সামনে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। সেখানেও আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী জয়লাভ করবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।
আজাদী : আপনি ক্ষমতাসীন দলের একজন শীর্ষ নেতা হিসেবে কেমন নির্বাচন চান?
মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি : বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচনকে উৎসব মুখর হিসেবে দেখতে চান। আমরা যদি বিগত ১শ’ বছরের নির্বাচনের দিকে তাকাই দেখা যাবে প্রতিটি নির্বাচনই উৎসব মুখর ছিল। আমরা চাই চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনও উৎসব মুখর হোক, ভোটাররা নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে আসুক, ভোট দিক। আমরা মনে-প্রাণে এমন পরিবেশ দেখতে চাই।
আজাদী : বিএনপির মেয়র প্রার্থীর দাবি- আসন্ন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন যেন সুষ্ঠু হয়। নির্বাচন কমিশন এবং প্রশাসন যেন নিরপেক্ষ থাকে। নির্বাচনে প্রশাসন নিরপেক্ষ থাকবে কিনা?
মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি : বিএনপির এটা চিরাচরিত অভ্যাস। তারা অসত্য বক্তব্য ও তথ্য দিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করে। পত্র-পত্রিকা এবং মিডিয়ায় বিএনপির নেতাদের বক্তব্য দেখলে এতে স্পষ্ট হয়ে যায়। নির্বাচনে তারা জয়লাভ করলে তখন তারা বলবে ভালো নির্বাচন হয়েছে। যদি জয়লাভ না করে তখন বলবে নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে। গত দুটি পৌরসভা নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। কোথাও বিন্দুমাত্র গোলযোগ হয়নি। তারপরও তারা বলেছে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। সেক্ষেত্রে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়েও বিএনপির বিভ্রান্তি ছড়াতে পারে। এটার একটি কারণ হতে পারে- মিথ্যা বক্তব্য দিয়ে মিডিয়ার সামনে ঠিকে থাকা। এটা ছাড়া তাদের আর কোনো হাতিয়ার নেই। দেশে দুই ধাপে যেসব পৌরসভায় নির্বাচন হয়েছে তাতে তো পরিস্কার হয়ে গেছে- প্রশাসন নিরপেক্ষভাবে ভোটগ্রহণ করেছে। তাতে বুঝা যায় আসন্ন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন শতভাগ সুষ্ঠু হবে।
আজাদী : বিএনপির মেয়র প্রার্থী নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করেছেন- চসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচন পরিচালনার প্রধান সমন্বয়ক করেছেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপিকে। এমপি হিসেবে তিনি নির্বাচনী বিষয় নিয়ে কথা বলা নির্বাচনী আইনের লক্সঘন বলে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করা হয়েছে। এই ব্যাপারে আপনার মতামত কি?
মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি : নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী কোনো সংসদ সদস্য নির্বাচনী প্রচার-প্রচরণায় অংশ নিতে পারবেন না। কিন্তু দলীয় সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চালাতে পারবেন না এমন কোনো কথা আইনে নেই। সুতরাং ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন দলের পক্ষ থেকে সাংগঠনিক বিষয়ে কাজ করছেন।

আজাদী : আপনি চসিক নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর দুবার চট্টগ্রাম আসলেন, বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীদের নিবৃত্ত করার ব্যাপারে উদ্যোগও নিয়েছেন, কিন্তু তারা এখনো অনমনীয়- এই ব্যাপারে তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তী ব্যবস্তা কি?
মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি : দল থেকে শুধুমাত্র মেয়র পদে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। কাউন্সিলরদের দলীয়ভাবে সমর্থন দেয়া হয়েছে। দল সমর্থিত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অনেকে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। এটা সুস্পষ্টভাবে দলীয় শৃক্সখলা ভঙ্গের সামিল। আমরা বিদ্রোহীদের নিবৃত্ত করার ব্যাপারে মহানগর আওয়ামী লীগকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম। তারা সফল হয়নি। আমরা আলাপ করেছি- বিদ্রোহীরা যাতে তাদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন নেন। যদি তারা প্রত্যাহার করে না নেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যারা দলীয় শৃক্সখলা ভঙ্গ করেছেন তারা ভবিষ্যতে কোনো নির্বাচনে মনোনয়ন পাবেন না এবং দলীয় কোনো পদ-পদবীও পাবেন না। এটা আমাদের নেত্রীর (শেখ হাসিনা) সুস্পষ্ট নির্দেশনা। এখনো যারা বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন, তারা যদি সরে না দাঁড়ান, তাহলে ভবিষ্যতে তাদের রাজনীতি করা কঠিন হয়ে যাবে। আর যদি মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন, নির্বাচনী মাঠ থেকে সরে দাঁড়ান, তাহলে দলীয় শৃক্সখলা ভঙ্গের অভিযোগ বা শাস্তি থেকে রক্ষা পাবেন।
আজাদী : চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অনেক ওয়ার্ডে দেখা যাচ্ছে কাউন্সিলরদের মধ্যে আওয়ামী লীগই আওয়ামী লীগের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী- এটা নিরসরে কোনো উদ্যোগ নিবেন কিনা?
মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি : বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীদের ব্যাপারে পরিস্কারভাবে বার্তা দিয়েছি- শৃক্সখলা ভঙ্গের ব্যাপারে কঠোর শাস্তি পেতে হবে। নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালে রাজনীতির পথ অনেক পরিস্কার হবে। আর সংঘাত হলে আইন শৃক্সখলা বাহিনী খুবই তৎপর। কোথাও যেন সংঘাত না হয় এই ব্যাপারে আইনশৃক্সখলা বাহিনী কঠোর ব্যবস্থা নেবে।
আজাদী : কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী বিজয়ী হলে তাদের দলে বরণ করে নেয়া হবে কিনা?
মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি : নির্বাচিত হওয়া না হওয়া বড়ো কথা নয়। সেটা পরের বিষয়। প্রথমত তাদেরকে দলীয় শৃক্সখলা ভঙ্গের দায়ে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।
আজাদী : আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা হিসেবে চট্টগ্রাম মহানগর ও দক্ষিণ জেলার ৭ বছরের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি নিয়ে কী ভাবছেন?
মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি : মহানগর এবং দক্ষিণ জেলায় সম্মেলন করার ব্যাপারে আমরা আগে থেকেই চেষ্টা করেছি। শুধু চট্টগ্রাম মহানগর বা দক্ষিণ জেলা নয়- চট্টগ্রাম বিভাগে অনেক জেলার সাংগঠনিক অবস্থান অনেক নাজুক। চট্টগ্রাম মহানগর এবং দক্ষিণ জেলার সাংগঠনিক অবস্থা সম্পর্কে আমরা অবহিত আছি। দক্ষিণ জেলার মধ্যে বাঁশখালী উপজেলায় গত ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সম্মেলন হয়নি। বোয়ালখালী উপজেলায়ও সম্মেলন হয়নি। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পর চট্টগ্রাম মহানগরে হাত দেবো। মহানগরকে সাংগঠনিক ভাবে ঢেলে সাজাবো। একই ভাবে দক্ষিণ জেলাকেও।
আজাদী : চসিক নির্বাচনে মেয়র পদে আপনাদের প্রার্থীর জয়ের ব্যাপারে কতটুকু আশাবাদী?
মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি : মেয়র নির্বাচনে আমাদের প্রার্থীর জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। আমাদের প্রার্থীর ব্যাপারে কোনো নেতিবাচক কিছু নেই। তিনি ক্লিন ইমেজের প্রার্থী। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সারাদেশে যে উন্নয়ন হয়েছে, উন্নয়নের ধারা যেভাবে অব্যাহত রয়েছে, বিশেষ করে চট্টগ্রামে যে উন্নয়নগুলো হয়েছে মানুষ তা কখনো কল্পনাও করেনি। চট্টগ্রামে যানজট নিরসনে ফ্লাইওভার করা হয়েছে। আউটার রিং রোড করা হয়েছে। বায়েজিদ-ফৌজদারহাট লিঙ্ক রোড, এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ের কাজ চলছে। কর্ণফুলীর তলদেশে টানেলের কাজ চলছে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল লাইনের কাজ চলছে। এসব বিবেচনা করে যারা দেশকে ভালোবাসেন, দেশের উন্নয়নকে ভালোবাসেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীকেই ভোট দিবেন। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর জয়ের বিকল্প কিছু নেই। বিএনপি প্রার্থী জয়লাভ করলে চট্টগ্রামের জন্য কী লাভ হবে? দেশের জন্য কী লাভ হবে? তিনি দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন, এতে জনগণ বঞ্চিত হবে। চট্টগ্রাম বঞ্চিত হবে। চট্টগ্রামের মানুষ জেনে শুনে এই ভুল করবে না। দেশের মানুষ এখন অনেক সচেতন। তারা উন্নয়ন চায়, শান্তি চায়। সুতরাং আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী জয়লাভ করলে চট্টগ্রামের মানুষের নাগরিক সেবা নিশ্চিত হবে। সরকারের কাছ থেকে উন্নয়নের বরাদ্দ পাবে। চট্টগ্রামবাসী উপকৃত হবে। সুতরাং ২৭ জানুয়ারি চট্টগ্রামবাসী ভুল করবে না। উন্নয়নের স্বার্থে আমাদের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীকেই বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী করবে- এটা আশা করি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিভেদ ভুলে নির্বাচনী মাঠে নামার প্রত্যয়
পরবর্তী নিবন্ধকরোনায় দেশে সাড়ে আট মাসে সবচেয়ে কম মৃত্যু