নাজিম হিকমত। তুরস্কের বিখ্যাত বিপ্লবী কবি। তুরস্কে তিনি আধুনিক কবিতার জনক হিসেবে পরিচিত। মানবিক আবেদন সমৃদ্ধ তাঁর কবিতা বিশ্বসাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ। নাজিম হিকমতের জন্ম ১৯০২ সালের ২০-এ জানুয়ারি তুরস্কে। শৈশবে তাঁর কবিতা লেখার হাতেখড়ি। মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সে পুরোদস্তুর কবিতা লিখতে শুরু করেন। এরই মধ্যে বেজে ওঠে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের দামামা। এ সময় তুরস্ক মিত্রশক্তির দখলে চলে গেলে যুদ্ধে অংশ নেবার জন্য নাজিম গোপনে তুরস্ক ছেড়ে এশিয়া মাইনর হয়ে ঘুর পথে চলে যান রাশিয়ায়।
দীর্ঘকাল তিনি মস্কোয় অবস্থান করেন। এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের পাশাপাশি রুশ শিল্প-সাহিত্য নিয়ে লেখাপড়া তাঁর জীবনের এক উল্লেখযোগ্য অধ্যায়। মস্কোয় তিনি ঘনিষ্ঠ সাহচর্য পান রুশ কবি মায়াকোভস্কির। নাজিমের সামনে খুলে যায় কবিতার নতুন দিগন্ত। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষে স্বাধীন তুরস্কে ফিরে একটি বামপন্থী পত্রিকায় কাজ শুরু করেন কবি। এই অপরাধে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলে তিনি পালিয়ে আবার মস্কো চলে যান। ১৯২৮ সালে অনুমতি মেলে দেশে ফেরার। স্বদেশ ভূমিতে তিনি পুরোদমে কবিতা লিখতে শুরু করেন। পাশাপাশি অর্থ উপার্জনের জন্য কখনো প্রুফ রিডার, কখনো চিত্র নাট্যকার এবং কখনো সাংবাদিকতার কাজ করেছেন। এ সময় তাঁর অনেকগুলো কবিতার বই বেরোয়। বিপ্লবের মন্ত্রে উজ্জীবিত এইসব কবিতার জন্যে তাঁকে জেলও খাটতে হয় কয়েক দফায়। ১৯৩৮ সালে সেনাবাহিনির মধ্যে বিদ্রোহ সংঘটনের অভিযোগ এনে নাজিম হিকমতকে ২৮ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ পর্যায়ে তাঁকে কারাবন্দী থাকতে হয় ১৬ বছর। কারাগারে বন্দী অবস্থায় তিনি অজস্র কবিতা লেখেন। কর্তৃপক্ষের নজর এড়িয়ে এসবের কিছু কিছু বাইরেও পাঠান, কিছু হারিয়ে যায়। নাজিম হিকমতের মুক্তির দাবিতে বিশ্ব জনমত সোচ্চার হয়ে ওঠে। ১৯৪৯ সালে প্যারিসে গড়ে ওঠে বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিদের নিয়ে আন্তর্জাতিক সংগঠন। বন্দীদশায় অসুস্থ কবি ১৯৫০ সালে প্রায় দু সপ্তাহের জন্য এক অনশন পালন করেন। সে বছরই তিনি লাভ করেন শান্তিতে নোবেল পুরস্কার। ১৯৫১ সালে কবিকে মুক্তি দেওয়া হয়। নানা প্রতিকূলতার কারণে তিনি দেশ ছেড়ে রাশিয়ায় পাড়ি জমান। ১৯৬৩ সালের ৬ই জুন মানবমুক্তির কবি নাজিম হিকমত প্রয়াত হন।