টেকনাফ-কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়কের মাথা ভাঙ্গা এলাকার জমজমাট জনপদ এখন ভুতুড়ে এলাকায় পরিণত হয়েছে। টেকনাফ উপজেলার বাহার ছড়া ইউনিয়নের বড় ডেইল গ্রামের মাথা ভাঙ্গায় ঝাউবাগানের পাশে ছিল বাজার, মসজিদ, কবরস্থান, মক্তবসহ বিশাল জনপদ কিন্ত কালের পরিক্রমায় এখন সেখানে কিছু নেই। আছে শেষ চিহ্ন হিসেবে মাথা ভাঙ্গা জামে মসজিদের কিছু চিহ্ন। কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের পশ্চিমে সাগর ঘেঁষে এখনো মাথা উঁচু করে এ মসজিদটি জানান দিচ্ছে যুগ যুগান্তরের জনবসতির।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফজলুর রহমান মিয়াজি প্রকাশ ফজল মিজ্জি ১৯৯৫২-৫৩ সালের দিকে প্রায় ৬০ শতক জমি দান করে এ মসজিদ ও একটি মক্তব তৈরি করেন। পাহাড়ি বালি, সিমেন্ট ও পাথর দিয়ে এটি নির্মাণ করা হয়। মক্তবের জন্য নিয়োজিত মৌলভী মসজিদে ইমামতী করতেন। নিয়োগ দেয়া হয়েছিল মুয়াজ্জিনও। উক্ত মসজিদের নির্মাণ কাজ শেষ করে ১৯৫৪ সালের দিকে ফজলুর রহমান মিয়াজি হজ্জে গমন করেন এবং সেখানেই ওনার মৃত্যু হয়। এরপর থেকে ওনার বংশধরেরা মসজিদটি দেখভাল করে আসছিলেন কিন্ত ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে প্রথম আঘাত হানে এ জনপদে। কবরস্থান, বাজার, মসজিদ ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
এলাকার লোকজন ঐ স্থান ছেড়ে আরো ভেতরের দিকে গিয়ে ডিসি রোডের পাশে নতুন করে আর একটি জামে মসজিদ নির্মাণ করেন। পুরাতন এই মসজিদে আর জুমার নামাজ পড়ানো না হলেও স্থানীয় নজির আহমদ অনেক দিন মসজিদে আজান চালু রেখেছিলেন এবং নামাজ আদায় করতেন কিন্তু তিনি বয়োবৃদ্ধ হয়ে পড়ায় ২০/২২ বছর ধরে সেখানে আর আজান বা নামাজ পড়ে না কেউ। নজির আহমদ ১২/১৩ বছর আগে মারা যায় বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দা সুলতান আহমদ। তিনি বলেন, “জনৈক কাজী সাহেব এখানে মক্তবে পড়াশোনা করাতেন। তিনিও এই মসজিদে নামাজ পড়েছেন। আশপাশের লোকজন জুমার নামাজ পড়তেন। বিশাল বাজার, কবরস্থান সবকিছু এখন কালের অতলে হারিয়ে গেলেও এখনো মসজিদের উঁচু মিনার দাঁড়িয়ে আছে।”
বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ৮৪ বছরের প্রবীণ মৌলানা হাবিবুল্লাহ বলেন, “আমার নানা ফজলুর রহমান মিয়াজি এটি তৈরি করার সময় আমার বয়স ১০/১২ বছর ছিল। ৬০ শতক জমি দান করে তিনি পাথর, পাহাড়ি বালি ও সিমেন্ট দিয়ে মাথা ভাংগা মসজিদটি ১৯৫২/৫৩ সালের দিকে তৈরি করেন। পরে ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে এটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এরপর এটির জায়গায় নতুন মসজিদ তৈরি করা হয় যা এখনও ফজলুর রহমান মিয়াজি দানকৃত জমির উপর। আমরা এর দেখভাল করে যাচ্ছি।” ‘
তিনি আরো বলেন, “ঐ মসজিদে আমরা নিয়মিত নামাজ আদায় করতাম এবং ঐ মসজিদের সাথে মক্তবে পড়াশোনা করেছি।” চেয়ারম্যান হাবিবউল্লাহর বক্তব্য সমর্থন করেন স্থানীয় হাজী আব্দুল রহমানসহ অনেক মুসল্লি।
আজ মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মূলত মসজিদটি জঙ্গলে ঢাকা। তাই কেউ সেখানে তেমন যায় না। অনেকের চোখে পড়ছে না কারণ মসজিদটির আশপাশে আছে গাছ, তার শেকড় ও অন্যান্য বনলতা যা ভবনটির বাইরের অংশকে ঢেকে রেখেছে।
মসজিদের ভেতরে ঢুকে দেখা যায় মসজিদটি এক গম্বুজবিশিষ্ট। মসজিদটির দেয়ালঘেঁষে একটি বড় মিম্বর রয়েছে যার দৈর্ঘ্য (উত্তর-দক্ষিণ) মিম্বরসহ ১৬ ফুট এবং প্রস্থ (পূর্ব-পশ্চিম) ১২ ফুট।
মসজিদটির একটি মেহরাব রয়েছে এবং দেয়ালে ছোট ছোট কয়েকটি খোপ রয়েছে। মসজিদটি পাথর, বালু, চুন এবং সুরকি দিয়ে নির্মিত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
টেকনাফ বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মৌলভী আজিজ উদ্দিন বলেন, “মেরিন ড্রাইভের পশ্চিমে বনলতার আড়ালের মসজিদটি অনেক পুরাতন তাতে কোনো সন্দেহ নেই। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।”