গত কয়েক মওসুমের উৎপাদিত উদ্বৃত্ত লবণ মাঠেই পড়ে রয়েছে। নিশ্চিতই হয়নি ন্যায্যমূল্য। তার ওপর সিন্ডিকেট করে বিদেশ থেকে আমদানি অব্যাহত থাকায় এবছর লবণ চাষিরা মাঠে নামছেন না। চলতি উৎপাদন মওসুমে খালি পড়ে আছে বিপুল পরিমাণ জমি। কোনো কোনো উপজেলায় চাষ হলেও আনুপাতিক হার একেবারে নগন্য। দেশের একমাত্র লবণ উৎপাদনকারী অঞ্চল কক্সবাজারের ৬ উপজেলা এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার বর্তমান চিত্র এটি। যারা মাঠে নেমেছেন ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে শঙ্কা কাজ করছে তাদের মাঝে। তারা লবণ শিল্পকে বাঁচাতে সরকারের যথাযথ পদক্ষেপ আশা করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমান বাজারে আয়োডাইজ মিশ্রিত লবণ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৩০-৪০ টাকায়। অথচ মাঠপর্যায়ে এক কেজি লবণের দাম মাত্র ৪ টাকার মতো। সিন্ডিকেটের পকেটে লাভ ঢুকলেও বঞ্চিত হচ্ছে চাষিরা। উৎপাদন খরচের অর্ধেকও দাম পাচ্ছে না তারা। মাঠ থেকে এক কেজি লবণ উৎপাদন খরচ পড়ছে সাড়ে ৬ টাকা। ২০১৭ সালে ‘বাফার স্টক’ গড়ে তোলার জন্য সরকার জাতীয় লবণনীতি-২০১৬ এর আলোকে পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিলেও তা কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ। তাই লবণ চাষিদের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব হচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন লবণ সংশ্লিষ্টরা। সরজমিন কক্সবাজারের চকরিয়ার খুটাখালী ও ডুলাহাজারা ইউনিয়নের ৭৮২ দ্রোনের বড় লবণমাঠ বহলতলী ঘোনায় গিয়ে দেখা গেছে, ইতোমধ্যে লবণ উৎপাদন মওসুম শুরু হলেও অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার মাঠেই নামেন নি চাষিরা। দিগন্তজোড়া লবণের মাঠ খালিই পড়ে রয়েছে। বহলতলী ঘোনার লবণ চাষি ডুলাহাজারার বৈরাগীর খিল গ্রামের আবদুল কাইয়ুম দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় গতবছরের উৎপাদিত প্রায় ৩০০০ মণ লবণ এখনো মাঠেই পড়ে রয়েছে। তার ওপর সিন্ডিকেট করে বিদেশ থেকে লবণ আমদানি অব্যাহত থাকায় বহলতলী ঘোনার বড় লবণমাঠে কোনো চাষিই নামেননি লবণ উৎপাদনে। সরকারকে দেশীয় লবণ শিল্পকে বাঁচাতে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে।’
একইঘোনার লবণচাষি ও আওয়ামী লীগ নেতা শামশুল আলম ও জামিল হোছাইনের মতে, দেশে উৎপাদিত লবণের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে শিল্প মন্ত্রণালয় অনেকটা পজেটিভ হলেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একেবারে উদাসীন। সম্প্রতি শিল্পসচিব কক্সবাজারে এসে লবণ সংশ্লিষ্টদের বৈঠক করে হতাশা কাটাতে পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দিলেও তার কোনো বাস্তবায়ন দেখা যাচ্ছে না।
কক্সবাজারের মহেশখালী, চকরিয়া, পেকুয়া, কুতুবদিয়াসহ বিভিন্ন উপজেলার অসংখ্য চাষি দৈনিক আজাদীকে বলেন, প্রতিবছর লবণ উৎপাদন মওসুমে চাষিদের মধ্যে ধুম পড়ে যেত মাঠে মাঠে। তারা ব্যস্ত সময় পার করলেও সেই চিরচেনা দৃশ্য এবার নেই।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) কক্সবাজার লবণ প্রকল্প কার্যালয় সূত্র মতে, চলতি ২০০০-২০২১ মওসুমে দেশে লবণের চাহিদার বিপরীতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৯ দশমিক ৫০ লাখ মেট্টিক টন। তবে গতবছরের উদ্বৃত্ত হিসেবে মজুদ রয়েছে প্রায় ৪ লক্ষ মেট্টিক টন লবণ। গতকাল ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত বিসিকের জরিপ অনুযায়ী চকরিয়া এবং সদর উপজেলার কয়েকটি মৌজা ছাড়া বাকী উপজেলায় লবণ উৎপাদনে মাঠে নেমেছে সবমিলিয়ে প্রায় ৭০ শতাংশ চাষি। তন্মধ্যে গতকাল রবিবার পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৪২ হাজার মেট্টিক টন লবণ উৎপাদন হয়েছে। যা গতবছর এইসময়ে প্রায় ৪০ হাজার মেট্টিক টন ছিল। তবে বিসিকের এই তথ্যে গড়মিল রয়েছে বলে দাবি করেছেন চট্টগ্রাম লবণ চাষি সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও লবণ ব্যবসায়ী হারুণুর রশিদ।
এ ব্যাপারে বিসিক কক্সবাজার কার্যালয়ের উপ-পরিচালক হাফিজুর রহমান দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘লবণ চাষিদের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া লবণ শিল্পে যেসব সমস্যা রয়েছে তা আন্তঃ মন্ত্রণালয়ের বৈঠকের মাধ্যমে সমাধান করা হবে।’












