প্রলম্বিত রোহিঙ্গা সংকট : রহস্য-উৎস কী!

ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী | শুক্রবার , ১৫ জানুয়ারি, ২০২১ at ৭:৪১ পূর্বাহ্ণ

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সরকার পরিচালিত বর্বরতম অভিযানে নৃশংস গণহত্যা ও নির্যাতনের শিকার প্রায় বার লক্ষ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ করে। প্রাণ রক্ষায় পালিয়ে আসা বিপুল সংখ্যক এসব অসহায় মানুষকে মনুষ্যত্ব-মানবিকতায় প্রোজ্জ্বল বাংলাদেশের জনগণ ও সরকার সাদরে বরণ করে। সীমান্তবর্তী উখিয়া-টেকনাফ অঞ্চলে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ জীবন যাপনে মৌলিক চাহিদা পূরণসহ সামগ্রিক সার্থক ব্যবস্থাপনায় বিশ্বপরিমন্ডলে বাংলাদেশ নতুন অধ্যায় রচনা করেছে। নিকট অতীতে অর্থনীতিতে সমৃদ্ধ ইউরোপের ২৭ টি উন্নত রাষ্ট্র বিশ্বের শক্তিমান পরাশক্তি সমূহের ঘৃণ্য কদাচার আক্রমণে ইয়েমেন, সিরিয়া, ইরাক ও অন্যান্য দেশ থেকে চরম নির্যাতিত-নিগৃহীত প্রায় ১০ লক্ষ শরণার্থীকে ঘিরে অসহনীয় পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিল। এখনও দক্ষিণ আমেরিকা-আফ্রিকা-অনুন্নত দেশের বিপুল সংখ্যক দেশান্তরী নাগরিকের মানবেতর জীবন থেকে উদ্ধারকল্পে শিল্পোন্নত দেশসমূহে অভিবাসনের প্রচেষ্টা যারপরনাই যন্ত্রণাদগ্ধ। অর্থাভাব ও খাদ্য সংকট নিরসনে প্রচন্ড তুষারপাত-ঠান্ডাজনিত রোগ ব্যাধি নিয়ে গভীর পার্বত্য অঞ্চল এবং সাগর-মহাসাগরে কল্পনাতীত কষ্টের ভাসমান অভিষঙ্গে ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত। এদের জীবন সংহারের বহু ঘটনা-দুর্ঘটনা প্রায় প্রতিদিনই কমবেশি বিশ্ববাসী অবহিত হচ্ছে। একদিকে লুম্পেন বিশ্বায়ন মোড়কে কথিত ভোগবাদী বিশ্বের বিলাসবহুল দিনাতিপাত, অন্যদিকে তাদেরই কদর্য ভূ-রাজনীতি, অর্থনীতি-বাজার দখল, আধিপত্যবাদে সৃষ্ট দরিদ্র দেশসমূহে অনুন্নয়নের উন্নয়ন চৌহদ্দির বিকাশ বিস্তৃত হচ্ছে। ক্ষুধা-দারিদ্র্য-পুষ্টিহীনতা-অস্বাস্থ্যকর অবস্থার করুণ দৃশ্যাদৃশ্য বিশ্বের বিবেকবান মানুষের হৃদয়ে গভীর রক্তক্ষরণের বিপরীতে পশুতুল্য এসব অর্থ-ক্ষমতা-প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠায় নিরন্তর লিপ্ত জাতিরাষ্ট্র তাদের শোষণ-শাসনের অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। আর্থিক-কারিগরি সাহায্যের আড়ালে জাতিসংঘের অধীনে বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার পক্ষ থেকে প্রদেয় সহযোগিতা কদাচার উদ্দেশ্য সাধনে কার্যকর রয়েছে। রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে একই ধারাবাহিকতায় তাদের মুখরোচক বাচনিক আশ্বাস বাস্তবায়নে এখনো ফলপ্রসূ অর্জন দৃশ্যমান নয়। তিন বছরের অধিককাল অতিক্রান্ত হলেও বিপুল জনঅধ্যুষিত ক্ষুদ্রায়তনের বাংলাদেশকে মিয়ানমার ও রোহিঙ্গাদের যৌক্তিক-অযৌক্তিক ইচ্ছাকেই প্রাধান্য দিতে হচ্ছে।
বাংলাদেশের প্রায় ১০ হাজার একর ভূমি ব্যবহারকারী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নতুন আগমনে সাড়ে ছয় হাজার একর ভূমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে এক লাখ রোহিঙ্গাকে স্থানান্তরের জন্য নান্দনিক আবাসনসহ পর্যাপ্ত সুবিধা সম্বলিত ভাসানচরে দুই দফায় ৪০৬ টি পরিবারের প্রায় ৩ হাজার ৪৪৬ জন রোহিঙ্গার অবস্থান প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। চলতি মাসের শেষ দিকে আরো ২ হাজার রোহিঙ্গাকে সেখানে পাঠানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। দু:খজনক হলেও সত্য, বাস্তুচ্যুত এসব রোহিঙ্গা শরণার্থীরা দেশে প্রতিনিয়তই নানামুখী সমস্যা তৈরি করে চলেছে। পরিবেশ ধ্বংসের সাথে মাদক ব্যবসা ও সেবন-ডাকাতি-হত্যা-খুন-নিজেদের মধ্যে মারামারিসহ দু:সহ ঘটনায় পুরো কঙবাজার জেলায় অসহনীয় পরিবেশ তৈরি হয়েছে। অবৈধ ও অনৈতিক পন্থায় বাংলাদেশের পাসপোর্ট-জন্মনিবন্ধন-জাতীয় পরিচয়পত্রসহ বিভিন্ন সনদ সংগ্রহ করে বিদেশ গমন-নারী পাচারের হীন স্বার্থসিদ্ধিতে তৎপর রয়েছে। এসব উদ্ভূত সমস্যা মোকাবেলায় প্রশাসন ও আইনশৃংখলা বাহিনীকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। জনশ্রুতি মতে এমনিতে রোহিঙ্গাদের কুশিক্ষা-কুপ্রবৃত্তি-কুআচরণে শুধু রাখাইন রাজ্যে নয়; দীর্ঘ সময়কাল ধরে বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশ এবং বাংলাদেশী পরিচয়ে মধ্যপ্রাচ্য-দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশসমূহে বিশেষ করে সৌদি আরব-মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়ায় বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে আসছে।
এদের যথাযথ প্রত্যাবর্তন নিয়ে বাংলাদেশের নানা উদ্যোগ সহানুভূতির দৃষ্টিতে দেখা হলেও; প্রত্যাবাসন সমস্যার সমাধান পরিপূর্ণভাবেই রহস্যাবৃত্ত। আদৌ চীন-ভারতসহ বিশ্ব সভার সংশ্লিষ্ট নেতৃবৃন্দ সমস্যা উত্তরণে আন্তরিক কিনা; তা নিয়ে জনমনে অপরিমেয় সন্দেহ-সংশয়ের গভীর উদ্রেক হয়েছে। ১০.০১.২০২১ চট্টগ্রামের এক অনুষ্ঠানে রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনে মিয়ানমার সরকারের আন্তরিকতার প্রচণ্ড অভাবের বিষয়টি সম্মানিত পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে উপস্থাপিত হয়েছে। মন্ত্রী মহোদয় ১৯৭৮ এবং ১৯৯২ সালে রোহিঙ্গাদের একই ধরনের অনাহুত বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার বিষয়সমূহ উল্লেখ করেন। তিনি দাবী করেছেন ১৯৯২ সালে ২ লাখ ৫৩ হাজার শরণার্থীর মধ্যে আলোচনা সাপেক্ষে ২ লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গাকে মিয়ানমার সরকার ফিরিয়ে নিয়েছে। গণমাধ্যম প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়; উক্ত অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, “ইতোমধ্যে চারটা মিটিং করেছি। সর্বশেষ মিটিংটা খুবই পজিটিভ মিটিং ছিলো। তারা একবাক্যে ওয়াদা করেছে, তারা লোকগুলোকে (রোহিঙ্গা) বুঝাবে। তাদের দেশের উন্নতি হয়েছে। অন্য সময় কিন্তু বলতো না। কিন্তু রোহিঙ্গারা তাদের সরকারকে বিশ্বাস করে না। সেইজন্য আমরা মিয়ানমারকে বলেছি, তোমাদের বিশ্বাসের ফারাক রয়েছে। বিশ্বাস বাড়ানোর জন্য আমরা তিনবার প্রস্তাব দিয়েছি। কিন্তু তারা ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ কোনো উত্তর দেয়নি। আমরা আমাদের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আলোচনার মাধ্যমে বড় বড় সমস্যার সমাধান করেছি। আমরা মনে করি, আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান সম্ভব।”
প্রাসঙ্গিকতায় প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া কার্যকরণে রোহিঙ্গাদের পক্ষ থেকে আরোপিত শর্তগুলো মিয়ানমার বা প্রভাব বিস্তারকারী দেশসমূহ মোটেও আমলে নিয়েছে বলে নূন্যতম প্রতীয়মান হচ্ছে না। শর্তগুলোর অন্যতম হচ্ছে; রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করা, কেড়ে নেওয়া ভিটেমাটি ফেরত, জানমালের নিরাপত্তা, গণহত্যা-ধর্ষণসহ নির্যাতনে জড়িত সেনাবাহিনী-উগ্রপন্থী মগদের আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার, ২০১২ সালে ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করে আশ্রয় শিবিরে রাখা ১ লাখ ২৮ হাজার রোহিঙ্গাকে নিজেদের বাসস্থান ফিরিয়ে দেয়া ইত্যাদি। গুরুত্বের সাথে বিবেচনার বিষয়টি হচ্ছে, জাতিসংঘের উদ্বাস্তু বিষয়ক হাই কমিশন ও স্বাস্থ্যসেবা কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী ৩২টি রোহিঙ্গা শিবিরে গড়ে বছরে ৩০ হাজার ৪ শত ৩৮ জন শিশু জন্ম নিচ্ছে। বর্তমানে এ ধরনের শিশুর সংখ্যা প্রায় সোয়া লক্ষাধিক ছাড়িয়েছে। এছাড়া আশ্রয়প্রার্থী এতিম শিশু রয়েছে ৩৯ হাজার ৮৪১ জন।
অতিসম্প্রতি ভাসানচরে পাড়ি জমানো রোহিঙ্গাদের অতিশয় সন্তুষ্টি এবং ছেড়ে আসা ক্যাম্পগুলোকে নরকের সাথে তুলনা অন্যান্য রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরে অধিকমাত্রায় আগ্রহশীল করে তুলছে। অধিকতর প্রচারিত যে; জাতিসংঘ-ইউরোপীয় ইউনিয়ন-হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল-আন্তর্জাতিক অর্থায়নে পরিচালিত বিভিন্ন তথাকথিত উন্নয়ন সংস্থাগুলোর অসৎ উদ্দেশ্য সাধন-অদৃশ্য এজেন্ডা বাস্তবায়নে এই স্থানান্তরের বিরোধীতা ক্রমাগতভাবে কঙবাজারসহ দেশবাসীকে অপরিসীম হতাশাগ্রস্ত করছে। জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিভেন গোজারিচ’র স্থানান্তরকে কেন্দ্র করে মন্তব্য কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বিভিন্ন ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে বিশ্বকে বিভ্রান্ত করার কূটচালও মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং দেশের স্বাধীন-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে কোন চক্রান্ত সম্পর্কিত কিনা তার অনুসন্ধান অতীব জরুরি।
দেশবাসী সম্যক অবগত আছেন যে, বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু ভারতের জনগণ ও সরকারের পক্ষ থেকে রাখাইন রাজ্যে বেশকিছু বাড়ি নির্মাণ করা হলেও তাদের প্রত্যাবাসনে চীনকে প্রভাবিত করার বিষয়ে দেশবাসী সমধিক সন্দিহান। গভীর সমুদ্র বন্দর ও অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় চীনের আগ্রহ, ভূ-রাজনীতি নিয়ন্ত্রণে চীন-মিয়ানমারের নিগূঢ় সম্পর্ক ও বিশ্বপরিমন্ডলে সাম্প্রতিক চীনের প্রভাব রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সঙ্কট দ্রুততর সময়ের মধ্যে নিরসন সুদূরপরাহত মনে হচ্ছে। আন্তর্জাতিক ইসলামিক সম্মেলন সংস্থা (ওআইসি) ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইউ) কর্তৃক যৌথভাবে গত ১৮ নভেম্বর চতুর্থ বারের মতো রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘে প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। ‘দ্য সিচুয়েশন অব হিউম্যান রাইটস অব দ্য রোহিঙ্গা মুসলিমস অ্যান্ড আদার মাইনরিটিজ ইন মিয়ানমার’ শিরোনামে মিয়ানমার সরকার কর্তৃক কদর্য মানবাধিকার লংঘনের তীব্র সমালোচনা প্রস্তাব গৃহীত হয়। বিস্ময়কর ব্যাপরটি হচ্ছে এই, ১৩২ ভোটের সমর্থনে প্রস্তাবটি অনুমোদিত হলেও চীন-রাশিয়াসহ ৯টি দেশ প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোটাধিকার প্রয়োগ করে। ভারত, জাপান, ভটান, শ্রীলঙ্কা, নেপালের মতো অত্যন্ত বন্ধুপ্রতিম দেশগুলো ভোট না দেওয়ার তালিকায় রয়েছে। এই দৃশ্যপট নতুন করে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে অতিশয় দুর্বল করে মিয়ানমার সরকারের ভূমিকাকেই অতিমাত্রায় সবল করার বিষয়টি সহজেই অনুমেয়।
উল্লেখিত পরিস্থিতিতে মালয়েশিয়ার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী সৈয়দ হামিদ আলবারের বক্তব্য অসীম গুরুত্ব বহন করে। তাঁর মতে রোহিঙ্গা সমস্যা শুধু মানবিক সমস্যা নয় বরং এটি বৈশ্বিক ও রাজনৈতিক সমস্যা। রোহিঙ্গা সঙ্কট কেন্দ্রিক অস্থিরতা ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হলে এর প্রভাব থেকে চীন- ভারত কেউ বাদ যাবে না। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে তাদের জন্য সেফ জোন প্রতিষ্ঠার জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রস্তাব আবারও অনিবার্যভাবে সমাধানের কেন্দ্রবিন্দু হওয়া উচিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা কানাডার পক্ষ থেকে যথাক্রমে মিয়ানমারে সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত না হওয়ার জন্য মিয়ানমারের উপর অব্যাহত চাপ প্রয়োগ ও রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সম্পদায়ের আরো জোরালো ভূমিকা রাখা উচিত ইত্যাদি চন্দ্রোদয় বক্তব্যের কার্যকারিতা অসার দীপনেই ধর্তব্য। চলতি বছরের শুরু থেকে নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের অন্তর্ভুক্তি এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন বিষয়ে ভারতের ভূমিকা আশাজাগানিয়া পরিগ্রহে নিরূপিত হয়েছে। দীর্ঘ তিন বছর কতিপয় স্থায়ী সদস্যের আপত্তির কারণে নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাব পাশ করানোর ব্যর্থতা এবার ভারতের অংশগ্রহণে সার্থকতায় উদ্ভাসিত হবে – এই দীপ্যমান প্রত্যাশায় বাংলাদেশের সকল নাগরিক প্রোৎসাহিত।
জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদন অনুসারে মিয়ানমারের অতি-জাতীয়তাবাদী বৌদ্ধদের ঘৃণা ও ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার আবরণে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী কর্তৃক বিচার বহির্ভূত হত্যা-অবৈধ গ্রেফতার-নির্যাতন-ধর্ষণ-অপব্যবহার ও জোরপূর্বক শ্রমে বাধ্যবাধকতা রোহিঙ্গাদের উপর এই নির্যাতন মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে। বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক প্রস্তাবিত ‘সেইফ জোন নির্মাণ এবং পূর্ণ মানবিক মর্যাদা-নিরাপত্তা-অধিকারের’ ভিত্তিতে তাদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন এই সমস্যার টেকসই এবং একমাত্র স্থায়ী সমাধান।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সমস্যা সমাধানে প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরিতে অশুভ শক্তির প্রভাব বহুলাংশেই আবিষ্কৃত ও প্রকৃষ্ট অনুভূত। বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে তাদের আত্তিকরণ ও অভিবাসনে উপযোগী পরিবেশ এবং ক্ষেত্র নির্মাণে অদৃশ্য রহস্যের মূলে লুকিয়ে থাকা উৎসসমূহের উপলব্ধি বিশ্ববাসীর কাছে অত্যন্ত সুস্পষ্ট। বাণিজ্য-উন্নয়ন-বন্ধুত্বের সম্পর্ককে উজ্জ্বলতর করার সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে রোহিঙ্গা সংকট উত্তরণে প্রতিবেশী ভ্রাতৃপ্রতিম দেশসমূহের ইতিবাচক দায়িত্বশীল ভূমিকা অগ্রগণ্য হওয়া উচিৎ। চীন-মিয়ানমার-ভারত-পাকিস্তান সমর্থনে ব্যক্তিম্বার্থে স্বকীয় জাতীয়সত্তাকে বিলীন করা কখনো সুস্থ চিন্তা-চেতনার পরিচায়ক হতে পারে না। মুক্তির মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন মাতৃভূমির দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে ধর্ম-বর্ণ-দলমত নির্বিশেষে মহান মুক্তিযুদ্ধের অবিনাশী ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক চেতনায় ঋদ্ধ হয়ে স্বাভাবিক এবং সাবলীল প্রক্রিয়ায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন একান্তই কাম্য। অতীতের মতো সকল সমস্যার সমাধানে অর্থবহ আলাপ আলোচনার পূর্ণতায় পরাজয় বা পরাভূত করার কুচক্রী মহলের সকল অপতৎপরতা নস্যাৎ করে বাংলাদেশের সরকার ও জনগণ বিজয়ী হবেই – দেশের আপামর জনগণের মতো এটি আমারও দৃঢ় বিশ্বাস।
লেখক: শিক্ষাবিদ, সমাজ-অপরাধবিজ্ঞানী,
সাবেক উপাচার্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজুম্আর খুতবা
পরবর্তী নিবন্ধতেল-ঘিয়ে ভাসছেন মিষ্টি