প্রথম ধাপে সারাদেশের ২৫টি পৌরসভায় ভোটগ্রহণের পর এবার দ্বিতীয় ধাপে ভোটগ্রহণ করা হবে ৬১টি পৌরসভায়। রাত পোহালেই শুরু হবে এই ভোটগ্রহণ। আগামীকাল শনিবার (১৬ জানুয়ারি) সারাদেশে ২৯টি পৌরসভায় ইভিএমে এবং ৩২টি পৌরসভায় ব্যালটের মাধ্যমে ভোট নেয়া হবে। এই ৬১টি পৌরসভার মধ্যে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ ও বান্দরবানের লামায় ব্যালটের মাধ্যমে এবং খাগড়াছড়ি পৌরসভায় ইভিএমে ভোটগ্রহণ করা হবে।
জানা যায়, সন্দ্বীপ পৌরসভার নয়টি সাধারণ ওয়ার্ড ও তিনটি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে মোট ভোটার রয়েছেন ৩৩ হাজার ৩২৬ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৬ হাজার ৩৬৭ জন এবং মহিলা ভোটার ১৬ হাজার ৬৫৯ জন। ভোটকেন্দ্র রয়েছে ১৭টি, যাতে ভোট কক্ষ ১০০টি। এখানে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একক মেয়র প্রার্থী। আর সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন ২৮ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী ১১ জন। তবে ৮ নম্বর ওয়ার্ডে অন্য কোনো প্রার্থী না থাকায় মো. সাকিল উদ্দিন (খোকন) বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।
নির্বাচনী সার্বিক পরিবেশ নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মো. আবুল বশার (জিএস বশার) বলেন, আমি পথসভা ও মাইকিং করতে পারিনি। বিভিন্ন জায়গায় বাধার সম্মুখীন হয়েছি। এসব বিষয়ে আমি প্রশাসনকে মৌখিক ও লিখিত আকারে জানিয়েছি। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মোক্তাদের মাওলা সেলিম বলেন, বিএনপির প্রার্থীর অভিযোগ অপরাজনীতির অংশ। তারা প্রচারণা না চালিয়ে ঘরে বসে আছেন নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য। তবে তাদের এই অপকৌশল পৌরবাসী সফল হতে দেবে না। এছাড়া নির্বাচিত হলে স্থানীয় সাংসদের সাথে সমন্বয় করে পৌরসভার সার্বিক উন্নয়ন করতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন মোক্তাদের মাওলা।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কাজী রবিউস সারোয়ার বলেন, এখনো পর্যন্ত নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠু ও সুন্দর রয়েছে। আশাকরি একটা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন উপহার দিতে পারব। নির্বাচনে দুইশ পুলিশ ও অর্ধশত আনসার সদস্যদের সাথে কোস্টগার্ডের সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে মাঠে থাকবেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। কোস্ট গার্ড কমান্ডার লেফটেন্যান্ট সাইফুল বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখতে এক প্লাটুন কোস্টগার্ড মোতায়েন করা হয়েছে।
আমাদের লামা প্রতিনিধি জানান, লামা পৌরসভায় এটি ৪র্থ নির্বাচন। ২৮.৪৯ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই পৌরসভায় মোট ভোটার সংখ্যা ১৩ হাজার ৩৮৯ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ৭ হাজার ৩ জন এবং মহিলা ভোটার ৬ হাজার ৩৮৬ জন। এবার মেয়র পদে ৩ জন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৯ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ৯টি কেন্দ্রের ৩৯টি কক্ষে ৯ জন প্রিজাইডিং, ৩৯ জন সহকারী প্রিজাইডিং এবং ৭৮ জন পোলিং অফিসার ভোটগ্রহণে দায়িত্ব পালন করবেন। লামা পৌরসভা নির্বাচনের সহকারি রিটার্নিং অফিসার আলমগীর হোসাইন জানান, ভোটগ্রহণ নির্বিঘ্ন করতে র্যাবের ৩টি স্ট্রাইকিং ফোর্স, দুই প্লাটুন বিজিবি, পুলিশের মোবাইল টিম, প্রতি কেন্দ্রে অফিসারসহ ৮ জন পুলিশ সদস্য এবং ৫ জন পুরুষ ও ৩ জন মহিলা আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া প্রতিটি কেন্দ্রে ১ জন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন।
নির্বাচন সম্পর্কে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, বর্তমান সরকার আমলে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপির আন্তরিক প্রচেষ্টায় পার্বত্যাঞ্চলে যে উন্নয়ন হয়েছে তারই ধারাবাহিকতায় গত ৫ বছরে লামা পৌরসভায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। যে সকল উন্নয়ন প্রকল্প বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়ন হলে লামা পৌরসভা একটি আধুনিক পৌরসভায় রূপান্তর হবে। তিনি অসামাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করে একটি বাসযোগ্য পৌরসভা উপহার দিতে তাকে আবারো বিজয়ী করার জন্য ভোটরদের প্রতি আহ্বান জানান। বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মো. শাহীন বলেন, নির্বাচিত হলে একটি মাদকমুক্ত সমাজ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করব। এছাড়া শিক্ষার উন্নয়নকে গুরুত্ব দিয়ে পৌরসভার সার্বিক উন্নয়নে কাজ করব। উল্লেখ্য, এই পৌরসভায় জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী এ.টি.এম শহীদুল ইসলাম লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এদিকে লামা পৌরসভা নির্বাচনের সহকারি রিটার্নিং অফিসার আলমগীর হোসাইন জানান, এখনো পর্যন্ত কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
আমাদের খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি জানান, খাগড়াছড়ি পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডের ১৮টি কেন্দ্রে ৩৭ হাজার ৮৭ জন ভোটার ভোট প্রদান করবেন। খাগড়াছড়ি জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা রাজু আহমেদ জানান, এখানে ১৯ জন প্রিজাইডিং, ১১৫ জন সহকারী প্রিজাইডিং এবং ২৪৫ জন পোলিং অফিসার দায়িত্ব পালন করবেন। নির্বাচনে ৪ মেয়র প্রার্থীসহ ৫৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনের বিষয়ে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী রফিকুল আলম বলেন, আমি গত ১০ বছর ধরে পৌরবাসীর সেবক হিসেবে ব্যাপক উন্নয়ন কাজ করেছি। বঙ্গবন্ধু আবাসন প্রকল্প, সড়ক প্রশস্তকরণ, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ পর্যটক বান্ধব শহর গড়ে তুলেছি। আবার বিজয়ী হলে মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়ন করে খাগড়াছড়িকে আধুনিক শহর হিসেবে গড়ে তুলব। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী নির্মলেন্দু চৌধুরী বলেন, আমি নির্বাচিত হলে পৌর এলাকায় শিশু পার্ক করব। এছাড়া ৩৫ দফা নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন করব। এজন্য তিনি নৌকা প্রতীকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানান। বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী ইব্রাহিম খলিল বলেন, নির্বাচিত হলে পৌরবাসীর উপর থেকে করের বোঝা কমাব। গ্রামীণ রাস্তা ঘাটের উন্নয়ন করব। শিশু পার্ক করব। পর্যটন কেন্দ্র সাজেককে আরো ঢেলে সাজাব।