নাসারন্ধ্র, মুখ গহ্বর এবং শ্বাস ও খাদ্যনালীর মিলনস্থলে অবস্থান করা করোনাভাইরাস ধ্বংস করতে সক্ষম একটি ‘সলিউশন’ তৈরির দাবি করেছে বাংলাদেশ রেফারেন্স ইনস্টিটিউট ফর কেমিকেল মেজারমেন্টস (বিআরআইসিএম)। রাষ্ট্রায়ত্ত এই প্রতিষ্ঠানটি বলছে, তাদের এই ওষুধ নাক ও মুখে স্প্রে হিসেবে ব্যবহার করতে হয়। এর নাম তারা দিয়েছে ‘বঙ্গোসেইফ ওরো নেইজল স্প্রে’।
গতকাল মঙ্গলবার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে প্রথমবারের মতো বিষয়টি সামনে আনে বিআরআইসিএম। বৈঠকে বিআরআইসিএমের পক্ষ থেকে বলা হয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০০ জন কোভিড-১৯ রোগীর ওপর এই স্প্রের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করে তা নিরাপদ ও কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। বঙ্গোসেইফ কোভিড-১৯ রোগীদের ভাইরাল লোড কমিয়ে মৃত্যুঝুঁকি হ্রাস করার পাশাপাশি কমিউনিটি ট্রান্সমিশন নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখতে পারে বলে বিআরআইসিএমের গবেষকদের ভাষ্য। খবর বিডিনিউজের।
সংসদীয় কমিটির সদস্য ডা. হাবিবে মিল্লাত বলেন, কমিটি আরও বড় পরিসরে এই স্প্রেটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করতে বলেছে। সেইসঙ্গে বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল (বিএমআরসি) এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে অনুমোদন নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।
এই স্প্রে কীভাবে কাজ করে জানতে চাইলে বিআরআইসিএমের মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ড. মালা খান বলেন, করোনাভাইরাস থেকে রক্ষার জন্য আমরা এখন যতকিছুই করছি, তার সবই প্রিভেন্টিভ। মাস্ক পরছি বা যাই করছি না কেন। আমরা এখন পর্যন্ত যা জানি তা হলো, এই ভাইরাসটা আক্রমণ করে মুখ, চোখ ও নাকের মাধ্যমে। সেখানে ভাইরাস কিছুকাল অবস্থান করে। আমরা যে সলিউশন তৈরি করেছি, সেটা যদি কেউ ৩-৪ ঘণ্টা পর পর স্প্রে করে তাহলে নাক, নাসিকারন্ধ্র, মুখ গহ্বর এবং শ্বাস ও খাদ্যনালীর মিলনস্থলে (ওরোফেরিংস) অবস্থান করা করোনাভাইরাস ধ্বংস হবে।
তিনি বলেন, এতে দুটো সুবিধা হবে। এক, কেউ যদি সংক্রমিত ব্যক্তির কাছাকাছি যান এবং সংক্রমণ ঘটে, তাহলে এই স্প্রে ভাইরাস ধ্বংস করবে। আক্রান্ত ব্যক্তি যদি ব্যবহার করেন, তার ভাইরাল লোড (ভাইরাসের পরিমাণ) কমে যাবে।
গত মে মাসে ঢাকা মেডিকেলে ২০০ কোভিড-১৯ রোগীর ওপর পরীক্ষামূলক প্রয়োগের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, সেখানে আমরা খুবই প্রমিজিং রেজাল্ট পেয়েছি। এখন আমরা বিএমআরসিতে আবেদন করব। এটাকে জাতীয় পর্যায়ে নেওয়ার জন্য যে প্রক্রিয়া আছে, সেটার জন্য কাজ করব।
এই সলিউশন তৈরিতে কী ধরনের রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে, তাতে খরচ কেমন হতে পারে বা কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে কিনা, এসব প্রশ্নের বিস্তারিত উত্তর বিআরআইসিএমের কাছ থেকে মেলেনি।
মালা খান জানান, তারা ইতোমধ্যে বঙ্গোসেইফ ওরো নেইজল স্প্রের পেটেন্টের জন্য আবেদন করেছেন। আন্তর্জাতিক পেটেন্টের জন্য সিঙ্গাপুরেও আবেদন করা হবে।
বিআরআইসিএমের এই উদ্ভাবনের বিষয়ে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সরকারের গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সদস্য ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, এ রকম স্প্রে নিয়ে কাজ হচ্ছে বলে শুনেছিলাম। তবে সেটা যে উদ্ভাবন হয়েছে এটা আপনার কাছ থেকে শুনলাম। যারা করেছে তাদের উচিত এর বিস্তারিত নিয়ে একটা রিপোর্ট করা। তাহলে বিশেষজ্ঞরা আরও বিস্তারিত মতামত দিতে পারবেন।
এর আগে কানাডীয় কোম্পানি স্যানোটাইজ একটি নাইট্রিক অঙাইড স্প্রে উদ্ভাবনের কথা জানিয়ে বলেছিল, তাদের ওই স্প্রে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধ করতে পারে। যুক্তরাজ্যে ওই স্প্রের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হয়েছে সংবাদমাধ্যমে খবর এসেছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ও ফরাসি বিজ্ঞানীদের একটি দল করোনার একটি টিকা নিয়ে কাজ করার কথা জানিয়েছিলেন, যেটা নাকে বা মুখে স্প্রে হিসেবে প্রয়োগ করা যাবে। চীনেও একই ধরনের টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের খবর সংবাদমাধ্যমে এসেছিল কয়েক মাস আগে।
তবে বিআরআইসিএমের মহাপরিচালক মালা খানের দাবি, তারাই প্রথম এ কাজে সফল হয়েছেন। সারা পৃথিবীতে আমরাই মানবদেহে এই সলিউশন পরীক্ষা করেছি। আমাদের পরে ফ্রান্স একটা করেছে, কিন্তু সেটার স্যাম্পল সাইজ মাত্র ৫ জন।
সংসদীয় কমিটির বৈঠকে স্প্রেটি সম্পর্কে প্রচার বাড়ানো এবং ব্যবহারের ক্ষেত্রে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হয়।