চট্টগ্রাম সার্টিফিকেট আদালত চলছে পুরোনো মামলায়

নতুন মামলা কম, বিকল্প উপায়ে নিষ্পত্তি হচ্ছে সরকারি পাওনা আদায়

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ৯ জানুয়ারি, ২০২১ at ৫:২৫ পূর্বাহ্ণ

সরকারি বিভিন্ন সংস্থার বকেয়া পাওনা আদায় করে দেয়া চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সার্টিফিকেট আদালত চলছে কয়েক বছরের পুরোনো মামলা দিয়ে। বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বকেয়া পাওনা আদায়ে সংশ্লিষ্ট আদালতে রিকুইজিশন কমে যাওয়ায় সেখানে নতুন কোনো মামলা নথিভুক্ত হচ্ছে না।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দপ্তরগুলো এখন বিকল্প উপায়ে পাওনা আদায়ের চেষ্টা করছে। বিশেষ করে বিভিন্ন পাওনাদারদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে বা অন্য কোনোভাবে এসব পাওনার বিষয়াদি নিষ্পত্তি হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের তথ্যে জানা গেছে, সরকারি পাওনা আদায় আইন অনুযায়ী ব্যাংকসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের বকেয়া দাবি আদায়ে রিকুইজিশন পাওয়ার পর জেনারেল সার্টিফিকেট আদালতে মামলার কার্যক্রম শুরু হয়। পিডিআর (পাবলিক ডিমান্ড রিকভারি) অ্যাক্টে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো দেনাদার ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এ মামলা করছেন। পরবর্তীতে সার্টিফিকেট আদালতে সরকারি বকেয়া পাওনা আদায়ের জন্য দেনাদারের স্থাবর/অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক, বিক্রয়, নিলাম বা দেনাদারকে সিভিল জেলে আটকে রেখে বকেয়া পাওনা আদায়ের ব্যবস্থা হয়ে থাকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত বছর জেলা সার্টিফিকেট আদালতে ১৭শ’ মামলার মধ্যে তিনশ’র অধিক মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। বর্তমানে যেসব মামলা রয়েছে সেগুলোর বেশিরভাগই কয়েক বছরের পুরোনো। রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন ব্যাংক, কর বিভাগ, চট্টগ্রাম ওয়াসা, কাস্টমস, বাংলাদেশ রেলওয়ে, গণপূর্ত, সড়ক ও জনপথসহ সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্ত্বশাসিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বকেয়া পাওনা আদায়ের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে এসব মামলা হয়েছিল।
সনাক টিআইবি’র চট্টগ্রামের সভাপতি অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী আজাদীকে বলেন, পূর্বে টিএন্ডটি, ওয়াসা, বিভিন্ন সরকারি ব্যাংকসহ অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে বকেয়া পাওনা আদায়ের জন্য সার্টিফিকেট মামলা হত। সরকারি ব্যাংক থেকে তেমন হচ্ছে না। আবার ব্যাংকগুলো বকেয়া পাওনা আদায়ের জন্য এনআই অ্যাক্টে নির্ধারিত আদালতে মামলা করছে। আগে ইনকাম ট্যাক্স আদায়ের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট মামলা দায়ের হত। এখন সেটাও কমে গেছে। ইনকাম ট্যাঙ আদায়ের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দেনাদারের সাথে আলোচনাসহ বিভিন্ন মাধ্যমে বিষয়টি নিজেদের মধ্যেই নিষ্পত্তি করছে। এভাবে এখন নানা কারণে সার্টিফিকেট মামলার সংখ্যা কমে গেছে বলে জানান অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী।
তবে সার্টিফিকেট আদালতে পূর্বে যেসব মামলা হয়েছিল সেসব মামলায় সাধারণ নাগরিকেরা হয়রানির শিকার হওয়ার অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, পাওনা আদায়ের ব্যাপারে নাগরিকদের প্রতি সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতার অভাব ছিল।
সার্টিফিকেট আদালতে বিভিন্ন মামলা নিষ্পত্তিকারী সদ্য বদলিকৃত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চাই থোয়াইহলা চৌধুরী গতকাল আজাদীকে বলেন, নতুন মামলা যে একেবারেই হচ্ছে না, তা নয়। পুরোনো মামলার পাশাপাশি কিছু নতুন মামলাও হয়েছে। তবে তা তুলনামূলক অনেক কম। গত বছর নতুন ২০টির মতো সার্টিফিকেট মামলা হয়েছিল বলে জানান প্রশাসনিক এ কর্মকর্তা। তবে এগুলো বেশিরভাগই ব্যাংকের পক্ষ থেকে করা হয়েছিল বলে জানান চাই থোয়াইহলা চৌধুরী। তিনি বলেন, কিছু কিছু পুরোনো মামলা নিষ্পত্তিতে অনেক সময় নিচ্ছে। বিভিন্ন সময় দেনাদাররা কিস্তির মাধ্যমে পাওনা পরিশোধের অনুরোধ করছেন। এতে বিভিন্নজনকে কিস্তিতে পাওনা পরিশোধ করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে। ফলে এসব মামলা নিষ্পত্তি হতে বেশি সময় লাগছে বলে জানান এ কর্মকর্তা। গত বুধবার জেলা প্রশাসনের জেনারেল সার্টিফিকেট শাখার কর্মচারীদের কাছ থেকে জানা গেছে, আদালতে নতুন কোনো সার্টিফিকেট মামলা আসছে না। বর্তমানে যেসব মামলা রয়েছে সেগুলো পুরোনো। বিভিন্ন ধার্য্য তারিখে এসব মামলার শুনানি হচ্ছে।
জানা গেছে, জেলা প্রশাসনের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সার্টিফিকেট মামলাগুলো নিষ্পত্তি করে থাকেন। পুরো মাস জুড়ে অধিকাংশ সময়ই এ আদালত অলস পড়ে থাকে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদেশে এক দিনে ১৬ মৃত্যু আট সপ্তাহে সবচেয়ে কম
পরবর্তী নিবন্ধলামায় নির্বাচনী ইস্যু ‘আধুনিক পৌর শহর’